শিমুল অধিকারী সুমনঃ অচেনা প্রাকৃতিক সংক্রমণে চাঁদপুরের হাইমচরে মাঠের পর মাঠে জ্বলে যাচ্ছে কৃষকের চাষকৃত মরিচ গাছ। একই সাথে মরিচ গাছ জ্বলার পূর্বে গাছের পাতা কুচকিয়ে যাচ্ছে। যার কারনে ধারদেনা করে মরিচ চাষে নেমে চরম হতাশা ও উদ্বেগের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন চাষীরা।
২ এপ্রিল মঙ্গলবার দিনব্যাপী হাইমচরের আলগী দূর্গাপুর, চরভৈরবী, হাইমচর ও নীল কমলের চর এলাকাগুলোতে মরিচ গাছ জ্বলে যাওয়া ও পাতা কুচকে যেতে দেখা যায়।
সরজমিনে জানা যায়, একেই মরিচ আবাদ করতে গিয়ে জমি প্রস্তুত, বীজ, চারা ও পরিচর্যায় সার প্রয়োগসহ অন্যান্যভাবে লাখ লাখ টাকা খরছ করে অনেকটা হাত খালি করে বসে আছেন চাষীরা। তার ওপর কেউ কেউ আবার খরছের যোগান হিসেবে ব্যাংক ও এনজিও থেকে তুলেছেন ঋণও। সেই দুঃশ্চিন্তার অবসান ঘটানো ক্ষেতের মরিচের ফলন ঘরে তুলার পূর্বেই, এই অচেনা সংক্রমণে কৃষকরা এখন চরম লোকসানের আশঙ্কায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন।
চরভাঙ্গা গ্রমের মরিচ চাষী মোঃ জয়নাল বলেন, এইভাবে মরিচ গাছ জ্বলে যাওয়া এই প্রথম দেখলাম। এটা কি ধরনের বালাই বুঝতে পারছি না।আমরা এর প্রতিকার চাই।
একই গ্রামের মরিচ চাষী জয়ন্ত সরকার বলেন,প্রথমে মরিচ গাছগুলো ভালোই তরতাজা ছিলো। তখন আমি মরিচ গাছের শক্তি বৃদ্ধির জন্য ইউরিয়া ও ড্যাব সার ব্যবহার করেছি। আর এর পরই আমার সব মরিচ গাছ জ্বলে যাচ্ছে এবং পাতা কুচকিয়ে যাচ্ছে।
চরভৈরবী ইউনিয়নের মরিচ চাষী মোঃ জাকির হোসেন হাওলাদার বলেন, আবহাওয়াজনিত কারনে মরিচ গাছ জ্বলে যাচ্ছে বলে ধারণা করছি। তবে ঠিক কিভাবে প্রতিকার পাবো বুজতে পারছি না।
নারী মরিচ চাষী পল্লী রানী সরকার বলেন, মরিচ গাছ জ্বলে যাওয়ায় আমাদের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে কৃষি অফিস যদি আমাদের প্রণোদনার কোন সুযোগ করে দিতো। বা সার কীটনাশক দিতো তাহলে আমরা ক্ষতি থেকে কিছুটা অবসান পেতে পারতাম। কেননা আমরা যে ব্যাংক থেকে ঋণ তুলে মরিচ চাষে নেমেছে এখন এই লোকসানের শঙ্কায় আমাদের কান্না ছাড়া আর পথ নেই।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরে চাঁদপুরের হাইমচরে ৪৯১ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। তবে বরাদ্দ সংকটে কোন মরিচ চাষীকেই কোনরূপ প্রণোদনা দেয়নি কৃষি বিভাগ। আর মরিচ গাছ জ্বলে যাওয়া ও পাতা কুচকে যাওয়ার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখাও তাৎক্ষণিক দিতে পারেনি কৃষি বিভাগ। তবে এই সংক্রমণটি আবহাওয়াজনিত কারনে হয়ে ছত্রাকের প্রভাবে পাতা জ্বলে যেতে পারে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ। আর মাকড় পোকার আক্রমণে পাতাগুলো কোঁকড়ানো বা কুচকে যেতে পারে বলে দাবী করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টগণ।
এসব তথ্য জানিয়ে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাকিল খন্দকার বলেন, মরিচ গাছ জ্বলে যাওয়া ও পাতা কুচকে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা কৃষকদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সমাধানে কাজ করছি। আমরা প্রতি মুহূর্তে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কৃষকের কাছে পাঠাচ্ছি। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কোন কর্মকর্তাকে যদি কৃষকরা তাদের সমস্যায় ডেকে কাছে না পায় তাহলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিবো। এছাড়াও যেকোন মরিচ চাষাবাদে সেবা সংক্রান্ত পরামর্শ পেতে সকল চাষীদের উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে আমি আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।