মামুন হোসাইনঃ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানা এবং পত্রিকার তথ্য ছাড়াও সমাজে অনেক ধর্ষণের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটার খবর পাওয়া যাচ্ছে। লোকচক্ষুর আড়ালে ঘটা এসব ধর্ষণের খবর মানসম্মানের ভয়ে অনেক নারী গোপন রাখছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এক্ষেত্রে ধর্ষণের এমন ভয়াবহতা থেকে অবুঝ শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধারাও রক্ষা পাচ্ছেন না বলে গুঞ্জন রয়েছে। এমনকি প্রতিবন্ধীরাও ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা বলে কানাঘুষা চলছে।
জানা যায়, নিকটাত্মীয়ের দ্বারাই ধর্ষণের এমন ঘটনা বেশিরভাগ সময় ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে। আর তাই ধর্ষণ ছাড়াও নারী এবং শিশু বিভিন্ন ধরনের যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েই চলছে। তবে এসব বিষয়ে এবার কঠোরভাবে তৎপর হচ্ছে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ।
ফরিদগঞ্জ থানার এক তথ্যে দেখা যায়, গত বছর শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাস ছাড়া বাকী ১১ মাসেই নারী ধর্ষণ এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারী মাসে ধর্ষণ হয়েছে ২ জন, নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২ জন। মার্চ মাসে ধর্ষণ ৩, নির্যাতন ১। এপ্রিল মাসে ধর্ষণ ৪, নির্যাতন ১। মে মাসে ধর্ষণ ২, নির্যাতন ১। জুন মাসে ধর্ষণ ৩, নির্যাতন ২। জুলাই মাসে ধর্ষণ ১, নির্যাতন ৩। আগস্ট মাসে ধর্ষণ ২। সেপ্টম্বর মাসে ধর্ষণ ১, নির্যাতন ৪। অক্টোবর মাসে ধর্ষণ ১, নির্যাতন ২। নভেম্বর মাসে ধর্ষণ ১। ডিসেম্বর মাসে ধর্ষণ ১, নির্যাতন ২।
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় অস্বাভাবীক ভাবে বেড়ে গেছে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা। ফরিদগঞ্জ থানার তথ্য মতে, ১ বছরে ৪২ জন নারী ধর্ষণ এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
গত বছর এ উপজেলায় ঘটে যাওয়া উল্লেযোগ্য কিছু ধর্ষণের ঘটনা মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলো গুপ্টির স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ। ঘটনাটি ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি। উপজেলার ৫নং গুপ্টিতে স্কুল থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে তুলে নিয়ে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা করা হয়। ১১ জানুয়ারি এই মামলায় পুলিশ প্রধান আসামী শিমুলকে (২৪) গ্রেফতার করে।
বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা ও সংগঠক রাবেয়া আক্তার ‘হিলশা নিউজ’-কে বলেন, সবার আগে সমাজ পরিবর্তনে কাজ করতে হবে। পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের চিন্তাধারায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে সব ধরনের নির্যাতনের অবসান হবে। নারী যখন বুঝতে পারবে সে দুর্বল নয়, তখনই ধর্ষণের ঘটনা কমে আসবে। এক্ষেত্রে নারী, পুরুষকে সাথে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল মান্নান ‘হিলশা নিউজ’-কে বলেন, ‘ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধী। ধর্ষণ প্রতিরোধে কিছু কৃষ্টি পরিবর্তণ করতে হবে। সমাজ সংস্কৃতির কিছু কিছু জায়গায় পরিবর্তনে কাজ করতে হবে। আর সবচেয়ে সফল মাধ্যম হলো সাংস্কৃতিক জগত। শুধুমাত্র আইন করেই সব সমস্যার সমাধান করা যায় না। এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ এবং কাজ। এ ক্ষেত্রে নারীদেরকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।’