চয়ন ঘোষঃ চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের মন্দিরে শত শত ভক্তবৃন্দের উপস্থিতিতে প্রথম রথযাত্রা সম্পন্ন হয়েছে।
২০শে জুন ২০২৩, ৪ঠা আষাঢ় ১৪৩০ বাংলা রোজ মঙ্গলবার বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে মন্দির প্রাঙ্গণে কঠোর নিরাপত্তা ও শান্তি শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে শত শত ভক্তের সহযোগিতায় প্রথম রথযাত্রা সম্পন্ন হয়।
রথযাত্রার বিশ্লেষণ- পদ্মপুরাণ এর বর্ণনায় পাওয়া যায় এই রাজার হাত ধরে রথযাত্রার ইতিহাস। তখন সত্যযুগ, মালবদেশ এর রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ছিলেন শ্রী হরি তথা বিষ্ণু ভক্ত। তিনি গড়ে তুলেছিলেন জগন্নাথধাম তথা শ্রীক্ষেত্র নামের পবিত্র মন্দির। কিন্তু মন্দিরে ছিলো না কোনো বিগ্রহ।একদিন এক সন্যাসীর আগমন ঘটে রাজপ্রাসাদে। রাজার সেবা যত্নে তুষ্ট হয়ে তাকে বললেন নীলমাধব ( ভগবান বিষ্ণুর আরেক রুপ) এর গুপ্তভাবে শবরদের মাধ্যমে পূজিত হবার কথা। নীল পর্বতের ধারেই ছিলো শবরদের বসবাস। সন্যাসীর কথা শুনে নীলমাধবের দর্শণের জন্য ব্যাকূল হয়ে গেলেন রাজা। তখন সে ডেকে পাঠালেন তার পুরোহিতের ভাই বিদ্যাপতি কে এবং শবরদের দেশে গিয়ে খুজে আনতে বললেন নীলমাধবের মূর্তী কে।
রাজার আদেশ অনুযায়ী বিদ্যাপতি গেলেন শবররাজ বিশ্ববসুর নিকট। সেখানে একবার জঙ্গলের মাঝে বিদ্যাপতি পথ ভুলে যায় ।তখন তাকে উদ্ধার করেন বিশ্ববসুর কন্যা ললিতা। যা হবার তাই হলো , বিদ্যাপতি ললিতার প্রেমে পরে গেল । এরপর রাজা দুজনের বিয়ে দিয়ে দিলেন। কিন্তু বিদ্যাপতির মাথার মধ্যে নীলমাধবের দর্শনের চিন্তা সে প্রথম থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছিলো। সে অনেক বলে কয়ে ললিতা কে রাজি করালো নীলমাধবের দর্শন করানোর জন্য ।কিন্তু ললিতার শর্ত ছিলো যে তিনি বিদ্যাপতিকে চোখ বেঁধে নিয়ে যাবেন। বিদ্যাপতি গেলেন চোখ বেধে কিন্তু সাথে করে নিয়ে গেলেন যব এর দানা।
যাবার পথে ললিতার অগোচরে তিনি সেই দানা পথে ফেলতে ফেলতে ফেলেন চিহ্ন হিসেবে। নীল পর্বতে গিয়ে নীলমাধবের দর্শন পেয়ে বিদ্যাপতি ধন্য হলেন। এর পরে তিনি খবর পাঠালেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের কাছে। রাজা তার রথ , সৈ্ন্য নিয়ে এলেন নীলমাধবকে নিয়ে যেতে। কিন্তু শ্রীহরির লীলা বোঝা বড় দায়। রাজা পৌছে গিয়ে দেখলেন যে মন্দিরে নীলমাধবের বিগ্রহ নেই। যদিও এ নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে কোথায় বলা হয় নীল মাধবে নীজে থেকেই লীন হয়ে যান, আবার কেউ বলে থাকেন যে শবরেরা নীলমাধবের বিগ্রহ লুকিয়ে রেখে দেয়। এতদূরে এসেও নীলমাধবের দেখা না পেয়ে ইন্দ্রদ্যুম্ন হতাশ হয়ে পরেন এবং সিদ্ধান্ত নেন এ জীবন সে রাখবে না। ঠিক এই সময় আকাশ থেকে দৈববাণী শোনা যায়-
“সমুদ্রের জলে ভেসে আসবে দারুব্রহ্ম কাষ্ঠ, সেই কাষ্ঠখণ্ড থেকেই তৈরি হবে বিগ্রহ” (অর্থাৎ নীলমাধবের বিগ্রহ)।
জগন্নাথ মন্দিরে প্রান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রজাপতি ব্রহ্মা। রথ যাত্রার ইতিহাস সম্পর্কে এইটাই গল্প।
জগন্নাথের প্রধান উত্সব হল রথযাত্রা। পুরাণ অনুসারে বলা হয়- আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম সুদর্শনচক্র রথে চড়ে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের পত্নী গুণ্ডিচার বাড়ি যেটাকে বলা হয় জগন্নাথের ‘মাসির বাড়ি’ এবং সাত দিন পরে সেখান থেকে আবার নিজের মন্দিরে ফিরে আসেন। রথে চড়ে ওই গমন ও প্রত্যাগমনকে (সোজা)রথ ও (উল্টো)রথ বলা হয়।
‘রথযাত্রা’ আবার পতিতপাবনযাত্রা, নবযাত্রা, গুণ্ডিচাযাত্রা, মহাবেদীযাত্রা, নন্দীঘোষযাত্রা নামেও পরিচিত।
আসছে, ২৮শে জুন ২০২৩, ১২ই আষাঢ় ১৪৩০ বাংলা রোজ বুধবার ২য় রথযাত্রা বা উল্টোরথের শুভ দিন দিন ধার্য করা হয়েছে।
প্রথম রথযাত্রা পর্বে শত শত ভক্তবৃন্দের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন, মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ সাইদুল ইসলাম সহ আইন-শৃঙ্খলাবাহীনীর সদস্যবৃন্দ।
শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেব মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক চন্দন সাহা বলেন, আজ মন্দির প্রাঙ্গণে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের প্রথম রথযাত্রা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। দূরাগত বহু ভক্তবৃন্দের আগমনে মন্দির প্রাঙ্গণ কানায় কানায় পূর্ণতা লাভ করে, যা ছিল চোখে পরার মত। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রভু জগন্নাথ প্রেমী সকল ভক্তবৃন্দের সহযোগিতায় রশি টানার মাধ্যমে প্রথম রথযাত্রার পর্ব শেষ হয়। আমরা শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের প্রথম যাত্রা উপলক্ষে অনেক আনন্দিত। উল্টোরথ পর্বে আপনাদের স্ব-বান্ধব উপস্থিতি ও সহযোগিতা পুনরায় একান্তভাবে কামনা করছি।