ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধিঃ চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৮ নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী সাহাপুর মোহাম্মদ চৌধুরী গাজী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় অনিয়ম দূর্নীতি করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সহ-সুপার নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে আরও আগেই থেকেই। যার উপযুক্ত প্রমাণ পেয়ে এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ঐ নিয়োগকে বাতিল ঘোষণা করেছিলেন।
৮ মে সোমবার সরজমিনে গেলে জানা যায় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ক’দিন অত্র মাদ্রাসা এলাকাসহ পুরো ফরিদগঞ্জেই চলছে বিভিন্ন রকম কানা ঘুষা।
এ নিয়ে অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রধান সমন্বয়ক অত্র মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবু তাহেরের বিরুদ্ধে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও অত্র মাদ্রাসার গভর্নিং বডির বিদ্যুৎশাহী সদস্য, এবং সুপারের নিজ সন্তানদের অভিযোগ থাকলেও সেই অভিযোগকে কোন রকম কর্ণপাত না করে অবৈধ নিয়োগকে বৈধ করার জন্য তিনি বর্তমানে বিভিন্ন সংবাদকর্মী ও রাজনৈতিক মহলের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
তথ্যসূথ্যে জানাযায়, গত পহেলা মে সোমবার তড়িগড়ি করে নিয়োগ কার্যক্রম চুড়ান্ত করার সময় অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ বোর্ড ত্যাগ করেন মাদ্রাসার গর্ভনিংবডির সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন আহম্মদ রাজন। এবং নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন রকম প্রশ্নবিদ্ধ হলে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারও কিছুটা মনঃক্ষুন্ন হন।
বিষয়টি সংবাদ কর্মিরা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গেলে অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, এই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে প্রক্সি, এখানে নির্ধারিত ব্যাক্তিকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে নিয়োগ দেওয়ার সকল কার্যক্রম তারা আগেই করে রেখেছে। শুধু ফলাফল ঘোষনার বাকি ছিলো। তাদের অনিয়ম দেখে আমি সেখান থেকে চলে এসেছি। তাদের পরীক্ষায় সর্বোচ্ছ নাম্বার প্রাপ্ত ব্যাক্তি, যে প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছে, সে প্রশ্নপত্র থেকে আমি তাকে প্রশ্ন করলে তিনি একটি প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারেনি।
ঐ দিন সহকারি সুপার পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন, বালিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মোঃ ফজলুল করিম। গোবিন্দপুর দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মোঃ আবদুল কাদির সহ ৫জন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কারী শিক্ষকদের সাথে কথা হলে, এবং বিভিন্ন প্রশ্নের তোপে পড়ে তারা সংবাদ কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হিমশিম খেয়ে পড়েন।
এসময় নিয়োগ বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা বোর্ডের ডিজির প্রতিনিধি, মাদ্রাসা গভর্নিং বডির সভাপতি এমরান মেম্বার ও অত্র মাদ্রাসার সুপারের সিদ্ধান্তে কাঁশারা দাখিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ী প্রধান মাওলানা সালাউদ্দিনকে সহ সুপার হিসেবে চুড়ান্ত করে ফলাফল ঘোষনা করেন। পরীক্ষায় মোট ৭জন আবেদন করলেও ২জন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্যান্য প্রতিদ্বন্ধিরা জানান, আমাদের চিঠি দিয়ে আজকে জাতীয় বন্ধের দিনে নিয়োগ পরীক্ষা হবে বলে জানালে আমরা সকালে পরীক্ষা দিতে আসি। ৩০( ত্রিশ) নাম্বারের লিখিত পরীক্ষায় একজনকে ২৪ নাম্বার, এবং অন্যদের ১৪, ১২, ও ১৩.৫ নাম্বার দেওয়াটা পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াকে সন্দেহাতীত করেছে।
