সাগর আচার্য্যঃ দীর্ঘ যানজট লাঘবে বহুল কাঙ্খিত রো রো ফেরি ব্যস্ততম হরিনা ফেরিঘাটে আসলেও সেবার বিনিময়ে অতিমাত্রায় রাজস্ব আদায়ের আকাঙ্খা এখন শঙ্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা ভিন্নরুটে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভাবে হরিণা ফেরিঘাটে এখন গাড়ীর চাপ নেই। আর এতে করে এ রুটে সরকারের রাজস্ব আদায় একে বারেই কমে গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হরিণা ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, লোকসমাগম কমায় আগের চেয়ে কমেছে দোকানপাট। পার্কিং ইয়ার্ডে নেই গাড়ী। অতছ কিছু দিন আগেও ঘন্টার পর ঘন্টা হরিণা ফেরিঘাটে গাড়ীর সিরিয়াল লেগে থাকতো। আর এখন দৃশ্যপট বদলেছে বিআইডব্লিউটিসি এর গাড়ীর লোড মাপার স্কেলেও। পুরানো স্কেলটি কাজ না করায় অনেকটা অনুমান নির্ভর হয়ে নেওয়া হচ্ছে গাড়ীর চার্জ। এতে করে শুভঙ্করের ফাঁকি হচ্ছে কিনা তাও এখন ক্ষতিয়ে দেখার দাবী উঠছে নানা মহলে।
ফেরি কাকলীর মাষ্টার মো. আজিজ ও লস্কর সেলিম মুন্সি জানান, এখানে ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা নামের রো রো যে ফেরি আছে। এই ফেরিতেই অনেক গাড়ী পার হতে পারে। তাই ৮/৯ টি ফেরি হরিণা ফেরিঘাটের জন্য হলেও সিফ্টিং ভিত্তিতে ৩/৪ টি ফেরি গাড়ি পারাপার করছে। এতে রাজস্ব আদায় কিছুটা কমেছে।
ফেরিঘাটের ভাড়া আদায়কারী জাহিদ হোসেন জানান, এ বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত প্রতিদিন ফেরিতে পার হওয়া যানবাহন থেকে ভাড়া আদায় হয়েছে প্রায় ৬ থেকে শুরু করে ৮ লাখ টাকা। কিন্তু আগস্ট মাস থেকে সেই ভাড়া অর্ধকেরও নীচে নেমে এখন আদায় হচ্ছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। যাতে করে ইজারাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লোকসানে রয়েছে।
হরিণা ফেরিঘাটের হোটেল ব্যবসায়ী শামিম বকাউল জানান, হরিণা ঘাটে ব্যবসা পরিচালনা করছি বছর দশেক। এখানে মুখরোচক খাবার হলো ইলিশ ভাঁজা। এই ইলিশ ভাঁজা খাওয়ার জন্য এখানের প্রতিটি খাবারের হোটেলে যানবাহনের যাত্রী ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটক ভীড় জমাতো। কিন্তু অন্য রুটের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভাবে এখন হরিণাঘাটে ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। বন্ধ হয়ে গেছে এখানকার বেশকিছু দোকান।
কথা হয় ফেরিঘাটের কুলি মুন্না, কুদ্দুস ও শিপন খানের সঙ্গে। তারা জানান, আগে প্রতিদিন তাদের প্রত্যেকের আয় ছিল ৭/৮ শত থেকে ১২শত টাকা। এখন সেখানে ৩-৪শত টাকা আয় করতেও কষ্ট হয়। এভাবে চলতে থাকলে এ পেশা বদলের সম্ভাবনা রয়েছে।
এসব বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি হরিণা ফেরিঘাটের ম্যানেজার ফয়সাল বলেন, গাড়ীর ওজন মাপার স্কেলটি বেশ কিছুদিন ত্রুটির কারনে বন্ধ। তবে এটি পুরাতন হওয়ায় দ্রুত নতুন স্কেল আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া রো রো ফেরি একত্রে অনেক গাড়ী পরিবহনে সক্ষম বলে অপেক্ষমান গাড়ীর সংখ্যা কম। শুধু রাজস্ব আদায়ের উদ্দ্যেশ্যে রো রো ফেরি এঘাটে আনা হয়নি বরং চালকদের অপেক্ষারত ভোগান্তি কমাতেও এটি আনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে পরিকল্পনা অনুযায়ী রো রো ফেরি এঘাটে আনার বিষয়টি অনেকটাই সফল উদ্যোগ। তবে এ রুটে চলাচলকারী গাড়ী এখন অনেকটাই কমেছে এটা দৃশ্যমান।