মতলব দক্ষিণ সংবাদদাতাঃ চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার তেলিমাছুয়াখাল গ্রামে ফোরকানিয়া মাদরাসার নামে দান করা সম্পত্তির উপর নিষেধাজ্ঞার মামলা করে মাদরাসার উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্থ করার অভিযোগ উঠেছে জমি দাতার একাংশের ওয়ারিশ আবুল খায়ের বকাউল গংদের বিরুদ্ধে।
গত ১৬/০৩/২০২৩ তারিখে বাদী হয়ে বিজ্ঞ মতলব সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, চাঁদপুর-এ দান করা সম্পত্তির উপর নিষেধাজ্ঞা মামলা করে উন্নয়ন কাজে বাধা দেন ভূমি দাতার নাতি মো. আবুল খায়ের বকাউল গং। যার মামলা নং ১৫১/২০২৩। এ মামলার ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, উপজেলার ১৯০নং তেলি মাছুয়াখাল মৌজার সিএস ১১৯ নং খতিয়ানে হাল জরিপি ৪নং খতিয়ানে সাবেক ২৮৭ নং দাগ হাল ১০০৭ নং দাগে মরহুম বিলাত হোসেন বকাউল নিজ দখলীয় বৈধ ভূমি থেকে ৩৩ শতাংশ ভুমি তেলি মাছুয়াখাল দিঘিরপাড় মাদরাসার নামে দান করে যান। যা বাংলাদেশ জরিপে ৪নং খতিয়ানে ১০০৭ দাগে তেলী মাছুয়াখাল দিঘিরপাড় মাদরাসা কমিটির পক্ষে সেক্রেটারী নামে রেকর্ড ভুক্ত হয়। উক্ত ভূমির নি¤œাংশ মাদরাসার প্রয়োজনে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এলাকাবাসীর পরামর্শে বালু দিয়ে ভরাট করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। তখন ভূমি দাতা মরহুম বিলাত হোসেন এর ওয়ারিশ (নাতি) মো. আবুল খায়ের বকাউল গং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মাদরাসার চলমান কাজকে বিলম্বিত করা এবং এলাকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কোরআন শিক্ষায় ব্যাঘাত সৃষ্টির করার জন্য বিজ্ঞ মতলব সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, চাঁদপুর-এ একটি মামলা দায়ের করেন। ফলে ব্যহত হচ্ছে মাদরাসার স্বাভাবিক উন্নয়ন কাজ।
সরেজমিনে গিয়ে দান করা ভূমির উপর মামলা করার বিষয়ে জানতে চাইলে ভূমি দাতার ওয়ারিশ মো. আবুল খায়ের বকাউল গং বলেন, আমার দাদা মাদরাসার নামে জমি দান করে গেছেন। আমরা এই জায়গা জবরদখল করার ইচ্ছে নেই। তাছাড়া আমাদের পৈতিৃক সম্পত্তির সঠিক হিসেব পাচ্ছি না। তাই মামলা করেছি। আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তির সঠিক হিসেব পেলে মাদরাসার কাজে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না। আবুল খায়ের আরও বলেন, তৎকালীন জাতীয় সংসদ সদস্য মো. আলম খান মাদরাসার উন্নয়নের জন্য ঢেউটিন ও আর্থিক বরাদ্দ দিয়েছিলেন। যা মাদরাসার উন্নয়নে ব্যবহারের পর অতিরিক্ত টাকা আমিসহ তৎকালীন শিক্ষকদের বেতন বাবদ ব্যয় করা হয়েছিল।
এদিকে মামলার বাদী মামলার আরজিতে উল্লেখ করেছেন নালিশী ভূমিতে বসত ঘর, রান্না ঘর, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। তবে সরেজমিনে গিয়ে মামলার আরজির সাথে কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, আবুল খায়ের বকাউল গং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তেলি মাছুয়াখাল ফোরকানিয়া মাদরাসার কাজে বাধা প্রদান করতেছে। এরা নিজেরাই দিঘির উত্তর পাড় অতিরিক্তি সম্পত্তি ভোগদখল করতেছেন। আর দিঘির দক্ষিণ পাড় মাদরাসা এবং এখানকার সম্পত্তির মূল্য বেশি হওয়ায় এখন বিভিন্ন অজুহাত সৃষ্টি করতেছে।
তেলি মাছুয়াখাল ফোরকানিয়া মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতিমো. মোজাম্মেল হোসেন প্রধান পাকিস্তান আমলে এই মাদরাসার জায়গা দান করে গেছেন মরহুম বিলাত হোসেন বকাউল। মরহুমের চার ওয়ারিশের মধ্যে তিনজন ওয়ারিশ যথাক্রমে মো. মিজানুর রহমান বকাউল গং, মো. মজিবুর রহমান বকাউল গং, চাঁনভানু এবং জরিনা খাতুন গং ফোরকানিয়া মাদরাসার নামে দানকৃত ৩৩ শতাংশ ভূমির উপর কোন দাবী বা ওজর আপত্তি নেই। কেবল একজন ওয়ারিশই এই কাজে অন্যায় ভাবে বাধা প্রদান করতেছে। তিনি বলেন,সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এলাকার দ্বীনি শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা মাদরাসার কাজ সুন্দর ভাবে করতে চাই। সেজন্য আমরাসংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
মাদরাসার সেক্রেটারী মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, তেলি মাছুয়াখাল মাদরাসার সাথেই একটি পাকা মসজিদ, অজু করার জন্য পাকা ঘাটলা, টয়লেট, টিউবওয়েল, সরকারি অনুদানে নির্মিত অজুখানা, ঈদগাহ মাঠসহ ভূমি দাতার পারিবারিক কবরস্থান ও একটি মাজার রয়েছে। যা একটি কমপ্লেক্সে রূপান্তরিত হয়েছে।এমন একটি সুন্দর পরিবেশকে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে আবুল খায়ের বকাউল গং উল্লেখিত মামলাটি করেন।
দলমত নির্বিশেষে তেলি মাছুয়াখাল এলকার সবচেয়ে পুরাতন ফোরকানিয়া মাদরাসা, মসজিদ, কবরস্থান ও ঈদগাহ কমপ্লেক্সের সার্বিক উন্নতি ও ছোট ছোট মেয়েদের দ্বীনি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।