অমরেশ দত্ত জয়ঃ দুর্ণীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় দুদক এ গিয়ে চাঁদপুর সদরের সাবেক সাব-রেজিষ্ট্রারসহ পরস্পর যোগসাজসে ট্রাস্ট ও ধর্মীয় দানের সম্পত্তি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দেওয়ায় চাঁদপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সম্পাদক শলোমন মন্ডলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। আর এই সদস্য পদ বাতিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ ফেলোশিপ (বি,বি,সি,এফ)।যার নেপথ্যে রয়েছেন সংস্থাটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রেভাঃ লিয়র প্রতিম সরকার এবং চাঁদপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সাবেক পালক রেভাঃ মনিন্দ্র বর্মন ও তার সহযোগীগণ।
২৯শে অক্টোবর বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ অভিযোগ করেন চাঁদপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সম্পাদক শলোমন মন্ডল।
তিনি অভিযোগকালে আরো বলেন, কোনরকম শোকজ বা আত্মপক্ষের সমর্থণের সুযোগ না দিয়েই অগঠনতান্ত্রিকভাবে আমাকে বহিষ্কার করে আমার বাক-স্বাধীনতা হরনের অপচেষ্টা করা হয়েছে। যা এক ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানহানীও বটে।
দুদকে কি অভিযোগ দিয়েছিলেন গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে শলোমন মন্ডল বলেন, ব্যাপ্টিস্ট চার্চের ৫৪ শতাংশ জায়গার মধ্যে পুকুর ও ভূমি রয়েছে। যা বাংলাদেশ ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ ফেলোশিপ(বি,বি,সি,এফ) এর সম্পাদক রেভারেন লিওরপি সরকার, চাঁদপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সাবেক পালক রেভাঃ মনিন্দ্র বর্মন ও তাদের সহযোগীরা পরস্পর যোগ সাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত স্বার্থে ট্রাস্টের ধর্মীয় ও দানকৃত ১২০ বৎসরের দখলীয় মূল্যবান সম্পত্তির ৮/৯ কোটি টাকার পুকুর ও ভূমি বিক্রি করে পুরো টাকা ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে। এতে ট্রাস্ট এবং চার্চের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সেই সাথে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনা হয়েছে বলে আমি মনে করছি।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এ ঘটনায় কার কার নামে অভিযোগটি দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান,১.চাঁদপুর সদরের সাবেক সাব-রেজিষ্ট্রার মো. জসিম উদ্দিন,২.মৃত মাইকেল এস. সরকারের ছেলে লিয়র প্রতিম সরকার,৩.মিঃ হিমেল বোস,৪.মিঃ উত্তম দেওয়ানের স্ত্রী মিসেস লিজা দেওয়ান,৫.লিয়র প্রতিম সরকারের স্ত্রী লেসলি সরকার,৬.মৃত সাধন চন্দ্র বোসের স্ত্রী জয়ন্তী বোস,৭.মৃত হরেন্দ্র বর্মনের ছেলে মনিন্দ্র বর্মন,৮.মৃত হরি চরন মন্ডলের ছেলে রমেশ চন্দ্র মন্ডল এবং ৯.জি. এম. শফিউল আলম।
এদিকে এ সময় চাঁদপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের পরিচারিকা মিসেস রূৎলেখা কর্মকার মুঠোফোনে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, আমরা যেকোন মূল্যে চার্চের পুকুর সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান চাইছি।
এ ছাড়াও এই অভিযোগের প্রসঙ্গে চাঁদপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের পরিচারিকা মিসেস মুক্তি মন্ডল জানান,এই আমরণ অনশনে যদি আমাদের কারো মরন হয়। এর সম্পূর্ণ দায়ভার বাংলাদেশ ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ ফেলোশিপ (বি,বি,সি,এফ) এর সম্পাদক রেভারেন লিওরপি সরকার ও তার সহযোগীদের নিতে হবে। আমরা এই ষড়যন্ত্রকারীদের সঠিক বিচারে প্রশাসনসহ সর্বমহলের সহযোগিতা কামনা করছি।
এ ব্যপারে অভিযোগ করে চাঁদপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সহ-পালক জাকারিয়া হাসান জানান, চার্চের ট্রাস্টের বেশি দামের সম্পত্তি কমদামে পেছনে এবং পেছনের কমদামের সম্পত্তি সামনে দেখিয়ে বিক্রি করা হয়েছে। এতে চার্চের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
চাঁদপুর ব্যাপ্টিষ্ট চার্চের পরিচারক যোশেফ দাস বলেন, আমরা চার্চের ঐতিহ্য ও সম্পত্তি ফেরত চাই। পাশাপাশি চার্চের সম্পাদক শলোমন মন্ডলকে নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের ধিক্কার ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ সময় এনএসআই,পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এ অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ ফেলোশিপ (বি,বি,সি,এফ) এর সাধারণ সম্পাদক রেভারেন লিওরপি সরকারকে বহুভাবে চেষ্টা করেও তাৎক্ষনিকভাবে পাওয়া না যাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে সবার পক্ষে অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবী করে চাঁদপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সাবেক পালক মনিন্দ্র বর্মন গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, কমিটির ৭১জন একযোগে শলেমোন মন্ডলের বিরুদ্ধে রিজাইন দেওয়ায় সে আর তার বউ মিলে বিভিন্নভাবে উস্কানীমূলক বক্তব্য দিচ্ছে।আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এর আগে এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানার এস আই রমজান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, চাঁদপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের পুকুর ও জমি সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তাই উর্দ্ধতনের নির্দেশে ওই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।
প্রসঙ্গত, চাঁদপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সম্পাদক শলোমন মন্ডলসহ চার্চের একাংশ গতকাল বুধবার সকাল থেকে এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে আমরণ অনশন ও বিশেষ প্রার্থন করে যাচ্ছেন।
