অমরেশ দত্ত জয়ঃ চাঁদপুরের পুরানবাজার ডিগ্রী কলেজের ব্যবসায় শাখার শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষার্থী পলাশ দে(২০)। সে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। চোখে তেমন একটা দেখতে না পেলেও সে মনের জোড়ে অদম্যভাবে নিজের পড়ালেখা এগিয়ে নিচ্ছেন। নিজ কলেজ শিক্ষকদের সহযোগিতায় সে পরীক্ষা কক্ষে শ্রুতি পরীক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে এবার দিয়ে ফেললেন এইচএসসি পরীক্ষাও।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, পলাশ দের বাড়ী ছিলো পুরানবাজারের হরিসভা এলাকায়। কয়েক বছর আগে মেঘনা নদী গ্রাস করে নেয় পলাশ দে এর বসতভিটাটুকু। তার বাবা শ্যামল দে ছেলের পড়ালেখার এমন ইচ্ছা দেখে ঘোষপাড়ায় কোনমতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন। সেখানে স্ত্রী ও ২ ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি পেশায় একজন বাদাম বুট বিক্রেতা। এখন শহরে ঘুরে ঘুরে এই বাদাম বুট বিক্রির টাকাতেই সংসারসহ পলাশ দে এর পড়ালেখার খরছ তিনি চালাচ্ছেন।
২১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকালে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজে গিয়ে দেখা যায়, সহযোগিতা নিয়ে সুন্দরভাবেই পরীক্ষা দিচ্ছেন পলাশ দে। এ সময় পরীক্ষার কক্ষে অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকেও পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তাদের পরীক্ষা দিতে দেখা গিয়েছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মাসুদুর রহমান ‘হিলশা নিউজ‘-কে বলেন, আইন অনুযায়ী বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১০% অতিরিক্ত যে সময় পাবার কথা। সেটি আমরা পলাশ দে নামের ওই শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেও দিয়েছি। তার পড়ালেখার বেশ আগ্রহ রয়েছে দেখে খুব ভালো লাগলো। সমাজের বিত্তবানরা আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসলে পলাশ দে তার দৃষ্টি ফিরে পেতে পারবে বলে আমি মনে করি। পলাশ দে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে দেশ সেবায় ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমার প্রত্যাশা।
পরীক্ষা ভালো হয়েছে জানিয়ে শিক্ষার্থী পলাশ দে ‘হিলশা নিউজ‘-কে বলেন, আমি জন্মগতভাবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। আগে ১ চোখে সামান্য কিছু দেখলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমার সে চোখে দেখতেও দারুন সমস্যা অনুভব করছি। তবে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেবার আমার ইচ্ছে রয়েছে। এজন্য আমার পড়ালেখা এগিয়ে নিতে চোখের আলো ফিরে পেতে চিকিৎসা করাটা একান্ত জরুরী। তাই আমার চোখের আলো ফিরে পেয়ে পড়ালেখা এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি মহোদয়সহ সমাজের বিত্তবানদের থেকে আর্থিক সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি।
এ বিষয়ে পুরানবাজার ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার ‘হিলশা নিউজ‘-কে বলেন, পলাশ দে আমার কলেজের শিক্ষার্থী। ওর পড়ালেখার অদম্য ইচ্ছে হওয়ায় বোর্ডে আমি নিজে গিয়ে আইন অনুযায়ী পলাশের জন্য শ্রুতি পরীক্ষার্থীর ব্যবস্থা করেছি। ওর উচ্চ শিক্ষা অর্জনে আমি ব্যাক্তিগতভাবে ওর পাশে থাকবো এবং সমাজের বিত্তবানদেরও মানবিক দিক বিবেচনায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।