মনির হোসেন খানঃ বৃষ্টিতে যখন পুরো জেলাবাসী জলাবদ্ধতা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ঠিক তখন এরমধ্যেই একদল সৌখিন মৎস্য শিকারীরা সদরের বাগাদী স্লুইস গেটের ডাকাতিয়া নদীতে মাছ শিকারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর অনেক উৎসুক জনতা সেটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি তুলে ও ভিডিও করে পোষ্ট করে আলোচনা সমালোচনা করছেন।
২৫ আগষ্ট রোববার সকালেও সৌখিন মৎস্য শিকারীদের মাছ শিখারে ব্যস্ততা দেখা যায়। অনেকেই সদরের বাগাদী ইউনিয়নের নানীপুর এলাকার স্লুইস গেটের ভেতরের এবং তৎ সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীর চারপাশে পেশাদার ও সৌখিন মৎস্য শিকারীরা দেশীয় পদ্ধতিতে দেদারছে মৎস্য শিকার দেখে মন্তব্য করছেন ‘কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ’।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, স্লুইস গেট এলাকার পুলের দু’ পাশে মাছ ধরা কে নিয়ে দীর্ঘ যানজট। স্থানীয়রা ছাড়াও দূর দূরান্তের উৎসুক মৎস্য শিকারিরা টেটা, জাল, খাচিসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে মাছ শিকারের উৎসবে মেতেছেন। কেউ নৌকার উপর কেউবা আবার ভেলার উপর দাড়িয়েও ঝাকি জাল ফেলে বা চার শিকের টেটা দিয়ে মৎস্য শিকারে ওৎ পেতে রয়েছেন। একটু পর পরই ছোট ও মাঝারি মানের রুই কাতলা মৃগেল মাছের পোনা ধরা পড়লে সবাই মিলে পাইছি পাইছি বলে বেশ উৎফুল্লতা দেখাচ্ছেন। এমন উল্লাস গেলো এক সপ্তাহ যাবৎ এখানে চলছে বলে খবর নিয়ে জানা যায়।

স্হানীয় বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ আজিজ মিজি জানান, গত এক সপ্তাহের অতি বৃষ্টির কারনে বিভিন্ন পেশাদার মৎস্য চাষীদের পুকুরের সব মাছ জলে ভেসে ডোবা নালা খাল বিল নদীতে চলে এসেছে। সেই মাছ গুলোই মানুষ এখন মহা আনন্দে ধরছে। ডাকাতিয়ার দু’পাড়েই হাজারও মানুষ এভাবে মৎস্য শিকার করে চলেছে। এমন দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে এ যেনো মৎস্য শিকারীদের মিলন মেলা বসেছে।
এদিকে অনেকেই কর্ম দক্ষতায় মণে মণে মাছ ধরে দল বেধে রাস্তাী ওপরই বিক্রি করে ফেলছেন। আর তা দেখে অনেকে এখানে এসে ফোনে ফোনে একে অন্যকে অল্প টাকায় ব্যাগ ভর্তি মাছ কিনতে কানাঘুষো করছেন। কেউ কেউ আবার লোভ সহ্য করতে না পেরে কোনরূপ পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও মাছ শিকার করার ব্রত নিচ্ছেন। আর জাল এবং টেটা কিনতে বাজারগুলোতে ভীড় করছেন। বর্তমানে চাহিদাভেদে এক একটি টেটা ছয়শ হতে বারোশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে চরম বিড়াম্বনায় চর বাগাদী পাম্প হাউজ কর্তৃপক্ষ। এটির একজন প্রকৌশলী শরীফ মাহমুদ বলেন, এই স্থানটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই এরমধ্যে ঢুকে মাছ শিকারে মনযোগী হচ্ছেন। এতে আমাদের নিয়মিত কাজে ব্যঘাত ঘটে যেকোন সময় ঘটতে পারে অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা। আমরা লোকজনদের এই রং তামাশা বন্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ এই স্থান থেকে সবাইকে সড়ে যেতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
এদিকে চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের ইউএনও সৈকত বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যায় মৎস্য খামার হতে ভেসে যাওয়া পোনা মাছ ভেসাল জাল দিয়ে নির্বিচারে শিকার করা হচ্ছে। যা মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন, ১৯৫০ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের কর্মকাণ্ড হতে বিরত থাকার জন্য সকলকে অনুরোধ করছি। এর ব্যত্যয় হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।