শিমুল অধিকারী সুমনঃ কাগজে কলমে চাঁদপুরে ইলিশ বেড়েছে তবে বাস্তবে নদীতে নৌকা নিয়ে নেমে জাল বেয়ে তেলের টাকাও উঠছে না জেলেদের। তবে বড় ইলিশ না পেলেও পদ্মা-মেঘনা থেকে চিংড়ি, চেউয়া, ছোট ছোট পাঙ্গাস ও সামান্য পরিমাণে জাটকা পাওয়া যাচ্ছে।
১ মে বুধবার দিনব্যাপী হাইমচরের চরভৈরবী মাছঘাট ও আমতলী এলাকায় গেলে জেলেদের মাছ ধরার এই দৃশ্য দেখা যায়।
চরভৈরবী মাছঘাটের পাইকার দাদন বেপারী ও সুমন জানান, আমরা ইলিশ কিনতে আসলেও জেলেরা কোন ইলিশ আনতে পারছে না। এতে করে আমরা দেশীয় প্রজাতির মাছ কিনতে বাধ্য হচ্ছি। তবে আগের মতো নদীতে আর মাছ পাওয়া যায়না।
চরভৈরবীর জেলে সুমন, কাদির জানান, বার বার শুনি অভিযানের পর ইলিশ নাকি কাগজে কলমে বাড়ছে। তবে আমরা নদীতে নেমে চিত্র দেখি উল্টো। সারাদিন জাল টেনে নৌকার তেলের টাকাও তুলতে পারছি না। তবে চেউয়া, ছোট ছোট পাঙ্গাসের পোনা ও চিংড়ির পোনা পাওয়ায় নাস্তার টাকা উঠছে।
চরভৈরবীর পুরানতন আড়তদার আবু তাহের, বাদল বকাউল বলেন, এই মাছ ঘাটে ২৩ জন আড়তদার মাছ নিলামের ডাক উঠায়। শ্রমিক কর্মচারী মিলিয়ে শত লোকের কর্মসংস্থান এখানে।কিন্তু এই দুমাস বসে থাকার পর কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে আসলেও ইলিশ বেচাকেনার হাঁকডাক ঘাটে নেই।
চরভৈরবী মাছঘাটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাওলাদার বলেন, এখানে জেলেরা জাটকা নিয়ে আসলে আমরা তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতেও পারিনা। তবুও চেষ্টা করি জাটকা যাতে ঘাটে না আনে।
হাইমচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও চরভৈরবী মাছঘাটের আহ্বায়ক হুমায়ন প্রধানীয়া বলেন, এই ঘাটটির নীচ পাঁকা করে প্রাচীনতম এই মৎস্য আড়তটির পরিবেশ সুন্দর করেছি। এখানে দিনে এক দু’শ পাইকার থাকা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে নিলামে সাধারণ ক্রেতারাও অংশ নিচ্ছে। অভিযান সফল হলেও বড় ইলিশ না পাওয়ায় আমরা হতাশা প্রকাশ করছি।
চাঁদপুর জেলা মৎস্যলীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক দেওয়ান বলেন, বছর বছর কাগজে কলমে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি দেখালেও প্রকৃত পক্ষে চাঁদপুরের ইলিশ উৎপাদন হুমকিতে। যার কারনে দুই মাস নিষেধাজ্ঞার পরও কাঙ্খিত ইলিশ নদীতে মিলছে না। যে কয়টা পাওয়া যায় তা চাহিদা পূরণে কোন ভূমিকা রাখতে না পারায় দামও হাতের নাগালের বাইরে। যারা জাটকা ধরা ও বিক্রিতে জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় চাঁদপুর অভয়াশ্রম এলাকায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাসের অভিযান কঠোরভাবে পালিত হয়েছে। জেলেদের নদীতে নামতে দেওয়া হয়নি। ফলে জাটকা চাঁদপুর অতিক্রম করে আবার সাগরে যেতে পেরেছে। সম্মিলিতভাবে অভিযান পরিচালনা করায় আশা করছি এবার লক্ষ্যমাত্রার ৬ লাখ টন ইলিশই উৎপাদন হবে। মধ্য রাত থেকে জেলেরা নদীতে নামতে শুরু করেছে এবং হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কেননা বড় ইলিশ পেতে আরো কিছুটা সময় লাগতে পারে।