মামুন হোসাইনঃ ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র তথ্য মতে ২০২২ সালে হাসপাতালে পানিতে পড়া শিশু এসেছে ৩১ জন। এদের মধ্যে ২০ জনই মারা গেছে। উপজেলায় গত বছর যে সব শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ৭ এপ্রিল, উপজেলার ১৫নং রূপসা উত্তর ইউনিয়নের গাব্দেরগাঁও গ্রামে সুমাইয়া নামের ৮ বছর বয়সের শিশু সকাল ১১টার দিকে খেলতে খেলতে পুকুরে পড়ে মারা যায়।
১ আগস্ট, উপজেলার ৯নং গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নে মো.সালমান নামের দেঢ় বছরের এক শিশু খেলতে খেলতে পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। পুকুরের পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হয়। ১২ নভেম্বর, উপজেলার গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের আনিছ হোসেন (২) ও একই ইউনিয়নের হোগলী গ্রামের নূর মোহাম্মদ (২) সকালের দিকে খেলতে খেলতে পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়। ২৭ ডিসেম্বর, উপজেলার ১৪নং ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের চরবড়ালী গ্রামের মামুন ভাইয়ার দেড় বছরের মেয়ে মারিয়া পানিতে ডুবে মারা যায়।
সংবাদ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যুর অধিকাংশ সময় সকাল ১০ টা থেকে ১টার মধ্যে। এবং যে শিশু মারা গেছে তাদের বসতির পাশেই পুকুর অথবা ডুবা রয়েছে। মূলত দেখ-ভাল করার অভাবেই এই মৃত্যুগুলো হয়েছে। যে সময়টা শিশু পানিতে পড়ছে ঐ সময়টায় মায়েরা ব্যস্ত থাকেন রান্না বা বাড়ির কাজে, বাবারা কাজে ঘরের বাহিরে এবং বড় ভাই-বোন (যদি থাকে) তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকে।
বুদ্ধিবৃত্তিক এবং শিশুদের নিয়ে কাজ করা ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম’র বর্তমান কমিটির সভাপতি কবি ‘পাভেল আল ইমরান এ বিষয়ে বলেন, সবার আগে প্রয়োজন বাচ্চাদের প্রতি আমাদের মনোযোগী হওয়া। সেই সাথে থাকতে হবে প্রাথমিক চিকিৎসা জ্ঞান, যাতে তাৎক্ষনিক প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় হাসপাতালে নিতে নিতে বাচ্চা মারা যায়।
অথচ আমরা যদি পানি থেকে উঠিয়েই হার্ট ও শ্বাস প্রশ্বাস চালুর প্রাথমিক চেষ্টা করি, তাহলে বাচ্চা বেঁচেও যেতে পারে।’ তিনি আরো বলেন,‘অনেক ক্ষেত্রে ডুবে যাওয়া শিশুকে কী করা হবে বা ফার্স্ট রেসপন্স সম্পর্কে প্রশিক্ষিত ব্যক্তির অভাব রয়েছে। পানিতে পড়ে ডুবে মারা যাওয়া দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারি এবং এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। কিছু সুনির্দিষ্ট কাজ করতে হবে।
যেমন- কমিউনিটি সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সেই সাথে শিশুকে পানি থেকে উদ্ধার করে তার শ্বাস ও হার্ট চালু করার যেসব প্রাথমিক কাজ আছে সেগুলো মানুষকে শেখাতে হবে। হাসপাতালে আনতে আনতে অনেকেই বাঁচেনা। তাই যারা উদ্ধার করেন তাদের যদি প্রাথমিক ওই জ্ঞান থাকে তাহলে অনেক শিশুই বেঁচে যাবে। যে সংসারে মা বাবা দু’জনই চাকরিজীবি তাদের শিশুদের জন্য ‘ডে কেয়ারের’ ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা সরকারিভাবে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও হতে পারে আবার বেসকারি উদ্যোগেও হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, বুদ্ধি-ভিত্তিক বিকাশ ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা থাকা জরুরী।’
ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র মেডিকেল অফিসার ডা. মোজ্জামেল পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর জন্য কয়েকটি রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে বলেন- সবচেয়ে বিপজ্জনক পুকুর (৯০ শতাংশ দুর্ঘটনা পুকুরেই হয়ে, যেটি একেবারেই বাড়ির পাশে থাকে)। এছাড়া খাল, বিল, ডোবাতো আছেই। বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাঁতার না জানা। তাৎক্ষনিক প্রাথমিক চিকিৎসা জ্ঞান না থাকা। তারপরে, আধুনিক যুগে এসেও আমাদের সমাজে কিছু কুসংস্কার রয়ে গেছে।’ পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘৫ বছরের নীচের শিশুদের সঠিক তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে। ৫ বছরের বেশি বয়সীদের সাঁতার শেখাতে হবে।