অমরেশ দত্ত জয়ঃ ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এলেও এখনো জুলাই-আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে দায়ের হওয়া মামলাগুলোতে আসামী ধরপাকড়ে ধীরগতির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যদিও পুলিশ বলছে, নিয়মিতই অভিযান করে আসামী আটক অব্যাহত রয়েছে।
২৯ জানুয়ারি বুধবার মামলাগুলোর চলমান অগ্রগতির অবস্থা খোঁজ-খবর নিলে এসব তথ্য এ প্রতিবেদকের সামনে উঠে আসে। এর মধ্যে হাজীগঞ্জে হত্যা মামলা ২টি, হাইমচরে হত্যাচেষ্টার মামলা ১টি এবং এ আন্দোলনসংশ্লিষ্ট সদর থানাসহ অন্যান্য থানায় আরও অভিযোগে ৭টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় আসামী অধিকাংশই আওয়ামীলীগের সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি, সেলিম মাহমুদ এমপিসহ দলীয় শীর্ষ পর্যায় থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
চাঁদপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদ সাম্প্রতি বলেন, জুলাই আগষ্টের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চাঁদপুর সদর মডেল থানায় ৫টি, হাজিগঞ্জে ৩টি, শাহারাস্তি থানায় ১টি এবং হাইমচর থানায় ১টি মামলাসহ মোট মামলা ১০টি মামলায় এজাহার নামীয় আসামি ১ হাজার ৩৯৩জনসহ অজ্ঞাতনামা ২ হাজার ১৪০ থেকে ২ হাজার ৮০৫জন। যাদের অনেককেই আটক করা হয়েছে এবং বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে।
এরমধ্যে, চাঁদপুর সদর মডেল থানার মামলাগুলো হলো: ২০২৪ সালের ১৫ আগষ্ট আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার নাশকতার অভিযোগে দীপু মনিসহ ৫১০ জনের নাম উল্লেখসহ ১ হাজার থেকে ১২০০ জনকে অজ্ঞাত করে সদর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলা নং-১১।সে মামলায় এখন পর্যন্ত ৪৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
১৭ আগষ্ট মোঃ আবুল মাষ্টার চান্দ্রা বাজারে নাশকতার অভিযোগে ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ ২০-৩০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে সদর থানায় মামলা করেন। মামলা নং-১৩। এতে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ৭ জন।
২০ আগষ্ট নুরুল ইসলাম খান শহরের ফয়সাল শপিং কমপ্লেক্স এলাকায় নাশকতার ঘটনায় দীপু মনি, সেলিম মাহমুদসহ ২২৪ জনের নাম উল্লেখসহ ৩শ’-৪শ’ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে সদর থানায় মামলা করেন। মামলা নং-১৯। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
২৭ আগষ্ট মোক্তার আহমেদ পাটোয়ারী বাদী হয়ে ৩৫০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০০-২৫০ জনকে দেখিয়ে সদর মডেল থানায় মারামারির অভিযোগে মামলা করেন। মামলা নং-২৫। এতে এখন পর্যন্ত ২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
১৮ অক্টোবর আলামিন হোসেন বাদী হয়ে ৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫০ জনকে দেখিয়ে সদর থানায় মারামারির মামলা করেন। এতে এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে হাজীগঞ্জের মামলাগুলো হচ্ছে- ২৮ আগষ্ট আহম্মেদ কবির হিমেল হাজীগঞ্জ থানায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় এখন পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়া হাজীগঞ্জের বিশ্বরোডে কাজিরগাঁও কাভার পিকাবে হেলপার কে পুড়িয়ে হত্যা করার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন এবং হাজীগঞ্জে শো-রুম ও গোডাউন থেকে ইলেকট্রনিক্স মালামাল ও টাকা লুটপাট এবং ভাঙচুরের ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানায় ১টি মামলা দায়ের করা হয়। এতে মিজানুর রহমান সেলিম বাদী হয়ে মামলাটি করেন এবং এতে গ্রেফতার হয়েছে ৭ জন।
১৭ আগস্ট আহছান হাবিব বাদী হয়ে হাইমচর থানায় ৪৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০০-২০০ জনকে আসামী করে হত্যা চেষ্টা মামলাটি করেন। এতে এখন পর্যন্ত ২২ জন গ্রেফতার হয়েছেন।
এছাড়াও শাহরাস্তির দোয়াভাঙ্গা সহিংসতার ঘটনায় জুলাইয়ে একটি মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত ৬০০ জনকে আসামী করা হয়েছে। তাতে গ্রেফতার হয়েছে ৭ জন।
স্ব স্ব থানার ওসিরা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন তবু ভুলবশত কিংবা হয়রানিমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে এমন ব্যক্তিদের বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। মামলার কারণে নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি বা পরিবার যাতে দুর্ভোগে না পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার আব্দুর রকিব। তিনি বলেন, আমরা জুলাই-আগষ্টের মামলাগুলোর আসামীদের ধরপাকড়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। তবে মামলায় আসামি করার হুমকি দিয়ে বা আসামির তালিকা থেকে নাম কাটার কথা বলে কোনো ব্যক্তিবিশেষ কিংবা সংগঠনের ব্যানারে কারও কাছ থেকে চাঁদাবাজি কিংবা আর্থিক লেনদেনের ঘটনা ও অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত এ ধরণের কোন অভিযোগ আসেনি।