মামুন হোসাইনঃ ঐ দেখা যায় তাল গাছ ঐ আমাদের গাঁ, ঐখানেতে বাস করে কানাবগীর ছায়- তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে- বইয়ের পাতায় কবিতা থাকলেও বাস্তবে আজ কোন মিল নেই। ফরিদগঞ্জ উপজেলায় কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ বান্ধব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষাকারী তাল গাছ।
বর্তমান সরকার তাল গাছ রোপণের উপর জোর দিলেও এক শ্রেণির মানুষ কাটার মহোৎসবে মেতে উঠেছে। নানা কারণ দেখিয়ে রাস্তার পাশের ও ব্যক্তি মালিকানাধীন তাল গাছ কেটে বিভিন্ন করাতকলে বিক্রি করছে। এ কারণে ঝড়, বৃষ্টি ও বিজলী (বিদ্যুৎস্পৃষ্টের) হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ, পশু-পাখি সহ জীব বৈচিত্র্য।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জানা যায়, ১৪-১৫ বছর আগেও গ্রামের রাস্তা-ঘাট, পুকুরপাড় ও মাঠের মধ্যে সারিসারি তালগাছ ছিল। আষাঢ় মাস আসার আগে থেকেই বাবুই পাখি বাসা বুনতে শুরু করতো। তখন কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত থাকতো পুরো গ্রাম। এখন হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি তালগাছ চোখে পড়ে। এখন আর মুখরিত হয়না কিচির-মিচির শব্দে গ্রামবাংলার জনপদ।
তবে ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পুকুর পাড়ে, পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড নোয়াগাঁও গ্রামের ডাকাতিয়ার নদীর পাড়ে, দক্ষিণ কড়ৈতলী ও সাহাপুর ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তার পাশে, আলোনিয়া গ্রামের পাকা সড়কের পাশে কয়েকটি তালগাছ ও তালগাছে অর্ধশত বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা গেছে। যা একনজর দেখতে পথচারী ও শিক্ষার্থীরা একটু হলেও থমকে দাঁড়ায়।
উপজেলার সন্তোষপুর এলাকার মোঃ সফিকুর রহমান জানান, তিনি একটি ঘর তৈরি করছেন, কিন্তু ঘরের তীর দেওয়ার জন্য পরিপক্ষ তালগাছ মিলছে না। হন্যে হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন এক স-মিল থেকে আরেক স-মিল, এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম। যদিও কাজের উপযোগী ২/১টি গাছ মিলছে, তার দাম আকাশছোঁয়া।
রামপুর এলাকার রফিকুল ইসলাম জানান, ২০-২৫ বছর আগে এসব এলাকায় তাল গাছের কদর ছিলো বেশি।আমরা আমাদের এলাকায় তালের নৌকা বানাতাম। এখন আগের মতো বড় বড় তালগাছ পাওয়া যায় না। বর্তমানে মানুষজন তাল গাছ কেটে ফেলে। কিন্তু নতুন করে কেউ আর রোপণ করে না।
উপজেলার শাশিয়ালী এলাকার কৃষক আহমদ মিয়া বলেন, এ গাছ রোপণ করলে তাতে বেশি জমি দখল করে না তাই জমিও নষ্ট হয় না। কোনো সার ওষুধ ব্যবহার করতে হয় না। কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। রোপণ করার ১০ থেকে ১৫ বছর পরে তাল গাছে ফল ধরে।
তবে কৃষকরা দাবি করেন এ বিষয়ে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা এবং তদারকি থাকলে হয়তো গাছগুলো একটু বেশি করে রোপণ করা হতো।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, যেভাবে তাল গাছ কাটা হচ্ছে, সেভাবে তালগাছ রোপণ করা হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন ও জনবসতি বাড়ায় গ্রামাঞ্চলে বড়বড় গাছপালাসহ জঙ্গল কেটে অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে বাবুই পাখি নিরাপদ আশ্রয়স্থল নষ্ট হচ্ছে। এ গাছ রোপনের ব্যাপারে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি।