মোঃ রুহুল আমিনঃ ১৪ অক্টোবর শুক্রবার বিকালে হাঁটতে বের হলে রাস্তায় এলাকার এক দানবীর মনসুর ভাই যিনি স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ সাল থেকে বিদেশে স্থায়ীভাবে থিতু হয়েছেন তার সাথে রাস্তায় দেখা। তিনি আমার চেয়ে বয়সে ১২-১৫ বছরের বড় হবেন। দেখা হতেই আমার সাথে পারস্পরিক কৌশলাদী বিনিময়ের মাঝে তাঁর অপর এক প্রতিবেশি নাম তার দেলোয়ার হোসেন এর সাথে দেখা। এসময় মনসুর সাহেব তার সাথে সালাম বিনিময় করলেন। তারা উভয়ে প্রতিবেশি হওয়ায় মনসুর সাহেব তাঁর ও পারিবারের সুখ-দুঃখের খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন। তাঁদের কথাবার্তা চলছিল মিনিট পাঁচেক। এক পর্যায়ে তাঁদের আলাপ আরও সময় নিবে মনে হওয়ায় আমি পাশে একটি বিশ্রামের জায়গায় অপেক্ষা করবো বলে গিয়ে বসতে বসতে খবর শুনলাম দেলোয়ার সাহেব কথাবলা অবস্থায়ই মাটিতে ঢলে পড়েছেন। এদিন হাটবার থাকায় রাস্তাদিয়ে যাতায়ত করা পথিকেরা সাথে সাথে কাছাকাছি পাশের শাহরাস্তি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তরত চিকিৎক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক জানান, হার্ট এটাকে তিনি সাথে সাথে মৃত্যুকোলে ঢলে পড়েছেন। সব মিলে ৮-১০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে। দেলোয়ার ভাইয়ের এমন মৃত্যুতে মন বেশ ভারী হয়ে উঠেছে। কিছু সময় কারো সাথে কোন কথাই বলতে পারছিলাম না। শোকে বিহব্বল ছিলাম। কাছ থেকে এমন মৃত্যু আর কখনো আমি দেখিনি। এমন মৃত্যুতে আমার বেশ কষ্ট হচ্ছিল। অজ্ঞান্তে নিজে নিজেকে জিজ্ঞাসা করছিলাম মানুষের মৃত্যু বুঝি এমন হাত ধরাধরি করে এক সাথে হাঁটে? আজ অনেক বছর আগের এমন একটি মৃত্যুর কথা খুব মনে পড়ছে। পত্রিকার কল্যাণে যা পরদিন পত্রিকা পড়ে জানতে পেরেছি। আজ এমন একটি মৃত্যু দেখে কিছু ভাবতে পারছিলাম না।
সেদিন গান গাইতে গাইতে মঞ্চে মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়েন লোকসঙ্গীত শিল্পী ফিরোজ সাঁই। সেদিন তিনি গাইতে গাইতে হাজার হাজার দর্শকের সামনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ঘটনাটি শিল্পকলা একাডেমীতে ১৯৯৫ সালের ১২ জানুয়ারী। তখন শিল্পকলা একাডেমীতে এতো জৌলুসপূর্ণ বিল্ডিং ছিল না। প্রায় সব ঘরই ছিল সেমিপাকা। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানে ত্রিপল টানিয়ে মঞ্চ করা হয়েছে। হাজার হাজার দর্শক গান শুনতে সামনের চেয়ারে বসা। একে একে শিল্পীরা গান গেয়ে দর্শক মাতিয়ে যাচ্ছেন। একতারা হাতে মঞ্চে উঠলেন গেরুয়া পোশাকের বাউল শিল্পী ফিরোজ সাঁই। গলায় পেঁচানো কয়েক স্তরের পুঁতির মালা। দর্শকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিলেন; অতঃপর শুরু করলেন তার স্বভাব সুলভ গায়কী ভঙ্গিতে গান
‘এক সেকেন্ডের নেই ভরসা’। দর্শক বিমোহিত! নেচে নেচে গাইতে গাইতে হঠাৎ পড়ে গেলেন মঞ্চে। ধরাধরি করে হাসপাতালে নেয়ার আগেই সব শেষ।
আসলে এটাই জীবন। কেযে কখন চলে যাবেন তা কেউ বলতে পারে না। পৃথিবী একটি ট্রানজিট পয়েন্ট। এখানে কেউ থাকতে আসে না। আর থাকতে চাইলেও থাকার সুযোগ নেই। আসার নিয়ম আছে কিন্তু যাবার নিয়ম নেই। একদিন সবাইকেই যেতে হবে। কেউ আগে আর কেউবা পরে। কিন্তু চলে যেতেই হবে। তাই চলে যাবার জন্য সবাইকে তৈরি থাকতে হবে।
মোঃ রুহুল আমিন
সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী