... বিস্তারিত
মতলবে সন্তান প্রসবের ১৫ দিনের মাথায় যৌতুকের দাবীতে স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ
অমরেশ দত্ত জয়/সজল চন্দ্র দাসঃ চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণের পৌর ৩নং ওয়ার্ডে সন্তান প্রসবের ১৫ দিনের মাথায় যৌতুকের দাবী এবং সামাজিকভাবে বিভিন্ন কুৎসা রটিয়ে স্বামী, শশুড় ও শাশুড়ী কর্তৃক তাদের গৃৃহবধূ স্ত্রীকে মারধর করে জখম করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০শে অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগে জানানো হয়।
এ বিষয়টি এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে একটি পক্ষ উঠেপড়ে লেগেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। পরে যৌতুকের দাবী এবং সামাজিক কুৎসা রটানো স্ত্রীকে মারধর করা সেই স্বামী ও তার মা এবং বাবা এলাকাবাসীর চাপের মুখে মূমুর্ষ অবস্থায় ওই গৃহবধূকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বাধ্য হয়।
এদিকে আহত গৃহবধুর অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণ ও অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত তাকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে রেফার করে পূর্বের হাসপাতালের চিকিৎসকগণ। খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা হাসপাতালে ছুটে যায় এবং ঘটনার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়।
জানা যায়, হাসপাতালের গাইনী বিভাগে ভর্তি আহত ওই গৃহবধূর নাম সঞ্চিতা রানী দাস(২২)।তার পিতার নাম স্বপন চন্দ্র দাস এবং মাতা অঞ্জনা রানী দাস। তার পৈত্রিক ভূমি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ৪নং মহিচাইল ইউনিয়নে।
ঘটনা প্রসঙ্গে আহত গৃহবধূ সঞ্চিতা রানী দাস গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, সামাজিকভাবে প্রায় ৩ বছর পূর্বে ২০১৮ সালে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় আমার বাবা সাধ্যমতো আমার স্বামী আর তার পরিবারের চাহিদামতো তাদের কে মোটা দাগে টাকা ও স্বর্ণালংকার দিয়েছে। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকে আমার স্বামী ও তার মা-বাবা আমাকে আমার বাবার থেকে আরো টাকা-পয়সা এনে দিতে মানসিক চাপ দিতে থাকে। আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমার বাবার কাছ থেকে যখন যা পেরেছি বিভিন্ন সময়ে এনে দিয়েছি। কিন্তু এতে আমার স্বামী ও তার মা বাবার যৌতুকের চাহিদার লালসা যেনো আরো বেড়ে গেছে।
হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে ওই গৃহবধূ সঞ্চিতা রানী দাস গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, আমার একটি কন্যা সন্তান হয়েছে। যার বয়স মাত্র ১৫ দিন। আর এ অবস্থায় সকালে অহেতুক কারন তুলে আমার স্বামী আমাকে বলে বাবার কাছ থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার যৌতুক এনে দিতাম। আমি তার এ অপ্রাসঙ্গিক যৌতুকের দাবীটি পূরণ করতে অস্বীকৃতি জানাই। আর এরপরই আমার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী আমাকে গালাগাল দিতে দিতে আমার দু-হাত ও মুখ চেপে ধরে। আর আমার স্বামী তাদের সহযোগিতায় আমাকে ইচ্ছেমতো কিল-ঘুষি ও বেধরক মেরে রক্তাক্ত করে অজ্ঞান করে ফেলে। পরে স্থানীয়দের চাপের মুখে আমাকে দ্রুত হাসপাতালে এনে ভর্তি করে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশা করছি।
খবর নিয়ে জানা যায়, ওই গৃহবধূর থেকে যৌতুক দাবী করে মারধর করা স্বামীর নাম মিঠুন চন্দ্র দাস(২৭)। তার পিতা অর্থাৎ গৃহবধূর শশুড় হচ্ছেন মতলব দক্ষিণ পৌর ৩নং ওয়ার্ডের কলাদী মহল্লার পহ্লাদ চন্দ্র দাস এবং শাশুড়ী (মাতা) পুষ্প রানী দাস।
এদিকে এ ঘটনার সুঠু বিচার প্রত্যাশা করে গৃহবধূ সঞ্চিতা রানী দাসের মা অঞ্জনা রানী দাস এবং পিতা স্বপন চন্দ্র দাস গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, আমাদের মেয়ে মাত্র ১৫ দিন আগে সন্তান প্রসব করলো। এ মূহুর্তে ওর অনেক বিশ্রাম প্রয়োজন। অথছ ওর ওপর ওই পাষন্ড স্বামী আর শ্বশুর শ্বাশুড়ী যেই অমানুষিক নির্যাতন চালালো। আমরা এই নৃশংস ঘটনার সঠিক বিচার প্রত্যাশা করছি। মেয়েটার যথেষ্ট রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা প্রশাসন ও সুধীমহলের সুনজর চেয়ে বিচার কামনা করছি।
এ ঘটনা প্রসঙ্গে গৃহবধূর মামা মতলব উত্তর নিশ্চিন্তপুরের পলক কুমার দাস গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, দু-দিন পর পর যৌতুক চেয়ে আমার ভাগনিকে মারধর করে ওর পাষন্ড স্বামী তার শশুড়-শাশুড়ী। এখন আমার ভাগ্নি মূমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি জেনে আমরা দেখতে ছুটে এসেছি। আমরা এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
এদিকে অভিযোগের ব্যপারে কথা বলতে গৃহবধুর স্বামী বা তার শশুড়-শাশুড়ী কাউকে তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া না যাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
এ ছাড়াও মতলব দক্ষিণ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কিশোর ঘোষকে বিষয়টি তার মুঠোফোনের (০১৭২০৯২০৭৬৩) এই নাম্বারে বরং বার কল করে রাতে অবহিত করার চেষ্টা করলেও তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে ঘটনাটি মতলব দক্ষিণ থানার ওসি স্বপন কুমার আইচ কে মুঠোফোনে অবহিত করলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, যৌতুকের বিরুদ্ধে মতলব দক্ষিণ থানা পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে ওই গৃহবধূ বা তা পরিবারের পক্ষ থেকে থানা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া মাত্রই আইনগত সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
