জয় চন্দ্র নাগঃ চাঁদপুর শহরে রাতের স্নিগ্নতায় ভ্যাণে অস্থায়ীভাবে বিক্রি করা শাক-সবজির জমজমাট হাট রাতে শুরু হয়ে কয়েকঘন্টার মধ্যে আবার রাতেই শেষ হয়ে যায়। অধিকাংশ চাষী নিজের ক্ষেতের সবজি হাতবদল ও সিন্ডিকেট ছাড়া সরাসরি নিজেদের ভ্যাণে নিজেরাই বিক্রি করায় চিরচেনা হাটবাজারগুলো থেকে দামও ক্রেতাদের হাতের নাগালে রাখা হয়। কালী মন্দিরকে ঘিরে ভ্যাণের বেচাকেনা দিন দিনই প্রসার হচ্ছে দাবী করছে মন্দির কমিটি। তবে পণ্যের দামকমের পাশাপাশি সাময়িক ঐ সময়টুকুর যানজট ঠেকাতে রাস্তার দু’পাশ ঘিরে গড়ে উঠা ভ্যাণে করে এই শাক-সবজির বিকিকিনিকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে জরুরি পরিকল্পনা নিচ্ছে সংশ্লিষ্টগণ।
২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার রাতে শহরের কালীবাড়ি মোড় হতে পালবাজার মোড় পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে সারিবদ্ধ এই ভ্যাণ রেখে পণ্য বিকিকিনির এমন চিত্রই উঠে আসে এ প্রতিবেদকের নজরে।
চাঁদপুর শহরের শ্রী শ্রী কালী মন্দির কমিটির সদস্য রতন মিত্র বলেন, এই কালীবাড়ি মন্দিরের পূজোর্চনায় সবসময় অনেক সনাতনী ভক্তসমাগম হয়। যা দেখে মন্দিরের প্রবেশ পথে শাকসবজি বিক্রির উদ্দ্যেশ্যে বসতে শুরু করে কয়েকজন বয়স্ক সবজি বিক্রেতা। নিজেদের ক্ষেতে ফলানো শাক-সবজি এনে প্রায় রাতেই তারা এখানে বেচাবিক্রি শুরু করে। দ্রুত বিক্রি হচ্ছে দেখে ক্রমান্বয়ে এখানে ভ্যাণে করে শাক-সবজি নিয়ে আসতে শুরু করে চাষীরা। ৫ টাকা হতে ১শ’ টাকায় ব্যাগ ভর্তি বাজার হওয়া এবং অল্প সময়েই এখানে শাক-সবজি বিক্রি হচ্ছে বিষয়টি জানাজানি হতে হতে এখানে এখন প্রতিদিনই সারিবদ্ধ অর্ধশত ভ্যাণে করে শাক-সবজিসহ জুতা, মাছ এমনকি জামা কাপড়ও এখানে বিক্রি হচ্ছে।
নিয়মিত ভ্যাণ হতে শাক-সবজি ক্রেতা আলীম আল রাজি কবির বলেন, চাঁদপুর কালীবাড়ি মন্দির হতে শুরু করে চাঁদপুর পৌরসভা হয়ে পালবাজার মোড় পর্যন্ত রাত হলেই ভ্যাণ বিক্রেতাদের আগমণ ঘটে। বিশেষ রাত ৯টা হতে ১১টা এই দুই ঘন্টায় রাস্তার দু’পাশে অন্তত অর্ধশত ভ্যাণ চালকের দেখা মিলে। যারমধ্যে তরতাজা টাটকা শাক সবজি, জুতা, জামা কাপড়, পিঠাপুলি, মাছসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বেচাবিক্রির হাঁকডাক শুরু হয়। কিছুটা যানজট হলেও শহরের নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষদের কেনাকাটায় এখানে ভীড় চোখে পড়ার মতো। স্বাভাবিক বাজার হতে এখানকার ভ্যাণে শাক-সবজির দাম পানির দরে হওয়ায় ক্রেতারাও স্বস্তি পাচ্ছে।