এছাড়া পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা দু তিনজন শিক্ষকের সাথে কথা হলে তাদের অগোছালো কথার ধরনে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে একেবারেই সন্দেহাতীত করেছে। নিয়োগ পরীক্ষায় চুড়ান্ত করা মাওলানা সালাউদ্দিনের কাছে কত নাম্বারে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন জানতে চাইলে এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। কোন পত্রিকায় এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে সেটাও তিনি বলতে পারেন নি।
তিনি শুধু বলেন, আমি বেশী নাম্বার পাওয়ার জন্য বেশি করে লিখেছি। এ সময় বিভিন্ন প্রশ্নে তিনি অগোছালো কথাবার্তা বলেন। কিন্তু মূলত পরীক্ষাটি হয়েছে ৫০ নাম্বারে।
মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি এমরান মেম্বারের সাথে কথা হলে, তিনি প্রথমে নিয়োগ বোর্ডের পরীক্ষার বিভিন্ন অনিয়মের কথা বলে। কয়েক ঘন্টা পরে আবার তার কাছে চূড়ান্ত ভাবে জানতে চাইলে নিয়োগ পরীক্ষা ভালো হয়েছে বলে তিনি জানান। এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, এই নিয়োগ পরীক্ষায় সম্পূর্ণ অনিয়ম করা হয়েছে। এবং বর্তমান এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে নিয়ে এলাকায় হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন সহ সুপারকে নিয়োগ প্রদানে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বাণিজ্য করা হয়েছে। যাহা নিয়ে বর্তমানে এলাকার ছোট বড় সবাই অবগত।
সুপার মাওলানা আবু তাহেরের বড় ছেলে হাফেজ তোহা বলেন, আমার বাবা এই নিয়োগ দুর্নীতির সাথে জড়িত, তিনি এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ৫ লক্ষ টাকার উপরে নিয়েছেন বলে আমার কাছে স্বীকার করেছেন। নিয়োগ প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ করতে এই টাকার এক লাখ করে কয়েকজনকে ৮০ হাজার এবং ৫০ হাজার করে কয়েকজনকে দিতে হয়েছে।
নিয়োগ পরীক্ষার স্হানীয় আলমগীর শেখ এর বাড়িতে ৫০ জনের উপরে ব্যক্তি কে দুপুর খাওয়াইছেন ঐ খরচ প্রার্থীর টাকা। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার পিতার এই দুর্নীতির সঠিক বিচার চাই। এবং অত্র মাদ্রাসায় সঠিকভাবে একজন সহ-সুপার নিয়োগের জন্য উদ্বোধন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবু তাহেরের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি সংবাদ কর্মীদের মেনেজ করার চেষ্টা করেন। এবং আগামীতে সংবাদ কর্মীদের আরো সুযোগ সুবিধা দিবে বলে সংবাদ কর্মীদের মেনেজ করার চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন। নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বৈধ করতে বর্তমানে তিনি এলাকার বিভিন্ন রাজনীতিবিদ ও সংবাদ কর্মীদের সাথে দেন দরবার চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও অত্র মাদ্রাসার গভর্নিং বডির বিদ্যুৎসাহী সদস্য হোসেন আহমদ রাজনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অবৈধ। তবে টাকার কাছে বিক্রি হয়ে স্থানীয় কিছু লোক এই অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়াটিকে বৈধ করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও সংবাদ কর্মীদের কাছে গিয়ে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার একেএম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নিয়োগে কিছু অনিয়মের কথা জানতে পেরে নিয়োগ পরীক্ষাটি স্থগিত করে দেওয়ার জন্য আমি নির্দেশ দিয়েছি। আমাকে স্হানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নিয়োগ স্হগিত করার জন্য বলছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নির্দেশনায় তদন্তের মাধ্যমে সত্য ঘটনা উদঘাটন করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে তিনি জান।
বিষয়টি নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার প্রাণ কৃষ্ণদেবনাথের সাথে কথা হলে, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা তাসলিমুন নেছা জানান বিষয়টি আমি অবগত না,আমি খোঁজ খবর নিয়ে জানাবো।
ফরিদগঞ্জ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য বলেন নিয়োগ পরীক্ষার দিনই অনিয়ম অভিযোগ শুনার পরে, আমি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কে নিয়োগ স্হগিত করার নির্দেশ দিয়েছি,অনিয়ম হলে কোন ছাড় নয়, আপনারা নিউজ করেন, কেন স্হগিত করা হলো না আমি বিষয়টি দেখতেছি।