স্টাফ রিপোর্টারঃ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান সাংবাদিকদের বলেছেন, শিমুল মিজি যুবলীগের নেতাতো দূরের কথা, কাগজে কলমে সে যুবলীগের সদস্যও হতে পারেনি। সে যুবলীগের কর্মীও না। তাছাড়াও ওই ইউনিয়নে এখন যুবলীগের কোন কমিটিও নেই। শিমুল ছিলো স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী মাত্র। তাই গণমাধ্যমে শিমুলকে যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে আমি অনুরোধ করছি। ওই শিমুলও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
১১ই জানুয়ারি মঙ্গলবার সাংবাদিকদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে ফরিদগঞ্জের ৫নং গুপ্টির সাবেক চেয়ারম্যানের ছেলে আনোয়ার হোসেন বিপ্লব বলেন, শিমুল নামের ওই ছেলে কখনোই যুবলীগের কোন পদে ছিলো না। সে বিভিন্ন জায়গায় যুবলীগের পরিচয় দিতো বলে অভিযোগ ছিলো। তাকে বরং বার সতর্ক করেছি এবং ভবিষ্যতে যুবলীগের পরিচয় দিলে সিনিয়র নেতাদের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছিলাম। এর পর পরই সামনে আসে ধর্ষণের এমন ঘটনা এবং সে পুলিশের কাছে আটক হওয়ায় এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে মনে করছি।
এলাকায় বিভিন্ন ব্যাণার পোষ্টারের ছবি প্রসঙ্গে আনোয়ার হোসেন বিপ্লব সাংবাদিকদের বলেন, রাজনীতিতে নানান মানুষের পদচারণা থাকে। তেমনি শিমুল নামের ওই ছেলে আমাকে না জানিয়েই কিছু ব্যাণার পোষ্টার করে। প্রথমে আমি শিমুল সম্পর্কে ভালো করে জানতাম না। সে কতিপয় বখাটেদের সাথে নিয়ে আমার কাছে আসতো বলে আমি তাকে এখানে না আসতে সতর্ক করেছি। এমনকি তাকে ভালো হওয়ার জন্য ঢাকাতে কাজ করতেও পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ‘কুকুরে লেজ চুঙ্গায় ১২ মাস রাখলেও বাঁকা থাকে’ ঠিক ওইভাবে শিমুলও ভালো হয়নি। আমি প্রশাসনের কাছে শিমুলসহ অপরাধীদের শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
খবর নিয়ে জানা যায়, শিমুল ফরিদগঞ্জের ৫নং গুপ্টি ইউনিয়নের সাইসাঙ্গা গ্রামের হারুন মিজির ছেলে। ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে শিমুল ছিলো সবার ছোট।
ফরিদগঞ্জ থানার এস আই নুরুল ইসলাম ও স্থানীয়রা সাংবাদিকদের বলেন, শিমুলের তেমন কোন পড়ালেখা নেই এবং সে উশৃঙ্খল ও মাদকসেবী। এলাকায় কিশোর গ্যাং চক্রের মূলহোতা এই শিমুল। নানা সময়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে নানান অপকর্মে সি লিপ্ত থাকতো। সে মনে মনে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র মনা হলেও উপরে উপরে বড় মাপের আওয়ামী মনা ভাব প্রকাশ করতো। নিজের ছবি ব্যবহার করে এলাকায় বেশ কিছু ব্যাণার পোষ্টারও টানিয়েছিলো। অপকর্ম ঢাকতে শিমুল যুবলীগের পদ-পদবীতে থাকা নেতাকর্মীদের সাথে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে বড় যুবলীগারও প্রমাণ করাতে চেয়েছিলো। আর এসবের আড়ালেই সে মাদকবিক্রি, ইভটেজিং, কিশোর গ্যাংসহ নানা অপকর্ম করতো।
এসব তথ্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন ফরিদগঞ্জের এমপির প্রতিনিধি সোহেল মাস্টার। তিনি সাংবাদিকদের শিমুল প্রসঙ্গে আরও বলেন, শিমুলের মূল আড্ডা ছিলো আস্টা বাজার এলাকায়। সেখানে শিমুল বকাটে ছেলেদের সাথে নিয়ে নানান অপকর্ম চলাতো অভিযোগ পেয়ে আমি তাকে বরং বার সাবধান হতে সতর্ক করেছিলাম। এমনকি শিমুলকে আমি নিষেধ করছি আমার এদিকে যেন সে কখনো কোনদিন না আসে। আমি তার এবং তার সহযোগীদের কঠোর শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শিমুল এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৯ই জানুয়ারি ফরিদগঞ্জের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুল ছাত্রীকে বাড়ি থেকে ফেরার পথে তার সহযোগীগণসহ ওই ছাত্রীকে তুলে নিয়ে একটি বাড়ীতে গণধর্ষণ করে। লোম হর্ষক সেই ধর্ষণের সেই চিত্র তারা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে রাখে এবং ছাত্রীকে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। পরবর্তীতে ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে মেডিকেল রিপোর্টের জন্য পুলিশ ভর্তি করে এবং এ ঘটনায় মামলা নিয়ে পুলিশ ঘটনায় জড়িত ইজাজ হোসেন (২৩), সাব্বির হোসেন (২৬) এবং লিপি বেগম (৩২) নামের ৩ জনকে গ্রেফতার করে। এরপর তাদের তথ্য মতে ১১ই জানুয়ারী সোমবার চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে পালিয়ে যাবার সময় মূলহোতা শিমুলকে গ্রেফতার করে।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শহীদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন,স্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষণের মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে। এ মামলার প্রধান আসামী শিমুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার আগে শিমুলের ৩ সহযোগীকেও গ্রেফতার করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।