অমরেশ দত্ত জয়ঃ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে চাঁদপুরের কচুয়ার সাচারের রথটিতে দাপর, ক্রেতা ও কলিযুগের বহু নিদর্শন ছিলো। রথটিতে কাঠের খোদাই করা নকশা শোভা পেতো। কিন্তু স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সৈন্যরা সৌন্দর্যমন্ডিত সাচারের ওই রথটি পুড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে যুদ্ধের পর সাচার মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রার প্রতিমূর্তি স্থাপন করে প্রথম রথ ও ফিরতি রথযাত্রা হয়। যেখানে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত থেকে এসে অসংখ্য ভক্ত সমাগত হন। এটি বাংলাদেশের একটি প্রসিদ্ধ রথযাত্রা হিসেবে সমগ্র দেশে স্থান করে নিয়েছে।
১৮ জুন রোববার সাচার মন্দিরে গেলে এসব তথ্য স্থানীয়রা তুলে ধরেন। এসময় আগামী ২০ জুন মঙ্গলবারের রথযাত্রায় মন্দির কমিটির ব্যাপক প্রস্তুতি লক্ষ্য করা যায়।
জানা যায়, স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই সাচারের রথটি টানা হতো। এখনো আষাঢ়ের এই রথ যাত্রায় সাচারকে পূর্ণ তীর্থস্থান মনে করে কয়েক লাখ সনাতনী ভক্তের সমাগম ঘটে। তাই সনাতনীরা রথযাত্রা এলে সাচারের জগন্নাথ মন্দিরে ছুটে আসেন। সাচার জগন্নাথ মন্দিরটি ঘিরে আরো ৩টি মন্দির রয়েছে। এগুলো হলো দুর্গা মন্দির, লোকনাথ মন্দির এবং কালী মন্দির।
এ বিষয়ে সাচারের জগন্নাথ মন্দিরের পুরোহিত শান্তি চক্রবর্তী বলেন, ১৯৭৭ বঙ্গাব্দে চাঁদপুরের কচুয়ায় সাচার রথের প্রতিষ্ঠা। তৎকালীন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনম এহছানুল হক মিলন নতুনভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংস হয়ে যাওয়া রথটিকে পুণঃনির্মাণ করে দেন। ঐ সময়ে যার জন্য খরছ হয়েছিল আনুমানিক ৪০ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে দেশের সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও কচুয়ার সন্তান আ ন ম এহছানুল মিলনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই দেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার দেশ। আর আমার পারিবারিক শিক্ষা ও নৈতিকতায় সব সময় ধর্মের চেয়ে মানুষ বড় এই আদর্শেই আমি বিশ্বাসী। একবার আমি মানিকগঞ্জের ধামরাইয়ে গেলে ওখানকার রথযাত্রা দেখতে পেয়েছিলাম। যা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তখন থেকে আমি আমার সনাতনী ভাই বোনদের জন্য সাচারের রথটি পুনরায় নির্মাণের উদ্যোগ নেই। যার জন্য ভারত থেকে কারিগর এনে রথটি তৈরি করে দিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, সারাদেশের সনাতনীদের জন্য সবচেয়ে বড় রথযাত্রা আমার সাচারে। এখানে লাখ লাখ সনাতনীর মিলনমেলা ঘটে রথযাত্রা ঘিরে। যা দেখে আমার কাছেও ভালো লাগে। গেলো ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে আমি ২০ লাখ টাকায় এটির পুণনির্মাণ কাজ শুরু করি। পরবর্তীতে এটি ৪০ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। শুধু তাই নয়। রথটি রাখার জন্য ঘর নির্মাণেও আমি অবদান রাখি।
উল্লেখ্য, চাঁদপুরের কচুয়ায় সাচার রথযাত্রার পাশাপাশি মানুষ মনসামুড়ামন্দির, উজানীর বেহুলা-লক্ষীন্দরের পাটা-পুতার দিঘি আর চাঁদ সওদাগরের ডুবে যাওয়া সাম্পান দেখতে ভীড় জমিয়ে থাকেন।