অমরেশ দত্ত জয়ঃ বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে প্রায় ৪ বছর পর শহরের ওয়াপদা গেইটে একটি ভাড়া বাড়ির অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শুরু হলো চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।
৭ মে রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় ৫ তলা বিশিষ্ট ওই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিতিপর্বের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়। এদিন ৩ বিভাগের ৯০ জন শিক্ষার্থী এবং ৬ শিক্ষক ও কর্মচারীসহ উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ড. নাছিম আখতার।
জানা যায়, মূল শহরের থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ওয়াপদাগেইটের খলিশাডুলীতে চাঁদপুর কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অস্থায়ী ক্যাম্পাসটি নেয়া হয়। যা গত ডিসেম্বর থেকে মাসিক প্রায় দেড় লাখ টাকা করে বাড়িটির ভাড়া দেয়া হচ্ছে। যদিও বাড়ীটিতে লিফট ও গেইটসহ অন্যান্য কাজ এখনো অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
তথ্য মতে, গেলো ২০১৯ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আলোর মুখ দেখলো এবার চার বছর পর। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে তিনটি বিভাগের শিক্ষার্থীর ভর্তি সম্পন্ন হয়েছে। তিন মাস ধরে শিক্ষকসহ অন্যান্য নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আবেদনকারী পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৯০ জন ভর্তি হয়েছে।
এখানে ভর্তি হওয়া ঝালকাঠির আতিক, যশোরের রোকনুজ্জামান এবং চাঁদপুরের সোহাগ বলেন, আমরা সবাই যে যার মতো করে ম্যাচ এবং বাসা বাড়ীতে উঠেছি। খাওয়া দাওয়া ও নিরাপত্তা বিষয়ের ঝুঁকি এখনো উপলদ্ধি হয়নি। কিছুদিন যাক এরপর বুজতে পারবো মূল অনুভূতি। তবে শিক্ষকরা আমাদের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক এটা লক্ষ্য করতে পারছি।
এসব বিষয়ে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নাছিম আখতার বলেন, ঈদের আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের অনলাইনে যুক্ত রেখে ব্যস্ত রেখেছি। আজ সরাসরি তাদের সাথে আমাদের পরিচয় পর্ব সেরে নিলাম। দ্রুতই আনুষ্ঠানিকভাবে নবীণ বরণ অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করছি।
উপাচার্য বলেন, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষায় ‘এ’ ইউনিটে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৩০, ‘বি’ ইউনিটে ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগে ৩০ এবং ‘সি’ ইউনিটে ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে ৩০ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। আজ শুধু তিন বিভাগে ভর্তির এই ৯০ শিক্ষার্থী, ৬ শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে নিয়ে পরিচয়পর্ব করলাম।
লক্ষীপুরের প্রসঙ্গে ড. নাছিম আখতার বলেন, তিন বিভাগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত কোনো আবাসন ব্যবস্থা নেই। তাই শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় থাকছে। আমরা লক্ষীপুরে যাবো কিনা এ বিষয়ে এখন কোন মন্তব্যের সুযোগ নেই। তিনি বলেন, লক্ষীপুরে এখনো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত বিভিন্ন সাইনবোর্ড যে যারা ঝুলিয়েছে তার সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ নেই। তারা কার পরামর্শে এগুলো ঝুলিয়েছে সে সম্পর্কে তারাই ভালো বলতে পারবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭-১৮ সালের লক্ষীপুরে বিতর্কিত ৬২ একর জমির মৌজার রেট অনুযায়ী, জমির দাম ১৯৪ কোটি টাকার কাছাকাছি নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু সেলিম খান গং আদায় করতে চেয়েছিলেন ৫৬০ কোটি টাকা। তবে তৎকালীন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ তাঁর নির্ধারিত দামেই অনড় থাকেন। পরে আদালতে রিট করেন জমির মালিক সেলিম খান গং। কিন্তু উচ্চ আদালত জেলা প্রশাসকের নির্ধারিত মূল্যকেই প্রাধান্য দেন। এই রিট, কালক্ষেপণ ও জাল দলিলাদি উপস্থাপন করায় সেলিম খান ও তাঁর দুই সহযোগীর এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু চলতি বছর জমির দাম বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক, যা ২০১৭-১৮ সালের মৌজার রেটের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আবারও সেলিম গংরা সেই বিতর্কিত স্থানে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।