মোঃ হোসেন গাজীঃ ঝড়বৃষ্টির শঙ্কায় তড়িঘড়ি করে বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের প্রস্ততি নিয়েছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে হাইমচরে বেশ কিছু এলাকায় কাটা-মাড়াই শুরুও হয়েছে। এ জন্য কৃষকরা ধানকাটা শ্রমিক দলকে আগাম মজুরি দিয়ে রাখছেন। যাতে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলা যায়।
হাইমচর উপজেলার ৬ ইউনিয়নে এ চিত্র দেখা গেছে।
হাইমচর উপজেলার মহজমপুর, নয়ানী লক্ষীপুর, বাংলা বাজার, গাজীর বাজার, দক্ষিণ আলগী, উঃ আলগী, রায়ের বাজার, সাহেবগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও ধান পেকেছে। কোথাও ধান পাকতে আরও দুই সপ্তাহ লাগতে পারে।
এ অবস্থায় ঝড়বৃষ্টির শঙ্কায় ধান কাটা-মাড়াই শুরু করেছেন।
সাধারণত বৈশাখ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বোরো ধান মাড়াই শুরু করেন উপজেলার কৃষকরা।
তবে এ বছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেকটা শঙ্কা নিয়ে দ্রুত ধান মাড়াই করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা।
বৈশাখ মাস আসার আগেই শিলাবৃষ্টি আর ঝড় শুরু হয়। কয়েক দফায় শিলাবৃষ্টি আর ঝড়ে উঠতি বোরো ধান নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েন কৃষকরা। পাকা ধান শিলাবৃষ্টির কবলে পড়লে গোলা ভরানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
কৃষকরা জানান, বীজ, সার, সেচ ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে। শ্রমিক মজুরিও বেড়েছে কয়েকগুণ। তাই বোরো ধানে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়। পাকা ধান শিলাবৃষ্টি বা কালবৈশাখীর কবলে পড়লে সমূলে বিনষ্ট হবে। সেই শঙ্কায় কিছুটা আগাম ধান মাড়াই শুরু করেছেন তারা।
ফলনে খুশি হলেও তবে দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। সরকারিভাবে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ধানের মূল্য এক হাজার ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও স্থানীয় বাজারে ৮০০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কৃষকরা আরও বলেন, সরকার সারের যে দাম বেঁধে দেয়, সেই দামে তো আর সার পাওয়া যায় না। বাড়তি দামে কিনে বোরো চাষ করেছি। ফলন যা হয়েছে এতেই খুশি। ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত আকাশ ভালো থাকলেই হয়। আর দাম যদি ভালো পাই। তবে লোকসান হবে না। সরকারি গুদামে ক্রয় শুরু হয়নি। বর্তমানের বাজারমূল্যে ধান বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে। ধান মাড়াই খরচ জোগাতে কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। সব জিনিসের দাম বাড়ে। কমে শুধু কৃষকের কষ্টের ফসলের দাম। কৃষকের ধান বিক্রি শেষ হলে ধানের দামও বাড়বে। তখন ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে। আমাদের কষ্ট করাই বৃথা।
মহজমপুরের কৃষক মোঃ মুনসুর গাজী জানান, প্রতিবিঘা (৬০ শতাংশ) জমির ধান কেটে বাড়িতে আনতে কৃষি শ্রমিকের দলকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। সেই ধান মেশিনে মাড়াইয়ের জন্য ৮০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। গেল বছর এই ধান কাটা মজুরি ছিল সাড়ে ৪ হাজার টাকা আর ধান মাড়াই করা হতো ৬০০ টাকায়। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে তাই মজুরি বেশি। জ্বালানি তেল ও মেশিনের যন্ত্রপাতির দাম বাড়ার কারণে ধান বাড়াইয়ে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে।
হাইমচর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন মিন্টু বলেন, কিছুটা বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও বোরোর ফলন মোটামুটি ভালোই হয়েছে। ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন। কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন ধান, মরিচ, সয়াবিন, ভুট্টা, খেতে না রেখে দ্রুত ঘরে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।