অমরেশ দত্ত জয়ঃ চাঁদপুর সদরের শাহতলীতে পরিত্যাক্ত ইটভাটায় দেশী বিদেশী উচ্চমূল্যের ৩৭ প্রজাতির ফলের পরীক্ষামূলক বাগান করে সারা ফেলেছেন উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিন। প্রায় ৩ একর জমিতে মাত্র আড়াই বছরে তিনি এই মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। একই সাথে তিনি এই স্থানে পরিবেশ বান্ধন কংক্রিট ব্লক ও রিভার ভিউ ক্যাফে নামে একটি রেষ্টুরেন্টও চালু করেছেন। এতে করে ডাকাতিয়ার তীর ঘেষা এই স্থানটি এখন সবুজের সমারোহ হিসেবে জেলাজুড়ে আলোচিত। অনেকের মন্তব্য, এখানে আসলে রথ দেখা ও কলা বেঁচা দু’টিই সম্ভব।
২৪ জুলাই সোমবার দুপুরে সরজমিনে এই এগ্রোতে গেলে এসব তথ্য উঠে আসে।

এখানকার কর্মচারী বাপ্পী সরকার বলেন, যখন এখানে প্রথম কাজ শুরু করি তখন বুজতেই পারিনি এটা এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। এখানে কাজের সুবাধে আমি এখন বিশ্বসেরা আম চিনতে পারছি এবং এগুলোর পরিচর্যা করতে পারছি। আমার মতো প্রায় ৩০ জন কর্মচারী এখানে কাজ করছেন। সবচেয়ে ভালো লাগে যখন মানুষ আমার কাছে এখানকার আম ও অন্যান্য ফল সম্পর্কে জানতে চায়।

এখানে ঘুরতে আসা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, মিশ্র ফলের এই বাগানের নাম ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো। যেখানে বিশ্বসেরা ৪৮ প্রজাতির আমসহ মোট ৩৭ প্রজাতির নানা জাতের ফলের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ হচ্ছে। বালি দিয়ে ভরাট করা এই স্থানটিতে সারাবছর ফল পাওয়া যায় বলে এটি চাঁদপুরের আলোচিত স্থান। এখানে ক্যান্সার প্রতিরোধক গাছের জাতেরও চাষাবাদ হচ্ছে। এছাড়াও ৯ প্রজাতির এবাগাডো, ১১ প্রজাতির লংগন, ১৯ প্রজাতির কমলা মাল্টা ও বিচীবিহীন ফলের চাষ হওয়ায় এটি সবার কাছে শিক্ষনীয়।

চাঁদপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল হাছান বলেন, উচ্চমূল্যের কিং অব চাকাপাত, অষ্টিন, অষ্টিন গোল্ড, মায়া, কেরাবো, হেডেন, মিয়াজাকি, ব্লেক স্টোন, থ্রী টেষ্টের মতো বিশ্বসেরা আমের জাত চিনতে ও ভবিষ্যতে জীবনে কাজে শিক্ষার্থীদের এখানে বেশি বেশি আসা উচিত। তাছাড়া আমাদের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঠপর্যায়ে এ সংক্রান্ত অনেক কিছু হাতে কলমে জানার জন্য এখানে আসা প্রয়োজন। কেননা তাদের এ সংক্রান্ত দু’টি বিষয়ও রয়েছে।

এ বিষয়ে ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রোর সত্ত্বাধিকারী হেলাল উদ্দিন বলেন, শখের বসে গড়ে তোলা এই ফলের বাগানের কোন কোন আমের দামের কেজি ৭শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। এছাড়াও এসব গাছের চাড়ার মূল্যও ৫শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা। যা অত্যান্ত লাভজনক বলেই মনে করছি। আর এখানে যারা এগুলো দেখতে আসেন তারাই এগুলোর ক্রেতা। তাই আমি নতুন উদ্যোক্তা যারা হতে চায় তাদের বলবো, আপনারা কমদামী জাতের ফলচাষে না ঝুঁকে উচ্চমূল্যের বিশ্বমানের ফলের চাষাবাদে আগ্রহী হউন। এতে করে সারাদেশের ফলের চাহিদা পূরণ হয়ে অর্থনীতিতেও এদেশের ফল ভালো অবদান রাখতে পারবে বলে আশা করছি।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তপন রায় বলেন, বালির ওপর মাটি ফেলে গড়ে তোলা পরীক্ষামূলক এই ফলের বাগান গড়ার কারিগর হচ্ছেন উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিন সাহেব। তার পাশে সবসময় পরামর্শ সহযোগিতা নিয়ে পাশে আছে কৃষি বিভাগ। আমরা চাই তার এমন অনুকরণীয় ফলের বাগান দেখে বেকাররাও এমন উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হয়ে উঠুক।