অমরেশ দত্ত জয়ঃ আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাঁদপুরে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হলেও পর্যাপ্ত পাইকারী ক্রেতা না পাওয়ায় পাকা কুমড়োর পচন ঠেকাতে তা গোখাদ্য হিসেবেই বিক্রি করছে চাষীরা। এতে করে এক প্রকার হতাশা নিয়েই উৎপাদন খরচ তুলার দুশ্চিন্তায় তারা। যদি সরাসরি মাঠ থেকে কুমড়ো কেনার ব্যবস্থা করে প্রশাসন তাহলে হয়তো খরছ পোষাতে কিছুটা আশার আলো দেখা যেতো।
৩ ফেব্রুয়ারী সোমবার সদরের দেবপুর, হাজীগঞ্জের বাকিলাসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে মিষ্টি কুমড়ো নিয়ে বাম্পার ফলন করা চাষীরা তাদের হতাশা তুলে ধরেন।
দেবপুরের চাষী আবুল কাশেম বলেন, এবার আমরা মাঠের পর মাঠে মিষ্টি কুমড়ো চাষাবাদ করেছি। যেখানে গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষাবাদে বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বীজ কেনা, জমি প্রস্তুত, ইজারাকৃত জমির মূল্য, পরিবহন খরছ মিলিয়ে ভালো দামে বিক্রি না থাকায় পোষাতে পারছি না আমরা। পাইকাররা এতো কুমড়ো না কিনায় মাঠের মধ্যেই যেনো পচে যাচ্ছে কুমড়ো। তাই বাধ্য হয়েই খরছ পোষাতে অবিক্রিত কুমড়া এখন নামমাত্র দামে গোখাদ্য হিসেবে বিক্রির চেষ্টা করছি।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক তথ্যে দেখা যায়, চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে এবার চাঁদপুর সদরে ৯০ হেক্টর, মতলব উত্তরে ১৭৫ হেক্টর, দক্ষিণে ৪০ হেক্টর, শাহরাস্তিতে ৩০ হেক্টর, কচুয়ায় ৪৮ হেক্টর, ফরিদগঞ্জে ৯৫ হেক্টর ও হাইমচরে ৩৯ হেক্টরসহ জেলায় সর্বমোট ১ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে। সবখানেই বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে জেলায় এবার মোট কুমড়ার উৎপাদন হয়েছে ২৪ হাজার ৯৭১ টন।
স্তূপাকারে রাখা কুমড়ো দেখতে গেলে দেবপুরের স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক লিটন সরকার বলেন, এবার মাঠ থেকে কুমড়ো উঠিয়ে তা বিক্রির জন্য দেবপুর, কৌয়ারপুল, বাকিলাসহ বেশ কিছুস্থানে স্তুপ করে সাজিয়ে রেখেছেন চাষীরা। হাটবাজারে ৩০-৪০ টাকা এবং পাইকাররা ১০-১৫ টাকা দামে কুমড়ো কিনছেন। যদিও অন্যান্য বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মিষ্টি কুমড়া কিনতে পাইকাররা সরাসরি ক্ষেতে আসতেন। পরে ট্রাক ও পিকআপ ভর্তি করে তারা ভালো দাম দিয়ে যেতেন মিষ্টি কুমড়ার। কিন্তু এবার স্তুপাকারে রেখে দেয়া কুমড়ো পচে গেলেও পাইকারদের দেখা নেই। তাই কৃষকের এমন নাজেহাল অবস্থা এড়াতে সরাসরি কুমড়ো কিনতে বা পাইকার নিশ্চিত করাসহ আরও সহায়তা নিয়ে প্রশাসন যাতে চাষীদের পাশে দাঁড়ায় এমনটি দাবী করছি।
এদিকে কুমড়ো চাষীদের পাইকার না পাওয়ার এমন হতাশার মাঝে গরুর খামারিরা সুযোগের সৎ ব্যবহারটি করছেন। তারা কমদামে মিষ্টি কুমড়ো কিনে তা গোখাদ্য হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন। এতে করে পুষ্টিসমৃদ্ধ এই কুমড়ো খেয়ে গরু দ্রুত মোটাতাজা হচ্ছে এবং অন্যান্য খরছ কমে গেছে দাবী খামারির।
হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের আলীগঞ্জের গরুখামারি মোঃ মোহন মিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত ২শ’ মণ কুমড়া কিনে গরুকে খায়িয়েছি। আরও ১-২শ’ মণ কিনবো। দিনে ২০ কেজি করে ৪টি গরুকে ৮০ কেজি করে প্রথমবারের মতো কুমড়ো খাওয়াচ্ছি। এতে করে অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে গরুর ওজন বেড়ে যাওয়ায় এবং গরু মোটাতাজা হওয়ায় ভালো দামে ৬টা গরু বিক্রি করছি। আরও ৪ টি বিক্রি উপযুক্ত হচ্ছে। তাই খর,ভুষিসহ গরুর জন্য অন্যান্য দানাদার খাবারে খরছ কমাতে কমদামে গোখাদ্য হিসেবে কুমড়ো কেনার এই সুযোগ কাজে লাগাতে সবাইর প্রতি আমার পরামর্শ রইলো।
অপরদিকে পুরো জেলার অধিকাংশ কুমড়োই স্তূপ করে বেচাবিক্রি হয় হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নে। তাই দূর দূরান্ত থেকে বড় বড় ট্রাক এসে এখান থেকেই কুমড়ো ভর্তি করে নেয় ট্রাকে। যেহেতু এবার পাইকার কম তাই পরিবহনখাতে যাতে খরছ কম লাগে সেদিকে নজর রেখে চাষীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন বাকিলার ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, যেহেতু সব কুমড়ো বাকিলা বাজার ও এর আশপাশে এনে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। তাই আমি চেষ্টা করবো কুমড়ো পরিবহনে যাতে চাষীদের খরছ কম লাগে এবং তারা লাভবান হয়।