ক্রেতা মাঈনুল, সদ্দাম, শ্যামলসহ আরো অনেকে জানান, এখানকার ভ্যাণে ৪০/৫০ টাকা কেজিতে ফুল কপি, ৫০/৬০ টাকা কেজিতে মরিচ,৪০/৫০ টাকা কেজিতে ধনে পাতাসহ লালশাক,ডাটা শাক,বাঁধা কপি, লেবু, টমেটোসহ সব রকমের শাক-সবজির দামই কম। যা বাজারগুলোতে অনেক বেশি। তাছাড়া দিনে ব্যস্ততায় বাজারে যাওয়ার সময় হয়না, তার ওপর বাজার সিন্ডিকেটের চড়া দাম হওয়ায় সারাদিনের কাজ শেষ করে যাওয়ার পথে এখানে কমদামে সব হাতের নাগালে পাওয়া যাওয়ায় স্বস্তি মিলছে।
ভ্যাণে করে শাক-সবজি বিক্রেতারা বলছেন, বেশিক্ষণ অপেক্ষা না করে চাষকৃত শাক-সবজি ভ্যাণে আনা মাত্রই এখানে বিক্রি হওয়ায় দিন দিন এ রাস্তায় ভ্যাণে বেচাকেনার প্রসার ঘটছে। নতুন নতুন অনেক লোকই অন্যান্য ব্যবসা ছেড়ে ভ্যাণ কিনে অল্পটাকায় শাক-সবজি পাইকারী বাজার হতে কিনে তা এখানে ভ্যাণে করে বিক্রিতে লাভবান হয়ে সংসারের হাল ধরেছেন।
চাঁদপুর পৌরসভার ১৩নং ওয়ার্ডের বাহের খলিশাডুলী এলাকার বাসিন্দা মিজান গাজী। তিনি বলেন, অনেক ব্যবসা করে ক্ষতির সম্মুক্ষীন হয়ে এখন শেষ চালান হিসেবে মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটা ভ্যাণ কিনেছি। প্রতিদিন পালবাজার হতে বিভিন্ন পদের শাকসবজি পাইকারী কিনে রাতে তা ভ্যাণে করে বিক্রি করে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা লাভ পাই। এই দিয়ে এখন সংসার খুব ভালো চলছে।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মোঃ বাহার মিয়া বলেন, ভ্যাণ নিয়ে শাক-সবজি বিক্রি করা এ মানুষগুলোর অধিকাংশই গরিব। তাই যানজটের ভোগান্তি ঠেকাতে পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর হলেও পরে অবশ্য তাদের প্রতি নমনীয় আচরণ করে। তবে তাদেরকে নির্দিষ্ট কোন স্থানে বসতে দেয়া যায়কিনা তা পৌর প্রশাসক ভেবে দেখলে ভালো হয়।
এ বিষয়ে চাঁদপুর পৌর প্রশাসক মোঃ গোলাম জাকারিয়া বলেন, ভ্যাণে সবজি বিক্রেতাদের নানা সময়ে যানজট ঠেকাতে আটক করা থেকে বেরিয়ে আসতে বিকল্প চিন্তা খুঁজছি। কোন নির্দিষ্ট স্থানে বসা কিংবা মানুষের ভোগান্তি এড়াতে নির্দিষ্ট বেঁধে দেয়া নিয়ে যদি তাদের থেকে ভালো কোন প্রস্তাবনা আসে তাহলে সেমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা নিবো।
এদিকে চাঁদপুর শহরবাসীর বৃহৎ স্বার্থ চিন্তা করে এবং দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির বাজারে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য স্বস্তিদায়ক এই ভ্যাণে করে শাক-সবজি বিক্রেতাদের শৃঙ্খলায় রাখতে নির্দিষ্ট করে সময় বেধে দিয়ে হলেও কালীবাড়ি মন্দির প্রাঙ্গণ হতে পাল বাজার মোড় পর্যন্ত ব্যবসা করতে দিতে পরিকল্পনা নিবে সংশ্লিষ্টগণ এমনটাই প্রত্যাশা ভ্যানব্যবসায়ীদের।