স্টাফ রিপোর্টারঃ বিদেশ যাওয়া হলোনা ফরিদগঞ্জের ফরহাদের, পরকিয়ায় কেড়ে নিলেন তার প্রাণ। ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২নং বালিথুবার ইউনিয়নের শোল্লা তাম্র শাষন এলাকার ভূঁইয়া বাড়ির বাবুল ভূঁইয়ার ছেলে ফরহাদ হোসেনের গলায় ফাঁস দিয়ে রহস্য জনক মৃত্যুর ঘটনায় চলছে ধৌঁয়াশা। দুই মাস অতিবাহিত হলেও প্রকৃত ঘটনা উধঘটনে নিরব ভূমিকায় মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত প্রদীপ মন্ডল।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, গত ২৪ জুলাই দিবাগত রাতের কোন এক সময় একই ইউনিয়নের সোশাইরচর গ্রামে মেঝো বোনের শ^শুর সাবেক তাহের মেম্বারের ঘরের সামনে পরকিয়ার বলি ফরহাদ হোসেনের নিথর দেহ ঝুলে রয়েছিল কাপড় শুখানো চিকন বাঁশে।
ফরহাদের বড় ভাই কামরুল হাসান জানায়, ২৪ জুলাই আমার ছোট ভাই ফরহাদ ঢাকা থেকে বোনের বাড়িতে আসে। ওখান থেকে রাত সাড়ে ৮টার সময় আমাদের বাড়িতে আসে। এরপর ১০-১৫ মিনিট পরেই তার মোবাইলে একটি ফোন আসে। আমি তখন পুকুর ঘাটে বসা ছিলাম। তখন আমি শুনতে পাই ফরহাদ মোবাইলে বলতেছে আমি ১ ঘন্টার মধ্যে আসতেছি। এই বলে সে যেই সিএনজিতে করে বাড়িতে আসছে সে সিএনজিতে করেই চলে যায়। এরপর আর তার কোন খোঁজ পাইনি।
সিএনজি চালক স্বপন জানায়, ঘটনার দিন ফরহাদ আমার সিএসজি যোগে তার বোনের বাড়িতে যায়। তবে যাওয়া সময় কার সাথে যেন খুব রসালো আলাপ করতে শোনা যায়। ওই বাড়ির সামনে গিয়ে সে চলে যাবে বলে আমাকে ৫ মিনিট অপেক্ষ করতে বলে, পরে কিছুক্ষন পর (আনুমানিক রাত ৯টায়) এসে আমাকে ভাড়া দিয়ে বিদায় করে দেয় এবং বলে সে এখানে থাকবে বলে জানায়।
ফরহাদের বাবা বাবুল হোসেন ভূঁইয়া জানান, আমার মেঝো মেয়ের শাশুড়ি মনোয়ারা বেগম ২৪ জুলাই দিবাগত রাত আনুমানিক ৪টার দিকে আমার মেঝো মেয়ে জান্নাত আক্তারকে ফোন করে জানায়, তোর ভাই আমাদের রান্না ঘরের সামনে ফাঁস দিয়েছে। সে তাৎক্ষনিক আমাদেরকে ফোনে জানালে আমি, আমার স্ত্রী, বড় মেয়ে ও ৩ ছেলেকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি তাদের রান্না ঘরের সামনে জামা কাপড় দেওয়া শুখনা বাঁশের সাথে আমার ছেলের ঝুলন্ত লাশ লাল ওড়না দিয়ে বাঁধা।
তিনি আরো জানান, আমার ছেলেকে তারা খুন করে বাঁশের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে, তার পায়ে আঘাতের চিহ্ন এবং ওখানে মাটিতে অনেক রক্ত জমাট হয়ে পড়েছিলো। এমনকি তার পা দু’টি মাটির সাথে লেগে ছিলো। আমি আমার ছেলের খুনির বিচার চাই। এটা কখনোই আত্মহত্য হতে পারে না, আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই আমার ছেলে বিদেশ যাওয়ার কথা ছিলো, তা আর হলোনা।
বাবুল হোসেন ভূঁইয়া ও পরিবারের লোকজন আরো জানান, আমরা কয়েকবার থানায় গিয়েছি প্রদীপ স্যারের কাছে। আমার ছেলের কল লিস্ট ও ঘটনার সাথে জড়িত পিংকিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য। কিন্তু তিনি আমাদের কোন কথাই কর্ণপাত করেন নাই। তবে লোক মুখে শুনতে পাই পিংকির পরিবারের লোকজন সব যায়গায় ম্যানেজ করে ফেলেছে।
বড় ভাই কামরুল আরো জানায়, আমার ভাইয়ের লাশ দেখে ৯৯৯ এ ফোন করিলে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ অফিসার প্রদিপ মন্ডল সহ ৪ জন এসে আমার ভাইয়ের লাশ নামিয়ে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় আমরা তার পায়ে কাটার দাগ ও রক্তাক্ত স্থান দেখাই পরে তার লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠায়।
মেঝো বোন জান্নাত জানায়, আমি ও আমার স্বামী ঢাকায় থাকি। আমার ছোট ভাই ফরহাদের সাথে আমার দেবরের স্ত্রী পিংকির সাথে পরকিয়া সম্পর্ক ছিলো। সে তার সাথে সব সময় কথা বলতো। এ বিষয়টি আমার স্বামী, শাশুড়ী এবং আমার বাবা, মা জানেন। বিষয়টি নিয়ে উভয়কে বারন করার পর তারা আর কথা বলবেনা বলেও জানায়। কিন্তু ঘটনার দিন আমার প্রবাসী দেবর রুবেলের স্ত্রী খাদিজা আক্তার পিংকির ফোন থেকে রাত আনুমানিক ৪টার দিকে আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে আমার শাশুড়ি জানায়, তার ছেলেকে মোবাইল দেওয়ার জন্য। আমার স্বামীকে মোবাইল দিলে তার সাথে বলে যে, আমার ভাই তাদের ঘরের সামনে ফাঁস দিয়ে মরে গেছে। আমার স্বামী তখন তার চাচাতো ভাই মনির ভাইয়ের সাথে কথা বলে এবং তাদের পরকিয়া সম্পর্ক ছিলো ঐ বিষয়েও কথা বলে এবং তার চাচাতো ভাই আমাকে বলে, যা হবারতো হয়ে গেছে। এ বিষয়টি নিয়ে আর ঘাটাগাটি না করার জন্য।
