অমরেশ দত্ত জয়ঃ কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে চাঁদপুরের গবাদি পশু মোটাতাজা করা খামারিদের আতঙ্ক লাম্পি স্কীন ও ক্ষুরা রোগ। ভীনদেশি গরুর চেয়ে দেশী গরুর চাহিদা থাকলেও এই ২টি রোগের কারনে অনেক গবাদি পশুই অবিক্রিত রাখতে হওয়ার আশঙ্কা করছেন খামারিরা। অপরদিকে এই ২ রোগের ভ্যাকসিন সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। যদিও প্রশাসন বলছে, এবার প্রতিটি হাটেই মেডিকেল টিম বিশেষ দায়িত্বে থাকবে বলে খামারিদের আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারন নেই।
এক তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছর চাঁদপুরে কোরবানীযোগ্য গবাদিপশুর চাহিদা ৭০ হাজার ২শ’ ৩০। যার প্রেক্ষিতে গবাদিপশু প্রস্তুত হয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার ৪শ’ ২টি। অর্থাৎ ৩৪ হাজার ৮শ’ ২৮টি গবাদিপশুই ঘাটতি হিসেবে পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে। এরমধ্যে যদি প্রাপ্য গবাদিপশুতে লাম্পি স্কীন রোগ ও ক্ষুরা রোগ হানা দেয়। তাহলে খামারিসহ সকলকেই এক প্রকার হতাশায় পড়তে হতে পারে।
জানা যায়, বড় গরুর মুখে ও পায়ে ক্ষুরা রোগ হয়। আর বাছুরের হার্ডে ক্ষুরা রোগ হয়। অর্থাৎ ২ পা বিশিষ্ট যেকোন গবাদিপশুরই ক্ষুরা রোগ হয়। অপর দিকে লাম্পি স্কীন রোগটি গবাদি পশুর জন্য একটি মারাত্মক রোগ।
এর প্রেক্ষিতে জেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে এই দপ্তরটি এবার কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিষয়টি জানিয়ে জেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের উপসহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা(প্রাণী ও পুষ্টি) মোঃ মোবারক হোসেন বলেন, আমাদের জেলায় এখন পর্যন্ত চলতি বছরে শুধুমাত্র ক্ষুরা রোগের জন্যই ফুট এন্ড মাউথ ডিজিজ (এমএমডি) ভ্যাকসিন দিয়েছি ৩৪ হাজার ৫শ’ ৬০টি।আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে এই ভ্যাকসিন সংকট রয়েছে। তাই আমরা আরও ২ হাজার ৮শ’ ১০টি ভ্যাকসিনের চাহিদা পাঠিয়েছি। এছাড়াও ছাগ বসন্ত রোগ নিমূলে আরও ৪৫ হাজার ভ্যাকসিনের চাহিদা পাঠিয়েছি। সবমিলিয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গবাদিপশুর জন্য ২ লক্ষ ৯৫ হাজার ভ্যাকসিনের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
এক তথ্য মতে, গেলো বছর জেলায় ১শ’ ৩১টি কোরবানীর হাট বসেছিলো। যেখানে ৫৫টি মেডিকেল টিম ক্রেতা ও খামারিদের অনুরোধে গবাদীপশুকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শসহ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে। তবে এবার জেলায় ২ হাজার ৭শ’ ৬০ জন খামারির অনুরোধে অনেকটা আগে ভাগেই প্রাণী সম্পদ কার্যালয় থেকে মেডিকেল টিম গঠনের কাজ শুরু করেছে। যারা এখন থেকেই খামারগুলোতে গিয়ে গিয়ে গবাদিপশু পরীক্ষা নিরীক্ষা ও খামারিদের গবাদিপশু মোটাতাজা করতে নানাবিধ পরামর্শ দিচ্ছে।
চাঁদপুর সদরের উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মকবুল হোসেন বলেন, গেলো ৪ মাসে চাঁদপুরে ক্ষুরা রোগ ও লাম্পী স্কীন রোগ বেড়েছে। বিশেষ করে গরুর লাম্পী স্কীন রোগের ভ্যাকসিন সংকট থাকায় আমরা ছাগ বসন্ত রোগের ভ্যাকসিন দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা এখন খামারিদের খামার পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে পরামর্শ দিচ্ছি। সেই সাথে প্রতি ৪ মাস অন্তর অন্তর ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে খামারিদের সতর্ক করছি।
চাঁদপুর সদরের শাহমাহমুদপুরের ৩নং ওয়ার্ডের কেতুয়া গ্রামের আক্কাস খান বলেন, আমার গরুতে ছোট ছোট কি একটা উঠেছে। ধারণা করছি এটি লাম্পী স্কীন রোগ। এখন চিকিৎসকরা বলছে তাদের কাছে এই রোগের ভ্যাকসিন শেষ।
বালিয়ার খামারি আলাউদ্দিন কাজী বলেন, আমি এবার কোরবানীতে ১৫টি গরুকে ৩০ লাখ টাকাতে বিক্রির টার্গেট নিয়েছি। রোগ সংক্রান্ত কোন ভোগান্তিতে না পড়তে সার্বক্ষণিক প্রাণী চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। ভীনদেশি গরু কম ঢুকলে আশা করছি আমাদের অর্গানিক খাবারে লালিত পালিত দেশী গরুর দাম এবার ভালো পাবো।
পুনারবাজারের খামারি হাসিবুল হাসান মুন্না বলেন, লাম্পি স্কীন ও ক্ষুরা রোগ নিয়ে কিছুটা আতঙ্কে থাকলেও আশা করছি কিছুই হবেনা। তবে বাজারে যাতে জাল টাকা নিয়ে কেউ গবাদী পশু কিনতে না আসে সেদিকে প্রশাসনকে খেয়াল রাখার অনুরোধ।
চাঁদপুর জেলা প্রাণী সম্পদ বিষয়ক কর্মকর্তা ডা. মোঃ বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, এবার দেশীয় গরু চাহিদা অনুযায়ী জেলায় ঘাটতি থাকায় আমরা খামারগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রাখছি। যাতে করে লাম্পি স্কীন ও ক্ষুরা রোগসহ কোন রোগেই গবাদি পশুর ক্ষতি করে খামারিদের বিপদে ফেলতে না পারে। তবে দুঃখের কথা হচ্ছে ঈদের আগে আমরা ভ্যাকসিন পাচ্ছিনা। তবে কোরবানীর হাটে আমাদের পর্যাপ্ত মেডিকেল টিম তৎপর থাকবে। তাই আতঙ্কিত না হয়ে নির্বিগ্নে কোরবানীর হাটে গবাদিপশু কেনাবেচা করা যাবে বলে আমি আশাবাদী।
এদিকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক চাঁদপুর শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোঃ আরশাদুজ্জামান খান বলেন, কোরবানীর ঈদকে কেন্দ্র করে গবাদিপশুর হাটবাজারগুলোতে জাল টাকা শনাক্তকরণে মাঠে থাকবে আমাদের ব্যাংক কর্মকর্তাদের সমন্বিত টিম। যারা পুরো জেলার গরু ছাগলের হাটগুলোতে নিরাপদ কেনাবেচা উপহার দিতে একযোগে কাজ করবে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, নির্বিগ্নে গবাদিপশু কেনাবেচায় অনুমোদিত হাটগুলোতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের নিয়োজিত রাখা হবে। সেই সাথে কেউ আইন অমান্য করে গবাদি পশুর হাট যেখানে সেখানে বসাতে চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভ্যাকসিন সংকটের বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে আমরা আশা রাখছি কোরবানীর ঈদের দিন পশু কোরবানী শেষে গবাদিপশুর বর্জ্য অপসারণে সবাই সচেতন থাকবেন।