সুমন আহমেদ :মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নিয়মিত জুয়ার জমজমাট আসর বসছে। কৃষক, শ্রমিক, বিভিন্ন পেশাজীবীসহ উঠতি বয়সের যুবকরা এতে সামিল হচ্ছে। জুয়ার আসরের পার্শেই দেদাড়ছে বিক্রি হচ্ছে মাদক। সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত সটাকী, বাবু বাজার, দশানী, মোহনপুর, এখলাছপুর, ছেংগারচরসহ বিভিন্ন গ্রামে জুয়ার আসরে উড়ছে হাজার হাজার টাকা।
মাদকের মতোই জুয়ার ছোবলে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে অনেকে। জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে চলছে পারিবারিক কলহ। উঠতি বয়সী যুবক বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিয়ে যত উদ্বেগ অভিভাবকদের। জুয়া বন্ধে পুলিশের তৎপরতা না থাকায় দিন দিন সমাজে এ ক্ষতিকর কর্মের প্রবণতা বেড়েই চলেছে।স্থানীয়দের অভিযোগ, কতিপয় রাজনৈতিক নেতা, জুয়ার আসর থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা নিয়ে থাকে। ফলে জুয়া খেলা বন্ধ হচ্ছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দশানী নদীর পাড়ে জুয়া খেলা হচ্ছে। নদীর আশপাশে বিভিন্ন বাড়িতে নিয়মিত জুয়ার আসর বসছে। সটাকী বাজার ও কালির বাজারের কয়েকটি দোকানে দীর্ঘদিন ধরে চলছে জুয়া। ছালাম মিয়ার বাড়ি ও আশেপাশের বাগানে জুয়া খেলা হয় রীতিমতো। এ ছাড়া, ইমামপুর, হানিরপার, পালালোকদিসহ সব এলাকাতেই কম বেশি জুয়া খেলা হয়। আর এ জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে প্রায়ই ঘটছে সহিংস ঘটনা।স্থানীয় একাধিক সুত্রে জানা গেছ, ছেংগারচর বাজার আশে পাশের এলাকায় ৮ থেকে ১০ টি পয়েন্টে বসে নিয়মিত জুয়া ও মাদকের আসর।
সুত্র মতে, বাবু বাজার এলাকায় সন্ধা থেকেই মধ্যরাত পর্যন্ত চলে জুয়া খেলার আসর। ইয়াবা সম্রাট জনির বাড়িতে বসে জমজমাট জুয়া ও মাদকের আসর। ওই দুটি স্থানে চলে জুয়া খেলা এছাড়াও সাদুল্লাপুর আশ্রয়ন প্রকল্প ও দূর্গাপুর আশ্রয়ন প্রকল্পে চলে মাদক বিক্রি ও ইয়াবা সেবনের আসর এবং কয়েকটি স্থানেও বসে জুয়ার আসর। অন্যদিকে আশ্রয়ন প্রকল্প গুলো এখন মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত এবং কোথাও সকাল থেকেই রাত অবদি চলে জুয়ার আসর এবং জুয়ার আসরেই চলে মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবন। প্রকাশ্যে জুয়া মাদকের অবাধ বিস্তার থাকায় এলাকার পরিবেশে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরির ঘটনা, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে গ্রামের সচেতন মানুষ। এলাকার প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক মতাদর্শের হওয়ায় ভয়ে কিছুই বলার সাহস পাচ্ছেনা বলেও জানায় স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দশানী গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন, কিছুদিন আগে রাতের আধারে এই এলাকা থেকে চিহ্নিত ৫ থেকে ৬ জন জুয়ারিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় মতলব উত্তর থানা পুলিশ, পরর্বতীতে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়, ২২ দিনের মত জেলে থেকে জামিনে এসে, আবার ও জুয়া খেলার আসর বসায় সেই জুয়ারিরা এলাকায় ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনাও ঘটেছে।
কয়েকটি গরু, খাসি, মুরগি, সাইকেল, ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা, চার্জার ভ্যানের বেটারি চুরির ঘটনাও ঘটেছে।স্থানীয়দের অভিযোগ, এই জুয়ারিরা মাদক ও জুয়া খেলার টাকা যোগান দেওয়ার জন্য এসব চুরি করে বেড়ায়।
তারা বলেন, আসে পাশে জুয়া খেলা মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনের ফলে প্রায় প্রতি রাতেই চলছে ছোট বড় এসব চুরির ঘটনা। এদের জন্য কিছুই নিরাপদ নয়। এব্যপারে এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যানকে বিচার দিয়েও কোন লাভ হয়নি।সচেতন মহল জানান, এখন জুয়া গোপনে খেলতে হয় না প্রকাশ্যেই জুয়ার আসর বসায় জুয়াড়িরা সাথে মাদকের আসরও বসে। ফলে ওই এলাকায় অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।তাদের অভিযোগ, জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান একেবারে নগণ্য। তাই জুয়া খেলা বন্ধ হচ্ছে না।
জুয়ায় হেরে গিয়ে ক্ষতি পোষাতে এবং আবার নতুন করে জুয়া খেলতে টাকা জোগাড়ের জন্য জুয়াড়িরা ডাকাতি, চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এলাকাবাসী জানায়, জুয়া বন্ধ হলে চুরি-ডাকাতিসহ সব অপরাধ কমে আসবে।
মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মহিউদ্দিন জানান, জুয়া একটি সামাজিক ব্যাধি। জুয়ার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। তবে এ ব্যাধি থেকে তরুণ সমাজকে মুক্ত করতে পুলিশি অভিযানের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন। উক্ত পয়েন্ট গুলোতেও অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।