বিশেষ প্রতিনিধিঃ আধুনিক সভ্যতার এই যুগে যখন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারে ঝুঁকছেন ঠিক তখনই মানুষকে বই পড়ার দিকে আকৃষ্ট করে তুলতে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের নিভৃত এক পল্লীতে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে ৬ হাজারেরও বেশি বই দিয়ে গিয়াস উদ্দিন খান গড়ে তুলেছেন নান্দনিক ‘রাউফেন মজিদ স্মৃতি পাঠাগার’।
১’লা ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার সরজমিনে দেখা যায়, পাঠাগারটিতে বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে আসছে নানা বয়সী যুবক-যুবতী ও শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে পাঠাগারটি এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে।
ফরিদগঞ্জের গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের খাজুরিয়া বাজারের পূর্ব মাথায় এই পাঠাগারটি অবস্থিত। ওই এলাকার আগামী প্রজন্মকে মাদক থেকে বাঁচাতে এবং জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে নিজ উদ্যোগে পাঠাগারটি তৈরি করেছেন রোটারিয়ান গিয়াস উদ্দিন খান। সকলকে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে এবং মানবিক মানুষ গড়ার লক্ষ্যেই তিনি এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে জানান।
জানা যায়, গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের কৃতি সন্তান ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন খান নিজ এলাকার যুব সমাজকে মাদক, ইভটিজিং সহ অপরাধ মূলক কর্মকান্ড থেকে দূরে রাখতে সম্পূর্ণ নিজ খরছে নান্দনিক ভাবে এই পাঠাগারটি তৈরী করেন। ২০১৭ সালে ১৮ শতক জমির উপর এই পাঠাগারটি স্থাপন করেন। প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে পাঠাগারটিতে টেবিল, সেলফ ও আলমিরাতে যেন থরে থরে সোভা পাচ্ছে সাজানো গুছানো নানা ধরনের বই।
পাঠাগারটিতে শোভা পাচ্ছে ইতিহাস, প্রবদ্ধ, সাহিত্য, সংস্কৃতি, গল্প, মুক্তিযুদ্ধ, ছোট গল্প, ইসলামিক জীবনি, খেলাধূলা, শিশুতোষ, ঐতিহ্যসহ প্রায় ৬ হাজারেরও বেশি বই রয়েছে।
পাঠাগারটিতে প্রবেশ করলে এক নজরে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। প্রতিদিন জ্ঞান অর্জনের জন্য সব বয়সীরা ছুটে আসছেন পাঠাগারে। যেখানে একসঙ্গে ৪০-৫০ জন বসে জ্ঞান অর্জন করতে পারছে। যেখানে বইপত্র ও ডেকোরেশনসহ এটি ফুটিয়ে তুলতে প্রায় কোটি টাকার মতো ব্যায় করা হয়েছে।
পাঠাগারটি দেখাশুনার জন্য একজন লাইব্রেরীয়ান ও একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তাদের তত্ত্বাবধানে এটি খোলা থাকে।
পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা রোটারিয়ান গিয়াস উদ্দিন খাঁন ‘হিলশা নিউজ‘-কে বলেন, বর্তমান সময়ে আধুনিক সভ্যতার এই কালে সবাই কেমন বই পড়া থেকে অনেক পিছিয়ে যাচ্ছি। আমি মনে করি জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় মানুষকে মানবিক হিসেবে তৈরী হতে পাঠাগারের বিকল্প নাই। আমাদের সমাজে ছেলেমেয়ের পাঠ্য বইয়ের বাহিরে খুব কমই জ্ঞান রাখে। তাছাড়া মানবিক মানুষ তৈরি হতে হলে তাকে শিল্প সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনা করতে হবে। মানুষ যদি বই পড়ে তার মধ্যে বোধ এবং চেতনা জন্মামে। সে তখন তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হবে।
তিনি ‘হিলশা নিউজ‘-কে আরো বলেন, জ্ঞান চর্চার অভাবে আমাদের সমাজে প্রগতিশীল চিন্তাধারা মানুষের বড়ই অভাব। আগামী সমাজ ব্যবস্থা হবে জ্ঞান নির্ভর। আর এ চিন্তাধারা থেকে আমার প্রত্যন্ত এলাকার ছেলে মেয়েদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে এমন উদ্যোগ নিয়েছি।
পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইডিয়াল সমাজসেবা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক পারভেজ মোশারফ ‘হিলশা নিউজ‘-কে বলেন, একটা ইউনিয়ন পর্যায়ে এতো সুন্দর পাঠাগার পাবো তা কল্পনার বাহিরে। অবসর সময়ে আমরা পাঠাগারে এসে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করছি। আমাদের এ গ্রাম্য অঞ্চলে এত সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করায় গিয়াস উদ্দিন খান সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
হাবিবা আক্তার নামে আরও এক শিক্ষার্থী ‘হিলশা নিউজ‘-কে বলেন, আমি সত্যিই মুগ্ধ এমন একটি পাঠাগার স্থাপন করায়। আমরা প্রতিদিনই কয়েকজন শিক্ষার্থী এখানে আসি বই পড়তে। ইতিহাস, সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধ, খেলা-ধুলাসহ সব ধরনের বই এখানে আছে।
খাজুরিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক লিটন চন্দ্র সাহা ‘হিলশা নিউজ‘-কে বলেন, এটি অনেক মহৎ একটি উদ্যোগ। একটি পাঠাগারের যে ধরনের পরিবেশ থাকা দরকার তার সবগুলোই এখানে বিদ্যমান। পাঠাগারটি সময় উপযোগী সময়ে তৈরি করা হয়েছে। আমি নিজেও অবসর সময়ে পাঠগারে এসে বই পড়ি। আমার শিক্ষার্থীদের পাঠাগারে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছি। এখন পাঠক সংখ্যা কম দেখছি। তবে আগামীতে প্রচার প্রচারণা বাড়লে পাঠকদের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছি।