অমরেশ দত্ত জয়ঃ চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের ৫নং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের উচ্চঙ্গা গ্রাম। যেখানে এখনো পাল বংশের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে মুড়ি ভাজছেন স্বরস্বতী পাল ও বাবুল চন্দ্র পাল। তারা তাদের ৩ যুগেরও বেশি সময় দাম্পত্য জীবন কাটাচ্ছেন এই মুড়ি ভেজেই।
১০ এপ্রিল সোমবার উচ্চঙ্গা গ্রাম ঘুরলে এ তথ্য উঠে আসে।
সরজমিনে দেখা যায়, উচ্চঙ্গা গ্রামটিতে ছোট ছোট ঝুপড়ী ঘরে এভাবেই মুড়ি ভেজে সংসারের হাল ধরেছেন পাল বংশের অনেক দম্পতীই। তারা ধান কিনে এরপর চাউল তৈরি করে তাতে লবন, জল, লাকরি, পাতিল, বালুসহ অন্যান্য উপকরন দিয়ে মুড়ি তৈরি করছেন। একাজ তারা ভোর রাত থেকে শুরু করে দিনের আলোতে শেষ করেন। কিন্তু যুগের পর যুগ এভাবে মুড়ি ভেজেও কোন দম্পতীর কেউই পুঁজির অভাবে তাদের ভাগ্য ফেরাতে পারেনি। দিন বদলের আশায় তারা এখন টিকে থাকতে চাচ্ছেন সরকারি পৃষ্টপোষকতা।
মুড়ি কারিগর বাবুল চন্দ্র পাল ও স্বরস্বতী পাল দম্পত্তি বলেন, আমাদের ২ মেয়ে ও ১ ছেলেসহ এখন ৪০ বছরের দাম্পত্য জীবন চলছে। মুড়ি ভাজার টাকা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চললেও ছেলে মেয়ে কাউকেই প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। বড়মেয়ে বিউটি ও ছোট মেয়ে অঞ্জনাকে বিয়ে দিলেও ওরা ভালো নেই। ছেলে শ্রী কৃষ্ণকে একটা দোকানে দিয়ে দিয়েছি দুইটা পয়সার জন্য। আর আমরা সপ্তাহে ৩০/৩৫ কেজি মুড়ি ভাজি তা স্থানীয় বাজারেই বিক্রি করে যা পাই এদিয়েই চলছে সংসার।
এমন হতাশার কথা জানালেন উচ্চঙ্গা গ্রামের খোকন পাল, কমল চন্দ্র পাল, পিযূষ চন্দ্র পালেরাও। তারা বলেন, এখানকার গিগজ চালের লম্বা মুড়ি এবং বৈশাখের টাফি চালের গোল মুড়ি আশপাশের বাজারে বিক্রি হয়। সুস্বাদু হওয়ায় রমজানেও এ মুড়ির চাহিদা অনেক। বর্তমানে কেজি প্রতি এসব মুড়ি ১৩০/১৪০ টাকায় বিক্রি হয়। লোকে যন্ত্রের মেশিনের মুড়ি সস্তায় পেলেও নির্ভেজাল হাতে ভাজা মুড়ি খেতে চাচ্ছে বলেই হয়তো এখনো টিকে আছি।
এদিকে ওই উচ্চঙ্গা গ্রামে মুড়ি বাজারজাতকরনে রাস্তাঘাট সমস্যা এবং সরকারি নজরদারি মুড়ি কারিগরদের প্রতি নেই বলে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন দুলাল পাল, অবিনাশ পাল, সুমন পাল, গৌতম পাল, গনেশ পাল, সঞ্জয় পাল ও শংকর পালের মতো বাপ দাদার আমল থেকে জড়িত এই মুড়ি কারিগররা।
এ বিষয়ে স্থানীয় ৫নং হাজীগঞ্জ ইউনিয়নের ৮নং ইউপি সদস্য মোঃ সোহরাব হোসাইন বলেন, ঐ এলাকায় কৈয়ারপোল থেকে রেলক্রসিং পর্যন্ত ১শ’ মুড়ি কারিগর ছিলো। কিন্তু কেউ এদের টিকিয়ে রাখতে এগিয়ে না আসায় এখন হাতেগোনা ১০/১৫ পরিবার মুড়ি ভাজছে। আমিও নানা মহলে এদের বিষয়ে আলোচনা করেও কিছু করতে পারিনি। তাই এই মুড়ি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, এই জেলার হাজীগঞ্জের উচ্চঙ্গাসহ অন্যান্য উপজেলার মুড়ি কারিগরদের সরকারি বেসরকারি মেলায় সম্পৃক্ত করতে উদ্যোগ নিবো। দ্রুতই তাদের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের জীবনমান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।
তবে সঠিক পৃষ্টপোষকতা পেলে মুড়ি উৎপাদনেও চাঁদপুর জেলা অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছে সচেতনমহল।