অমরেশ দত্ত জয়ঃ মাঠপর্যায়ে নদী কিংবা সাগরসহ বিভিন্ন প্রকার জলাশয়ে মৎস্য গভেষকগণ কাজ করতে গিয়ে দেখতে পাচ্ছেন অনেক প্রজাতির মাছই নানা কারনে বিলুপ্ত হচ্ছে। এরমধ্যে ইলিশের বিভিন্ন প্রজাতি ছাড়াও অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে সংরক্ষণযোগ্য এমন মাছও কম নয়। তাই বিলুপ্ত প্রায় এমন মাছের নমুনা সংরক্ষণ করে ১৯৮৪ সালে ইলিশের বাড়ী চাঁদপুরে গভেষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি হয়েছে মাৎস্য জাদুঘর। যেটি শহরের ওয়ারল্যাস বাজার এলাকার বাংলাদেশ মৎস্য গভেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ ভবনের একটি কক্ষে সাজানো হয়েছে।
১২ জুন সোমবার সরজমিনে এই মাৎস্য জাদুঘরে গিয়ে ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ ও প্রাণী নিয়ে গভেষক ও শিক্ষার্থীদের মনমুগ্ধকর আলোচনা করতে দেখা যায়।
জানা যায়, সাধু পানি এবং সামুদ্রিক প্রায় ৩শ’ এর বেশি প্রজাতির বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী নির্দিষ্ট ফরমালিনের মাত্রায় নানা আকৃতির গোলাকার কাঁচের জারে রাখা হচ্ছে এই মাৎস্য জাদুঘরটিতে। এতে করে বাহির থেকে কাঁচের জারের ভিতরের সম্পূর্ণ মাছ ও প্রাণীটি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। আর তা দেখতে প্রতিনিয়তই গভেষক, জেলে, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ জাদুঘরটিতে ভীড় জমাচ্ছেন।
আরও জানা যায়, এই জাদুঘরটিতে বিলুপ্ত প্রায় মহাশোল মাছ, বিরল প্রজাতির জইয়া মাছ, রানি, চিতল, গারুয়া, তারা বাইম, মধু পাবদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে। অপরদিকে সমুদ্রের হাঙর মাছ, ঝিনুক, বামশ মাছ, ইলিশ ও মাছের ডিমও স্থান পেয়েছে। এছাড়াও জলাশয়ে ঘুরে বেড়ানো এমন গুই সাপ, কচ্ছপসহ নানান প্রাণীও এখানে রয়েছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত চাঁদপুরের রূপালি ইলিশসহ নানা জাতের ইলিশের নমুনাও এই জাদুঘরে রয়েছে। এরমধ্যে জাদুঘরটিতে চন্দনা ইলিশ, গোর্তা ইলিশ, কেনোলেসা ইলিশের মতো দূর্লভ প্রজাতির ইলিশের সেম্পলও ফরমালিন দিয়ে ফ্রীজাপ করে জারে রাখা আছে। যারমধ্যে কোন কোন ইলিশের ওজন ৩ কেজিরও বেশি। এসব মাছ ও প্রাণীর দর্শন ও প্রজাতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সবসময়ই ধারণা দিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্টগণ।
শিক্ষার্থী, জেলে এবং দর্শনার্থীরা বলছেন, আমাদের দেশীয় অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সেগুলো সম্পর্কে আমাদের জানার আগ্রহ আছে বলেই আমরা এখানে পরিদর্শনে আসছি। একসাথে সাধুপানি এবং সামুদ্রিক মাছ দেখতে পাওয়া যায় এই জাদুঘরটিতে। যা দেখে ব্যবহারিক কাজ সম্পন্ন করার জন্যই মূলত এখানে আসা। কেননা এখানে এক সাথে বহু মাছের সেম্পল দেখতে পাওয়া যায়। যা দেখে দেশীয় অর্থনীতিতে ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য মাছ ও প্রাণীকে ভূমিকা আনতে আমরা সমৃদ্ধ হচ্ছি।
নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু কাউসার দিদার বলেন, বিলুপ্ত সকল প্রজাতির মাছ ও প্রাণীকে দ্রুত চেনার উপায় হিসেবে জাদুঘরটির প্রত্যেক কাঁচের জারের ওপর তাদের নাম সম্বলিত তথ্যও দেয়া রয়েছে।এতে করে শিক্ষার্থীসহ দর্শনার্থীরা মৎস্য প্রজাতি সম্পর্কে এবং মাছের দর্শনবিদ্যা সম্পর্কে সহজেই ধারণা পেয়ে থাকেন। মাছগুলাকে নির্দিষ্ট ফরমালিনের মাত্রায় কাঁচের জারে রাখা হয়। এতে করে বাহিরে থেকে সম্পূর্ণ মাছটি গোলাকার কাঁচের জারের বাহির হতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের গভেষক ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে যখন মনে হয় এই মাছের প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কিংবা এটি সংরক্ষণের প্রয়োজন। তখন সাধু পানি এবং সামদ্রিক মাছের নমুনাগুলা এখানে সংরক্ষণ করে আনা হয়। এখানে মাছ ও প্রাণীকে মূলত ফরমালিন ফ্রীজাপ করা হয়। আমাদের তেমন কোন বরাদ্দ না থাকা সত্ত্বেও আমরা এই জাদুঘরটিতে মাছ ও প্রাণী সংরক্ষণ করে যাচ্ছি। যাতে করে দেশে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিতে এখানে আসা সবাই ভূমিকা রাখতে পারেন।
এদিকে সবার জন্য উন্মুক্ত এই জাদুঘরটির গুরুত্ব বাড়াতে এটিকে এই একটিমাত্র ছোট কক্ষ হতে আরও সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। এতে করে ইলিশ প্রজননের অভয়াশ্রমের সবচেয়ে বড় জেলা চাঁদপুর গভেষণায় আরো সমৃদ্ধ হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সুধীমহল।