সুমন আহমেদ : চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করার পরে ও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। একই ব্যক্তি তিন পদে থেকে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম করে ইউনিয়ন পরিষদে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে চলছেন। বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে তিনি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম মোহনের অনুসারী হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ সহ একাই এসব কাজ করে যাচ্ছেন।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মাইন উদ্দিন মোল্লা। এছাড়া তিনি একই ইউপি’র উদ্যোক্তা ও আড়ং বাজার পোস্ট অফিসে পোস্ট মাস্টার হিসাবে কর্মরত আছেন। একই ব্যক্তি তিনটি পদে কিভাবে থাকে প্রশ্ন জেগে ওঠে ঐ ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের মনে। ইউপি সদস্য ও পোস্ট মাস্টার হিসাবে দুটি পদেই সরকারের রাজস্ব থেকে মাসিক সম্মানী ( বেতনভোগী) ভাতা ভোগ করে থাকেন।
মাইন উদ্দিন মোল্লার তিনটি পদে থাকার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায় ঐ ইউনিয়নের সচিব মোঃ আঃ ওয়াদুদ সরদারের কাছ থেকে। তিনি স্বীকার করেন তিনটি পদে মাইন উদ্দিন মোল্লার থাকার বিষয়ে। কিভাবে তিনটি পদে আছে জানতে চাইলে ইউপি সচিব তা এড়িয়ে যান।
তিনটি পদে থাকার সত্যতা জানতে ইউপি সদস্য মাইন উদ্দিন মোল্লাকে ফোন দিলে তা স্বীকার করেন।
উল্লেখিত তিনটি পদে একই ব্যক্তি থাকতে পারে কিনা জানতে মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেনু দাস বলেন, এটার বিষয়ে আমার আইন দেখে বলতে পারব।
এদিকে উপাদী উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং মেম্বার মাউন উদ্দিন মোল্লার বিষয়ে গত ১৬ মার্চ তারিখে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও ১৫ মার্চ তারিখে মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন একই পরিষদের ১নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ ইউসুফ হাজরা, ২নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ আল মামুন, ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ কামাল গাজী ও ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ মামুন মিয়াজী। তারা লিখিত আবেদনে ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার মাইন উদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে একাধিক পদে থেকে সরকারের সুবিধা ভোগ করার বিষয় উল্লেখ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন।
উপাদী উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ জন ইউপি মেম্বারের লিখিত অভিযোগে বলেন, আমাদের ০৬নং ওয়ার্ড মেম্বার মাইনুদ্দিন মোল্লা ইউনিয়ন পরিষদের একাধারে মেম্বার, পোষ্ট মাষ্টার, উদ্যোক্তা পরিষদের হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের কার্যপরিচালনায় অনেক বেঘ্যাত ঘটে। যা ইতিপূর্বে হতদরিদ্র বিনামুল্যের ১৫ টাকা কেজি চাউলের অনলাইন বাবদ ৮৫০জন থেকে ১০০ টাকা নেওয়া হয়। যাতে আমাদের ইউনিয়নের সাধারন মানুষের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং বিভিন্ন পত্রিকায় ফুটে উঠেছে। ৮৫০জন থেকে ১০০ জনের নাম বাদ পরে। উদ্যোক্তা মাইনউদ্দিন মেম্বার ১৬০ জনের নাম উপজেলায় না দিয়ে তার ব্যক্তিগত ১৪জনের নাম উপজেলায় পাঠায় এরা কারা কেউ জানে না।
তারা আরও বলেন, ১৬০ জন প্রাপ্য কার্ড ধারী অনলাইন যুক্ত হত দরিদ্র মানুষের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে ইউনিয়ন পরিষদ। শুধু তাই নয় ২০২৩-২০২৪ সালের বিজিডি কার্ডের পরিষদের অনলাইন কপি শতশত অনিয়মের কারনে প্রাপ্য অনলাইন যুক্ত নাম অনেক বাদ পরে। পোষ্টমাষ্টার বেতন ভাতা নেয় কিন্তু একদিন ও পোষ্ট অফিসে বসে না। না বসেই বেতন ভোগ করছে। একজন ইউপি সদস্য পরিষদের উদ্যোক্তা হওয়ায় তার ও চেয়ারম্যানের ( একই ওয়ার্ড) ৬নং ওয়ার্ড অধিকাংশ সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দ রেখে বাকি সকল ওয়ার্ড মেম্বার ও জনগনকে মূল্যায়ন না করে নিজে ব্যক্তিগত উদ্যোতা ক্ষমতায় বছরের পর বছর অনিয়ম করে যাচ্ছে। অসহায় বাকি মেম্বারগন চেয়ারম্যান সাহেবকে একাধিক বার বলার পরেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তাই নিরুপায় হয়ে আপনার কাছে আমাদের দাবি মাইনুদ্দিন মেম্বারকে উদ্যোক্তা থেকে সরিয়ে নতুন উদ্যোক্তা দেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইউপি সদস্য বলেন তিনি একজন প্রভাবশালী ( পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর লোক) এর প্রভাবে এক ব্যক্তি তিনটি পদ দখল করে নিজের ইচ্ছে মত যা মন চায় করে যাচ্ছেন। আবার এসব বিষয়ে কথা বললে তিনি নিজেকে একজন সাংবাদিক হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করেন।
তবে এলাকাবাসী জানান, তিনি বর্তমান পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম মোহনের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনটি পদ দখল ছাড়া ও প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন ধরনের বাড়তি সুবিধা নিতে ইউনিয়ন পরিষদে খবরদারী করে থাকেন।
ইউপি সদস্যের পাশাপাশি একই ইউনিয়নের উদ্যোক্তা এবং আড়ং বাজার পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার হিসাবে মোট তিনটি পদে দায়িত্ব পালন করার এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবী জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সঠিক তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।