বিশ্বব্যাপি করোনার ছোবলে ব্যবসা-বানিজ্যে ধস নেমেছে আরো আগেই। বাংলাদেশও এর প্রভাবের বাইরে নয়। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগি শনাক্ত হয়। তারপর সরকার পরিস্হিতি বিবেচনায় এনে গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। পরে ধীরে ধীরে সরকারি অফিস, পোশাক কারখানা, ব্যাংক এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে দেশের ব্যবসা-বানিজ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। লকডাউনে উৎপাদন বন্ধ থাকায় রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। তাছাড়া বিশ্বব্যাপি লকডাউনে প্রায় সব দেশই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ব্যতিত সকল আমদানি প্রায় বন্ধ করে দেয়। ফলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত পোশাক রাপ্তানিসহ সকল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপি লকডাউনের কারণে প্রবাসী আয়ে দেখা দিয়েছে নিম্নগতি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, মার্চে মোট রাপ্তানি আয় হয় ২৭৩ কোটি ডলার যা কিনা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮.২৯ শতাংশ কম। এবং এই মার্চে মোট রেমিট্যান্স আয় হয় ১২৮.৬৮ কোটি ডলার যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম। ফলে দেশের বেসরকারি ব্যাংকে ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। একদিকে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ে নিম্নগতি অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের আমদানি বৃদ্ধি ফলে দেশের ডলারের তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এই ডলার সংকটের কারণে গত ২ সপ্তাহের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ১.৫ টাকা। তাই আমদানি মূল্য পরিশোধে বাড়তি দামে ডালার কিনতে হচ্ছে ব্যবসায়িদের। তবে ডালারের সরবরাহ ঠিক রাখতে গত ১ মাসে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ২০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে প্রতি ডলারের অান্তঃ ব্যাংক রেট প্রায় ৮৪.৯৫ টাকা। তবে প্রতি ডলারের খুচরা রেট আরো বেশি প্রায় ৮৫-৮৬ টাকা। কিন্তু ব্যবসায়িরা বলছে তাদের আমদানি দায় পরিশোধে ডলার প্রতি খরচ করতে হচ্ছে প্রায় ৮৭ টাকা। ফলে ডলারের আন্তঃব্যাংক রেট এবং বাজার মূল্যে বড় পার্থক্য দেখা দিয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘এই সংকটময় সময়ে বেসরকারি ব্যাংক যদি আরো ডলার চায় তাহলে তাদেরকে ডলার দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন সমস্যা হবে না। কেননা বাংলাদেশ ব্যাংকে যথেষ্ট ক্যাশ ডলার আছে। ফলে তাদেরকে ডলার দিতে কোন সমস্যাই হবে না।’ এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে রপ্তানি কমলেও আমদানি না কমায় ডলারের উপর চাপ পড়ছে। তারা মনেকরেন বিশ্বব্যাপি লকডাউন শিথিল হলে ধীরে ধীরে রপ্তানি বাড়লে এই সংকট কেটে যাবে। তবে তারা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আশার আহবান জানান। ডলারের এই সংকট সামাল দিতে চাই সরকারি ও বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগ।
মোঃ মাহবুবুর রহমান হাবিব
অতিথি লেখক হিলশা নিউজ