অমরেশ দত্ত জয়ঃ আগামী শনিবার কোজাগরী লক্ষ্মীপূজো উপলক্ষে চাঁদপুরে নানা আকারের লক্ষ্মীর প্রতীমা উৎসবমুখর পরিবেশ কেনাবেচা শুরু হয়েছে।
২৫ অক্টোবর বুধবার সকাল থেকেই শহরের কালীবাড়ি মন্দির প্রাঙ্গণে নানা স্থান থেকে প্রতীমা নিয়ে আসতে শুরু করেন কারিগর ও ব্যবসায়ীরা।
চাঁদপুর জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা অজয় কুমার ভৌমিক বলেন, শরৎ পূর্ণিমার দিনে বাংলার ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপূজো করা হয়। আশ্বিন মাসের শেষের পূর্ণিমার দিনে যে লক্ষ্মী পূজো পালিত হয় তাকে বলা হয় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। কোজাগরী শব্দটির উৎপত্তি ‘কো জাগতী’ থেকে। এর আক্ষরিক অর্থ ‘কে জেগে আছো?’ মূলত কোজাগরী লক্ষ্মীপূজোর দিনে ধন সম্পদের দেবী লক্ষ্মী স্বর্গ থেকে মর্ত্যে অবতরণ করেন এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলকে আশীর্বাদ দেন। কিন্তু যার বাড়ির দরজা বন্ধ থাকে, তাঁর বাড়িতে লক্ষ্মী প্রবেশ করেন না এবং সেখান থেকে ফিরে চলে যান। তাই লক্ষ্মী পূজোর রাতে জেগে থাকার রীতি প্রচলিত আছে এবং সারারাত জেগে লক্ষ্মী আরাধনাই এই পূজোর বিশেষত্ব।
এদিকে কালীবাড়ি মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, পূজো উপলক্ষে প্রতীমা, কাগজের ফুল, গামছার দোকান, খেলনা কদমা সন্দেশের দোকান সাজানো হয়েছে।

ফরিদগঞ্জের পাইকপারার কানু পাল বলেন, আমি এই মন্দিরে ২শ’ প্রতীমা নিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে এসেছি। প্রতিটি প্রতীমা আকারভেদে ৩শ’ থেকে ১৫’শ টাকা দামে বিক্রি করছি।
কুমিল্লার বিজয়পুরের বাসিন্দা শাহরাস্তির অনন্ত পাল বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারো আমি এখানে ২শ’ ৪০টি প্রতীমা নিয়ে এসেছি। প্রতিটি প্রতীমা ৪শ’ থেকে ১২শ’ টাকা দামে বিক্রি করবো। এখনো বিক্রিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারিনি।
কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে রানা পাল টানা ১৫ বছর যাবৎ কালীবাড়ি মন্দিরে প্রতীমা বিক্রি করতে আসেন। তিনি বলেন, এবারো আমি ২শ’ ৬০ টি প্রতীমা নিয়ে এসেছি। জিনিস পত্রের দাম বেশি হওয়ায় এবার ২শ’ থেকে ১২শ’ টাকা দামে বিক্রি করছি। মূলত এঁটেল মাটি দিয়ে একটি প্রতীমা বানাতে রং তুলি দিয়ে রূপ দিতে আমাদের সময় লাগে ১ দিন।
হাজীগন্জের রামচন্দ্রপুরের লক্ষণ চন্দ্র সাহা মন্দিরে এসেছেন সন্দেশসহ পূজোর উপকরণ নিয়ে। তিনি ক্ষিরের প্যারা ৬শ’ এবং খেলনা কদমা ২৪০ টাকা ও লাড়ু কেজি ৫শ’ টাকা কেজি দামে বিক্রি করছেন।

শহরের নতুনবাজারের পালপাড়া এলাকার অজিত কুমার পোদ্দার এসেছেন পূজোতে ব্যবহার্য ফুলের মালা বিক্রি করতে। তিনি কাগজের মালা ৩০টাকা, সোলার ফুল ৩০ টাকা, গামছা ৩০ থেকে ১৫০ টাকা, মঙ্গল ঘট ৪০ টাকা, চড়কা ৩০ টাকা থেকে আকারভেদে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন।
পূজোর কেনাকাটা করতে আসা বলাই চন্দ্র সরকার বলেন, প্রতীমাসহ সবকিছুর দামই আগের চেয়ে বেশি। তবে কিনার দরকার তাই কিনতেছি। তবুও বলবো এখনো দাম সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে শহরের শ্রী শ্রী কালীবাড়ি মন্দির কমিটির সদস্য গোবিন্দ সাহা বলেন, আমরা নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী দিয়ে মন্দিরের এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছি। বর্তমানে ৪টা ফুলের দোকান, ৩টা গামছার দোকান, ৫টা প্রতীমার দোকান, ৫টা খেলনা কদমার দোকান এখানে বসানো হয়েছে। এগুলোতে কেনাবেচা এখন থেকে শুরু হয়ে প্রতিদিন ভোর ৬টা হতে রাত ১২টা এবং পূজোর আগের দিন রাত আড়াই টা পর্যন্ত চলবে। শনিবার যাতে সুন্দরভাবে পূজো হয় সেটাই প্রত্যাশা করছি।