সুমন আহমেদ : চাঁদপুরের মতলবে এক সময় খেজুর পাটির ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সময়ের বিবর্তনে এটি এখন বিলুপ্তির পথে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী হাতে বুনন করা খেজুর পাটি এখন আর দেখা যায় না।
জানা গেছে, ৮০-৯০ এর দশকে খেজুর পাটি চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলার সাধারণ মানুষের ঘরে নিত্য প্রয়োজনে ব্যবহার হতো। খেজুর পাটিতে ধান, গম, কলাই, ধনিয়াসহ বিভিন্ন ফসল শুকানোর কাজও করতো অনেকে। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের জীবনমানের পরিবর্তনের সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর পাটি।
মানুষের পারিবারিক ব্যবহার্য উপকরণ ঐতিহ্যবাহী খেজুর পাটির স্থান দখল করে নিয়েছে আধুনিক শীতলপাটি, নলপাটি, পেপসি পাটি, চট-কার্পেট, মোটা পলিথিনসহ বিভিন্ন উপকরণ। ফলে চাহিদা কমার পাশাপাশি হারিয়ে গেছে খেজুর পাটির কদর।
খেজুর পাটি বুনন ও চাহিদা কমলেও চাঁদপুরের ৮ উপজেলার কিছু কিছু গ্রামে নারীরা অবসর সময়ে এখনও খেজুর পাটি বুননে ব্যস্ত থাকেন। তবে এ সংখ্যা একেবারেই কম।
মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নের সটাকী গ্রামের মালেক মোল্লার স্ত্রী খালেদা বেগমকে খেজুর পাটি বুনতে দেখা যায়। খালেদা বেগম (৫৪) বলেন, ছোট থেকেই মা-খালা-চাচিদের খেজুরের পাটি বুনতে দেখেছি। সেই থেকে শেখা। নিজেদের পরিবারের জন্য দীর্ঘদিন খেজুরের পাটি বুনে থাকি।
তিনি আরও বলেন, আগের মতো এখন খেজুর গাছও নেই, খেজুরের পাতাও তেমন পাওয়া যায় না। ফলে খেজুর পাটিও বিলুপ্ত হতে চলেছে।
কলাকান্দা ইউনিয়নের হানিরপার গ্রামের গৃহবধূ শিখা রানী, চায়না বিশ্বাস, শেফালী কর্মকার জানান, আগেরকার দিনে খেজুর গাছ ও পাতা পাওয়া যেতো। সকালে-বিকালে গৃহস্থালির কাজের ফাঁকে ফাঁকে বাড়ির মেয়ে-বউরা খেজুরের পাটি বুনতো আর নানা গল্প গুজব করতো। এখন আধুনিক যুগ তাই সব কিছু আধুনিক হয়েছে। টাকা হলে সবকিছুই রেডিমেড পাওয়া যায়। এ কারণে গৃহবধূরাও পরিশ্রম করতে চায় না। সবকিছু পরিবর্তনের সঙ্গে খেজুরের পাটি বুনন করাও বন্ধ হয়ে গেছে। বলা যায়, এ ঐতিহ্য গ্রাম বাংলা থেকে প্রায় বিলুপ্তির পথে।
দূর্গাপুর ইউনিয়নের সুবর্ণা রাণী, আসমা আক্তার, মনিতারা বিশ্বাস, নাজনিন সুলতানা বলেন, একসময় গ্রামের প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে বিকাল বেলা গৃহবধূদের খেজুরের পাটি বুনতে দেখা যেতো। কেউ বানাতো চিকন পাটি, কেউ মোটা পাটি আবার কেউ দুটোই বানাতো। এখন আর এ দৃশ্য চোখে পড়ে না।
জাতীয় মানবাধিকার সমিতি মতলব উত্তর উপজেলা শাখা,র সাধারণ সম্পাদক কবি নুর মোহাম্মদ খান বলেন, খেজুর পাটি এখন আর চোখে পড়ে না। বলা চলে এটা যেন একেবারেই বিলুপ্তির পথে। তবে মতলব উত্তরের কয়েকটি স্থানে অল্প কিছু মানুষ খেজুরের পাটি বানায়।
এ ব্যাপারে দৈনিক প্রিয় চাঁদপুর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, আগেরকার দিনে গ্রামাঞ্চলে খেজুরের শুখনো পাতা দিয়ে পাটি তৈরি হতো। প্রায় বাড়িতে এ পাটি দেখা যেতো। এখন এ পাটির স্থান দখল করেছে প্লাস্টিকের পাটি, পলিথিনসহ আধুনিক জিনিসপত্র। এছাড়া খেজুর গাছের সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। তাই খেজুরের পাটিও প্রায় বিলুপ্তির পথে।
চাঁদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন, জেলায় উল্লেখযোগ্য হারে খেজুর গাছের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ফলে বিলুপ্তি পথে খেজুরের পাটিও।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সভা, সমাবেশ, সেমিনারে, খেজুর গাছ রোপণের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ গাছ রোপণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করাসহ প্রচারণা করা হয়ে থাকে।