অমরেশ দত্ত জয়ঃ চাঁদপুর সদরের রঘুনাথপুরে খুন হওয়া অসহায় রিক্সাচালক মোঃ দুলাল(৫৩) এর পরিবার সদর ইউএনও এর আশ্বাসে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন। দুলাল স্ত্রীসহ ১ ছেলে ও ৪ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন।
২৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদক কে মৃত দুলালের পরিবারের পাশে থাকার কথাটি জানিয়েছেন চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকত।
তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে অসহায় রিক্সা চালক মোঃ দুলালের পরিবারের জন্য যদি কিছু করার সুযোগ থাকে অবশ্যই করবো। আমি দ্রুতই আমার সমাজসেবা অফিসারের মাধ্যমে এ পরিবারের বিষয়ে খোজ খবর নিচ্ছি।
নিহতের পরিবারের পক্ষে তার স্ত্রী কোহিনুর বেগম বলেন, আমার স্বামী হত্যায় আমরা সর্বশান্ত হয়ে গেলাম। আমরা এই খুনির সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবী করছি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুরের পুরানবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজীব শর্মা বলেন, রিক্সা চালানোর টাকাতেই সংসার চালাতেন মোঃ দুলাল। তিনি শহরের গুনরাজদী জনৈক কাওসারের বাড়ির ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তার পরিবারে আছে স্ত্রী কোহিনুর বেগম, এক ছেলে নাহিদ ও সুরমা, পারভীন, সাদিয়া ও সোনিয়া নামে আরো ৪ কন্যা সন্তান। এছাড়াও মুক্তা নামে আরও এক কন্যা সন্তান মারা গেছে। খুনীকে শনাক্ত করতে পারায় এই পরিবারের মাঝে কিছুটা স্বস্তি এসেছে।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মোঃ শেখ মুহসীন আলম বলেন, লোভে পরে চুরির উদ্দ্যেশ্যে পরিকল্পিতভাবে দুলালকে হত্যা করেন আসামী শরিফ মাঝী। খুন করার পর নিজ এলাকায় গিয়ে নিরাপদে দুলালের রিক্সাটি রেখে মাংস দিয়ে খাবার খেয়ে কিছুটা বিশ্রামও নিয়েছিলেন শরিফ। পরে আরাম আয়েশ শেষে চুরি করা অটো রিক্সাটির বিভিন্ন অংশ খুলে এর আলামত নষ্ট করার চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত পুলিশের কাছে ধরা তাকে পড়তেই হলো।
এদিকে জেলা পুলিশ সুপার এর কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়।
তিনি বলেন, আমরা আসামী শরিফকে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ কালেক্ট করে শনাক্ত করার পর গ্রেফতার করি। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হানারচরের দক্ষিণ গোবিন্দিয়া এলাকায় তার বাড়ির পুকুর হতে চোরাইকৃত অটো রিক্সার বিভিন্ন খন্ডিত অংশগুলো উদ্ধার করতে সক্ষম হই। তার বিরুদ্ধে নালার মধ্যে ভিকটিম মোঃ দুলাল(৫৩) এর মৃত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে গেলো ১৪ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর এর চাঁদপুর মডেল থানার মামলা হয়। মামলা নং-৩৭। আমরা আসামীর বিরুদ্ধে এর আগেও কোন মামলা আছে কিনা এবং সে কোন চক্রের সদস্য কিনা তা খতিয়ে দেখছি।
এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল ইয়াসির আরাফাতসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গেলো ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে রিক্সা চালক দুলালকে বয়স্ক দেখে লঞ্চঘাট হতে তার অটোরিক্সা ভাড়া নিয়ে রঘুনাথপুরে নির্জন স্থানে গিয়ে মাথায় ইট দিয়ে পিটিয়ে তাকে মেরে নালায় ফেলে দেন শরিফ। পরে আসামী শরিফ অটো রিক্সার ৪টি ব্যাটারি বাগানে লুকিয়ে রাখে এবং রিক্সার অন্য অংশ গুলো বাড়ীর সামনের পুকুরে ফেলে দেয়। আর এই রহস্য উদঘাটনের পর আসামীর দেখানো তথ্যানুযায়ী স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে সকল মালামাল উদ্ধার করে পুলিশ।