শিমুল অধিকারী সুমনঃ নৌ পথে নানা সংকটে পণ্য রপ্তানিতে জৌলুস কমেছে চাঁদপুরের হাইমচরের তেলিরমোড়ে। এটি ৩নং দক্ষিণ আলগী দূর্গাপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের এক সময়ের প্রসিদ্ধ রপ্তানিময় বাণিজ্যিক এলাকা।
২ ফ্রেব্রুয়ারি শুক্রবার দিনব্যাপী অবস্থান নিলে তেলির মোড়ের জৌলস কমার তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরজমিনে দেখা যায়,কৃষি উৎপাদিত পণ্য টমেটো, পেপে, কলা, দুধ, মাছ, হাঁস মুরগীসহ বিভিন্ন প্রকারের শাক সবজি নিয়ে ট্রলার থেকে নামছেন কৃষকরা। এরপর তেলির মোড়ে সারিবদ্ধভাবে বাজার মিলিয়ে কেনাবেচায় হাঁকডাক শুরু করেন সবাই। ২/৩ ঘন্টা যাবৎ চলে এই বেচাকেনা। দূর দূরান্তের ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাইকারি দামে পণ্য কিনে পিকআপ ও ট্রলারে করে গন্তব্যে পারি জমাচ্ছে।
জানা যায়, এখানে একটি রাস্তার মোড়ে কালিখোলা বাজার, হাইমচর ও প্রাচীন চরভৈরবী বাজার সড়ক এবং আলগী বাজারের মিলিত হয়। ঐ মোড়ে স্থানীয় ঘানি ভাঙ্গা তেল বিক্রি করা বাড়ীর রমনীমোহন, রজনীকান্তের উত্তরাধিকারেরা একটি মুদি দোকান দেয়। আর এরপর ঐ তেলি বাড়ীর আরও অনেকে ক্রমান্বয়ে ওখানে দোকানসহ ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করলে স্থানটির নাম হয় তেলির মোড়। এক সময় কোটি টাকার কৃষিজ পণ্য এখান হতে রপ্তানি হলেও বেচাকেনায় এখন চরম হতাশা দেখা দেয়ায় পণ্য রপ্তানিতে এর জৌলুস কমেছে।

হাইমচর যুব ঐক্য পরিষদ নেতা তেলির মোড়ের বাসিন্দা মিঠুন চন্দ্র সরকার বলেন, তেলির মোড়টি হচ্ছে হাইমচরের নদী ভাঙার কবলে স্থাপিত পুরাতন উপজেলা পরিষদ এলাকা। যাকে ঘিরে গড়ে উঠেছিলো লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। পরবর্তীতে আবারও নদী ভাঙ্গণের সাথে সাথে সবই এখান থেকে স্থানান্তরিত হয়। আর এতেই এখানে বেচাকেনায় অনেকটা ভাটা পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, তবে এখনো তেলির মোড়ে প্রতিদিন ভোর ৬টা হতে সকাল ৯টা পর্যন্ত মাছের আড়ত, মাছ বাজার, চর অঞ্চলে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের কাঁচা তরকারী সহ চরাঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের বেচাকেনাসহ লাখ লাখ টাকার পণ্য নৌপথ ও সড়ক পথে রপ্তানি হয়। এছাড়াও এই বাজারে প্রায় দেড় শতাধিক দোকানপাটে এখনো সকালে হাজার হাজার মানুষের ভীড় দেখা যায়।
স্থানীয় দোকানী মিলন কৃষ্ণ তেলি বলেন, চরাঞ্চলের সাথে নৌপথে তেলির মোড় হতে ৩টি রুটে ট্রলার পণ্য রপ্তানিতে ভূমিকা রাখে। প্রথমটি হচ্ছে মেঘনা পাড়ি দিয়ে এখান হতে প্রতিদিন একটানা ৪ ঘন্টা যাবৎ এক একটি ট্রলার মাঝির বাজার, সাহেবগঞ্জ বাজার, মিয়ার বাজার হয়ে শরিয়তপুরের ঘোষেরহাটে মানুষ ও পণ্যসহ যাতায়াত করে থাকে। অপর রুটে মাঝির বাজার আড়ত হয়ে সিকদার টেক হয়ে ১নং গাজীপুর ইউনিয়নের চর হয়ে ট্রলারগুলো ঈশানবালায় যাতায়াত করে। এছাড়াও মধ্য চরের বাংলা বাজারের দিকেও কয়েকটি ট্রলার তেলির মোড় থেকে সকাল সাড়ে ৮টা হতে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ৩০ মিনিট অন্তর অন্তর যাতায়াত করে। আবার ঐসব স্থান থেকে শেষ যাত্রীপরিবহন ও মালামাল নিয়ে ট্রলারগুলো বিকাল ৫টায় ছেড়ে আসে। এক সময় এখানে অনেক লঞ্চ যাত্রী এই ঘাট দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করলে ও বর্তমানে লঞ্চ যাত্রী ও কমে যাওয়ায় পুরনো ভীড়ের সেই দৃশ্য আর দেখা যায়না।
যাদের নামানুসারে এই তেলির মোড় সেই রমনী মোহন তেলির উত্তরাধিকার দোকানী রাধাকৃষ্ণ তেলির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, চাষীরা তাদের কৃষিজ উৎপন্ন পণ্য নিয়ে তেলির মোড় ঘাটে এক সময় ব্যাপকভাবে আসলেও এখন ট্রলার চলাচলে অনেক বাধ্যবাধকতা থাকায় বিকালের পর আর ট্রলার এখান হতে আসা যাওয়া করেনা। তবে হাটবার না থাকলেও বাজারটিতে প্রতিদিন সকালে ২/৩ ঘন্টা সবজি, মাছসহ বিভিন্ন কৃষিজ পণ্য বেচাকেনা ও রপ্তানিতে জমজমাট সময় দেখা যায়। রৌদের তাপ বাড়ার সাথে সাথে বেচাকেনাও হতাশা বাড়তে থাকে। এখানকার লঞ্চঘাটটি যদি সংস্কার করা হয় তাহলে হয়তো আবারো তেলির মোড়ের জৌলুস ফিরতে পারে।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের হাইমচরের ৩নং আলগী দূর্গাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার আলী আহমদ দেওয়ান বলেন, তেলির মোড়ের ব্যবসা বাণিজ্য ও রপ্তানিখাতে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে তৎপর রয়েছি। এই তেলির মোড়ের নীলকমল লঞ্চঘাটে রপ্তানি ধরে রাখতে এখনো বড় ১/২টি লঞ্চ থেমে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করছে। বাণিজ্যিক এই তেলির মোড়ের রপ্তানিময় জৌলুস টিকিয়ে রাখতে আমি বিস্তৃত কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি।