জয় চন্দ্র নাগঃ চাঁদপুরের শীতে মৌসমে পর্যটনখাতের আকর্ষণে অনন্য নাম এখন মেঘনার বুকে জেগে উঠা বালুর চর ‘মিনি কক্সবাজার’। চিক চিক বালি ও নদীর ঢেউয়ে পা ভিজিয়ে হাঁটা কিংবা একটু খুনসুটি করতে প্রতিনিয়ত সেখানে হচ্ছে নারী পুরুষের উপচে পড়া ভীড়। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জেলা ছাড়াও দূর দূরান্তের মানুষও এখানে সময় কাটাতে ছুটে আসছেন।
৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকালে মিনি কক্সবাজারে গেলে মানুষের এই মিলনমেলার চিত্র উঠে আসে।
ট্রলার চালকরা জানান, চাঁদপুরের ত্রীমোহনার বড়ষ্টেশন হতে নির্ধারিত সময়ের জন্য ৪শ’ টাকা হতে শুরু করে ১ হাজার টাকা দিয়ে ট্রলার ভাড়া নিয়ে যেকেউ ঘুরতে যেতে পারেন মিনি কক্সবাজারে। যেখানে সবুজ শ্যামল চোখ জুড়ানো প্রকৃতির আবরণকে সাজিয়ে তুলেছে এখানকার ট্রলার চালকরাই। শৃঙ্খলা রক্ষায়ও তারা নিজেরাই যাত্রী বা পর্যটকদের আনা নেয়ার জন্য গড়ে তুলেছেন ৮২টি স্টিলবডি ট্রলার নিয়ে সমিতি।
চাঁদপুর বড়ষ্টেশনের মোহনাঘাট স্টিলবডি ট্রলার সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমজাদ স্বপন বলেন,এই চরগুলো শীতের সময় জেগে উঠে। তাই পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে আমরা সমিতির উদ্যোগেই ওখানে বসার ব্যবস্থা, টয়লেট, ছাউনি, নামাজের স্থানসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেই। যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পর্যটন এলাকার সুনাম ধরে রাখতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকি।

ঘুরতে আসা চন্দন দে, সবুজ ঢালীসহ অন্যরা বলেন, সকাল থেকেই কেউ শিশুসহ পরিবার পরিজন নিয়ে, আবার কেউ প্রিয়জনের সাথে ঘুরে বেড়াতে ছুটে যাচ্ছেন মিনিকক্সবাজারে। কেউবা আবার সংগঠনের পিকনিক স্পট হিসেবেও মিনি কক্সবাজারকে বেছে নিয়ে দলবেঁধে ছুটছেন এই স্থানটিতে। সেলফি বাজি, খেলাধূলা, দৌড়ঝাপ, গোসল সহ বিনোদনের সব আয়োজনেরই যেনো সুযোগ রয়েছে এই পর্যটনঘেরা মিনিকক্সবাজারটিতে। এটি জেলার সুন্দর্যবর্ধণের অংশ হয়ে অবতীর্ণ হয়েছে।
তবে বিজয়ী নারী উন্নয়ন সংস্থার কর্ণধার তানিয়া ইশতিয়াক খান বলেন, মিনি কক্সবাজারে প্রাকৃতিক সুন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টরা শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষায় আরও মনোযোগী হতে হবে। এরমধ্যে নারীদের পোশাক পরিবর্তনের আলাদা একাধিক কক্ষ, টয়লেট, ব্রেষ্ট ফ্রিডিং কক্ষ করা জরুরী। তাহলে এখানে ঘুরতে আসা নারীরা আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।

এদিকে ট্রলারচালকসহ মেঘনার তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা চরে পর্যটকদের নিরাপত্তাজনিত সেবায় যৌথভাবে কাজ করার তৎপরতার কথা জানিয়েছে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মোঃ বাহার মিয়া এবং নৌ থানার ওসি এ. কে. এম. এস. ইকবাল। তারা বলেন, ট্রলারগুলো যাতে দিনের আলোতে সর্বোচ্চ বিকাল ৫টার মধ্যে নিরাপদে এপাড়ে পর্যটক পাড়াপাড়ে অভ্যস্ত হয় সেজন্য দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সারঞ্জামাদি পরিধান ছাড়া ট্রলারে পর্যটক আনা নেওয়া না করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও জরুরী প্রয়োজনে দ্রুত আমাদেরকে খবর দিতেও তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মিনি কক্সবাজারে নিরাপদ ভ্রমণের স্বার্থে ইজারাদার নিয়োগ ও পন্টুন ব্যবস্থাসহ নানা পদক্ষেপের কথা জানালেন বিআইডব্লিউটিএ এর চাঁদপুরের উপ-পরিচালক মো. বছির আলী খান।

তিনি বলেন, মানুষজন মেঘনার তীরে জেগে উঠা চরগুলো প্রতিনিয়ত সময় কাটাতে যাচ্ছে। তাই তাদের বিনোদন সেবাকে গুরুত্ব দিয়ে সেখানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তাজনিত সকল বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে রাজস্ব আদায়ের জন্য ইজারাদার নিয়োগ দিয়েছি। একটি পন্টুনও স্থাপন করেছি। আশা করছি সবাই সুন্দরভাবে মিনিকক্সবাজারে আসা যাওয়া করতে পারবে।
যদিও পদ্মা নদী পারি দিয়ে মেঘনার তীরে গড়ে উঠা মিনি কক্সবাজার নামক চরটি ছাড়াও রাজরাজেশ্বর চর, বাঁশগাড়ি চর, ফেরীঘাট চর ও মাষ্টর ঘাট চরেও ভ্রমণ পিপাসু মানুষরা সময়কাটাতে প্রতিনিয়তই ঘুরতে যাচ্ছে।