সুমন আহমেদ : চাঁদপুরের মতলব উত্তরের মেঘনা নদী ও মেঘনা ধনাগোধা শাখা নদীতে এখন মাছের ভরা মৌসুম হলেও মাছ নেই। ভরা মৌসুমেও মেঘনায় যেন মাছের খরা চলছে। আগে যে পরিমান মাছ জালে ধরা পড়তো এখন তার সামান্যতম পরিমাণও ধরা পড়ে না।
কয়েকবছর আগেও পাঁচ-সাতজন জেলে নৌকাপ্রতি তিন-চার হাজার টাকার মাছ ধরতো। এখন জেলেরা সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টানাজাল,খরা জাল, বেড়জাল পানিতে ফেলে দেড়-দুই হাজার টাকার মাছও পায় না।
এখন মেঘনা নদী ও মেঘনা ধনাগোধা নদীর মাছ দিয়ে পরিবারের ভরণ পোষণ করানো অনেক জেলের জন্য এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত জেলেরা নদীতে জাল ফেলতেই থাকে কিন্তু আশানুরূপ মাছ জালে ধরা পড়ে না।
উপজেলার প্রায় ৬ হাজার জেলে মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে। তাদের পেশা নদীতে মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করা। আর তারা সবাই এই মেঘনা নদীতেই মাছ ধরে। কিন্তু এখন নদীতে মাছ ধরে পরিবারের ভরণ-পোষণ করা যেন অসম্ভব হয়ে পরেছে।
উপজেলার দশআনী গ্রামের জেলে আলাউদ্দিন বেপারী বলেন দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে মেঘনা নদীতে মাছ ধর আসছি। কিন্তু এখন আার আগের মতো মাছ পাইনা। বাপ-দাদার পেশা ছাড়তেও পারি না! বাঁচাও কষ্টের।
আরেক জেলে বাদশা মিয়া বলেন, আগে বর্ষার সময় সন্ধ্যা রাত থেকে সকাল পর্যন্ত নদীতে জাল বাইস করলে নৌকায় বোয়াল, চিতল, কালি বাউস,গাউড়া, পুটি, বাইল্লা, চিতলসহ আরো অনেক জাতের মাছে ভইরা যাইতো। কিন্তু এখন সারারাত নদীতে জাল বাইস কইরাও শুধু কাজলি, বাছা আর গুইড়া ইছা ছাড়া আর কিছুই ধরা পড়ে না।
মেঘনা নদীতে মাছ ধরে মাছের আড়তে বিক্রি করেন নুরুল হক ও জুয়েল। তারা জানান, আগে নদীতে থেকে মাছ ধরে মতলবের বিভিন্ন আড়তে এক-দুই মণ মাছ বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন সারারাত মাছ ধরে ৫-৬ কেজিও বিক্রি করতে পারি না। তবে আগে মাছ বেশি ধরলেও তেমন দাম পেতাম না। কিন্তু এখন মাছের দাম ভাল হওয়াতে কম ধরলেও কিছুটা পুষে যায়।
মাছ বিক্রেতা আল আমিন বলেন, মাছ পানিতে থাকবো কিভাবে। নদীতে, বিলে, হাওরে পানিতে কোন মাছ ছাড়া হয় না। আর কারেন্ট জালের কারণে ছোট থাকতেই মাছগুলো ধরা পরে। তাই দিনে দিনে দেশিয় মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে। আমরা ভাল মাছ কিনতে পারি না। তাই ক্রেতাদের কাছেও বিক্রি করতে পারি না।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম জানান, কিছু অসাধু জেলে আছে যারা অবাধে খরা জালসহ বিভিন্ন জাল দিয়ে মাছ নিধন করে। সময় না বুঝে ডিমওয়ালা মাছ ও ছোট মাছ নিধন করার কারণেই নদীতে মাছ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তাছাড়া দিন দিন নদী ও খালগুলো অবাধে ভরাট করা হচ্ছে। আমরা মৎস্য অধিদফতরের আওতায় প্রতি বছরই নদীতে ও উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ বৃদ্ধির জন্য পোনা অবমুক্ত করে থাকি।