জয় চন্দ্র নাগ: অনুমতি না নিয়েই এক চিকিৎসক চাঁদপুরে এক বৃদ্ধা নারীর চোখের নেত্রনালীর অপারেশন করে ফেলায় চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন ছানি অপারেশন করতে যাওয়া রোগীসহ তার নিকটস্থ স্বজনরা। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ চোখ নিয়ে চিকিৎসকের এমন কান্ডে শেষমেশ বিষয়টি নিয়ে থানার দারস্থ হলেন রোগীর স্বজনরা। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগীর বা তার স্বজনদের অনুমতি না নেওয়া ছিলো অনাকাঙ্ক্ষিত এবং ভবিষ্যতে এমন ভুল আর হবেনা।
২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার ভর্তিকৃত হাসপাতালটির রোগীকে রিলিজ দিয়ে দিলে হট্টগোলের সৃষ্টি হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
জানা যায়, প্রবাস ফেরত মিজানুর রহমান লক্ষীপুর জেলা হতে মায়ের ভালো চক্ষু চিকিৎসা পাওয়ার আশায় তফুরা বেগম নামে ৬৮ বয়সী বৃদ্ধা মা কে নিয়ে ছুটে আসেন চাঁদপুরে। এরপর পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ছানি অপারেশনের আশায় মা কে ভর্তি করান মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে। আর এতেই রোগীকে নিয়ে তারা পড়ে যান যত বিড়ম্বনায়।
ভুক্তভোগী তফুরা বেগম বলেন, আমার চোখে ছানি সমস্যা। তাই চিকিৎসক বলে ভর্তি হয়ে অপারেশন লাগবে। পরে আমি ভর্তি হলে আমাকে ছানি অপারেশন না করে চিকিৎসক করে ফেলেন নেত্রনালী অপারেশন। এমনকি যে চিকিৎসক আমার অপারেশন করার কথা তার স্থানে অন্য একজন জুনিয়র চিকিৎসক নেত্রনালীর অপারেশনটি করে ফেলে। এতেই আমি এখন চোখ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছি।
ভুক্তভোগীর ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের একই এলাকার তফুরা বেগম নামে আরেক রোগীর চোখের প্রয়োজন ছিলো নেত্রনালী অপারেশনের। তিনি এখানে সে চিকিৎসা করার কথা ছিলো। এখন তার স্থানে আমার মায়ের নামে নাম মিলে যাওয়ায় ভুল বশত তার ছানি অপারেশনের স্থানে অহেতুক নেত্রনালীর অপারেশন করা হয়েছে বলে আমরা মনে করছি।
মিজানুর রহমান বলেন, আমার মায়ের এর আগে যত পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে কোথাও চোখে নেত্র নালীর অপারেশন করা লাগবে তা উল্লেখ করেনি চিকিৎসকরা। এমনকি নেত্রনালীর জন্য কোন ফি’ও নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুধুমাত্র ছানি অপারেশনের জন্যই নেয়া হয় ফি। পুরো বিষয়টি নিয়েই চরম বিড়ম্বনায় আমরা। তাই এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। এই ভুলের জন্য চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিকেই আমরা দুষছি এবং তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের বিচার পেতে লিখিত অভিযোগ নিয়ে পুলিশের দারস্থ হয়েছি।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিষদ জানতে মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসক ফারহান কে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে কল দিলেও তা রিসিভ হয়নি।
যদিও চিকিৎসকের পক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলেন চাঁদপুর মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের কো-অর্ডিনেটর শামীম খান। তিনি বলেন, রোগীর বা তার পরিবারের অনুমতি নিয়ে অপারেশন না করা ভুল ছিলো। তবে ছানি অপারেশনের স্থলে নেত্রনালীর অপারেশনের প্রয়োজন ছিলো তাই সেটি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে চিকিৎসক পরিবর্তন স্বাভাবিক। কেননা নেত্রনালী এবং ছানি অপারেশন দু’টো দু জিনিস তাই পৃথক চিকিৎসক এটা করেছেন। তবে রোগীকে সঠিক সময়ে রোগীর ঔষুধ সরবরাহ এবং তাদের সাথে স্টাফদের দুর্ব্যবহার হয়েছিলো কিনা তাও আমি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিচ্ছি। এক সপ্তাহ পরে আসলে তার ছানি অপারেশন করে দেয়া হবে এবং এক্ষেত্রে তাদের আর কোন খরছ বহন করতে হবেনা। আমরা রোগীর নামের অমিলের অভিযোগটিও খতিয়ে দেখবো।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মোঃ বাহার মিয়া বলেন, ভুক্তভোগী রোগীকে সবরকমের আইনী সহায়তা দিতে কাজ করছে পুলিশ। আমরা এটির লিখিত অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তদন্ত কাজে নেমে পড়েছি।
এদিকে চক্ষু নিয়ে চিকিৎসা সেবায় রোগীর প্রতি আরও দায়িত্বশীল ও পেশাদার আচরণ করবে মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের লোকজন এমনটাই প্রত্যাশা সেবা প্রত্যাশীদের। কেননা হাসপাতালটিতে নির্ধারিত সময়ে চাঁদপুর ছাড়াও আশ পাশের জেলা থেকেও রোগীরা অনেক আশা নিয়ে চক্ষু চিকিৎসা নিতে আসেন।