পিংকির চাচাতো ভাসুর মনির হোসেন জানায়, ঘটনার রাতে আমার জেঠি মনোয়ারা বেগম ফরহাদের ঝুলন্ত লাশ দেখে ডাক চিৎকার দিলে আমি ও আমার পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি বাঁশের সাথে ফরহাদের লাশ ঝুলে আছে। ফরহাদের সাথে পিংকির সম্পর্কের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তারা উভয় পক্ষেই ভালো জানেন। এ মৃত্যুটি হত্যা না আত্মহত্য তা জানিনা।
একই বাড়ির শাহাদাত জানায়, ফরহাদ হোসেন দির্ঘদিন আমাদের বাড়িতে তার বোনের বিল্ডিংয়ে রাজ মিস্ত্রির কাজ করেছেন। আমাদের বাড়ির অন্য একজন থেকে কিছু কাঠ বাঁশ তার বোনের বিল্ডিংয়ের কাজের জন্য আনলে ওগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য ২৪ জুলাই বিকেল বেলা ফরহাদ হোসেন আমাদের বাড়ি আসে। ওই দিন ভোর রাতে ডাক চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে এসে দেখি ফরহাদের লাশ ঝুলে আছে।
পিংকির শ্বাশুরি মনোয়ারা বেগম জানায়, রাতে বৃষ্টি হয় দেখে পাতার বস্তা ঘরে নেওয়ার জন্য আমি লাইট নিয়ে ঘর থেকে বের হই। বাহিরে এসে লাইটের আলোয় দেখি তার লাশ ঝুলে আছে। আমি তখন ডাক চিৎকার দিলে লোকজন আসে। পরকিয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে সে জানায়, আমি এগুলো জানিনা, সম্পর্ক থাকলে কি আর মরতোনি। বাড়িতে কোন পুরুষ থাকেনা। সে বিকালে ঢাকা থেকে আমাদের বাড়িতে আসছে আমাদের বিল্ডিংয়ের কাজের জন্য কাঠ বাঁশ আনছিলো আমাদের বাড়ির অন্য এক জনের কাছ থেকে। ওগুলো দেওয়ার জন্য। ওই সময় সে আমাদের ঘরেও আসেনা। পরে রাতে আমি দেখি তার লাশ ঝুলে রয়েছে। পরে আমার ছেলে (ফরহাদের ভগ্নিপতি) কে ওই সময়ই বিষয়টি জানাই।
এ বিষয়ে ২নং বালিথুবা ইউপি চেয়ারম্যান হারুন জানায়, ঘটনাটি ঘটেছে আমার পাশর্^বর্তী বাড়িতে। তবে ঘটনার দিন আমি দেশের বাহিরে ছিলাম। তবে বিষয়টি হত্যা না আত্মহত্যা আমি সঠিক বলতে পারবোনা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত প্রদীপ মন্ডল জানায়, ৯৯৯ এর ফোন পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। ওখানে গিয়ে লাশ নামিয়ে সুরতাহাল করে পোসমর্টেমের জন্য চাঁদপুর মর্গে পাঠাই। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে। মৃত্যুর রহস্য উধঘাটনে কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা জেজ্ঞেস করলে তিনি কোন সদ উত্তর দেন নাই।
চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. আসিবুল ইসলাম জানায়, বিষয়টি হত্যা না আত্মহত্যা এখনো বলা যাচ্ছেনা। পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য আলামত পাঠিয়েছি। রিপোর্ট আসলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। তবে লাশের পায়ের আঙ্গুলে কাটা ও থেঁতলানোর চিহ্ন রয়েছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে এ বিষয়ে খাদিজা আক্তার পিংকির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্ট করতে চাইলে পিংকির শাশুড়ি জানায়, সে অসুস্থ, তার বাবার বাড়িতে রয়েছে। আমরা তাকে আসার জন্য তার শাশুরিকে পাঠাইলে তিনি এসে বলেন, পিংকি বাড়িতে নেই, ডাক্তার দেখাতে গিয়েছে। পরবর্তীতে আমরা তাৎক্ষনিক পিংকির বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখি ঘরে তালা ঝুলে আছে। পরে তার মোবাইলে কল করলে তার মেয়ে রিসিভ করে বলে আমরা নোয়াখালি বেড়াতে আসছি। অথচ পার্শ্ববর্তী লোকজন জানায় কিছুক্ষন আগেও তারা ছিলো। আপনাদের সংবাদ পেয়েই পালিয়ে গেছে।
এ হত্যা কান্ডের রহস্য উধঘাটনের জন্য ফরহাদের পরিবারের লোকজন চাঁদপুরের পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।