হিলশা নিউজ রিপোর্টঃ অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে একটি ভাড়া বাড়িতে শুরু হতে যাচ্ছে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।
আজ ৭ মে রোববার থেকে নিয়মিত পাঠদান শুরু হতে যাচ্ছে। মূল শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের খুলিশাডুলি ওয়াপদা গেট এলাকায় এই অস্থায়ী ক্যাম্পাস।
গত ডিসেম্বর থেকে মাসিক প্রায় দেড় লাখ টাকায় বাড়িটি ভাড়া নেওয়া হয়। কয়েক মাস ধরে চলে নির্মাণকাজ। গতকাল শুক্রবার গিয়ে দেখা গেল, ভবনের পাঁচতলা পর্যন্ত ভেতরের কাজ সম্পন্ন হলেও লিফট আনা হয়নি। এর কাজ ঋণপ্রাপ্তি সাপেক্ষে হবে বলে জানান ভবনটির মালিক। তবে কয়েক মাস দেরি হবে।
চাঁদপুরে এই প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু একবারে নিঃশব্দে। কারণ রোববার ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নবীনবরণে তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতাই থাকবে না বলে জানান উপাচার্য ড. নাছিম আখতার। তিনি বলেন, ‘বাইরের তথা স্থানীয় কিংবা ঢাকার কোনো অতিথিকেই আমন্ত্রণ জানাইনি।’
শিক্ষামন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁরও বড় অবদান রয়েছে। তাঁর উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করলে ভালো হতো কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি দেশের বাইরে। তিনি সময় করলে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হবে এবং সুবিধাজনক সময়ে নবীনবরণ অনুষ্ঠান হবে।’ তবে তাঁর সঙ্গে রোববার পাঠদান শুরুর বিষয়েও কথা হয়নি উপাচার্যের।
ড. নাছিম আখতার বলেন, ‘আমরা রাজনীতিক, সামাজিক শিক্ষাবিদ কাউকেই বলিনি। ওইদিন শুধু তিন বিভাগে ভর্তি ৯০ শিক্ষার্থী, ৬ শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই থাকবেন।’
তিন বিভাগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত কোনো আবাসন ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে উপাচার্যের ভাষ্য, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় থাকবেন। এ কথা আগেই বলা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভর্তি হওয়া বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই অন্য জেলার। যাঁদের থাকার জন্য বাসা খোঁজা হচ্ছে।
২০১৯ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে চার বছর পর। চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কের পাশে ছয়তলা ভবনের পাঁচতলা পর্যন্ত ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অস্থায়ী ক্যাম্পাস করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এই অস্থায়ী ক্যাম্পাসের ঠিকানা কাউকে জানাতে নারাজ ছিল কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই প্রতি মাসের ভাড়া পরিশোধ করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচে (২০২১-২২) তিনটি বিভাগের শিক্ষার্থীর ভর্তি সম্পন্ন হয়েছে। তিন মাস ধরে শিক্ষকসহ অন্যান্য নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আবেদনকারী পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৯০ জন ভর্তি হয়েছেন তিন বিভাগে। উপাচার্য জানান, ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস হয়েছে কিছুদিন। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষায় ‘এ’ ইউনিটে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৩০, ‘বি’ ইউনিটে ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগে ৩০ এবং ‘সি’ ইউনিটে ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে ৩০ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। আবেদন শুরু হয়েছে। তাদের ভর্তি সম্পন্ন হলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তিন বিভাগে ১৮০ শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহণ করবে।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের সেই বিতর্কিত ৬২ একর জমি চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে নেওয়ার পায়তারা চলছে। ২০১৭-১৮ সালের ওই মৌজার রেট অনুযায়ী, জমির দাম ১৯৪ কোটি টাকার কাছাকাছি নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু সেলিম খান আদায় করতে চেয়েছিলেন ৫৬০ কোটি টাকা। তবে তৎকালীন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ তাঁর নির্ধারিত দামেই অনড় থাকেন। পরে আদালতে রিট করেন জমির মালিক সেলিম খান গংরা। কিন্তু উচ্চ আদালত জেলা প্রশাসকের নির্ধারিত মূল্যকেই প্রাধান্য দেন। এই রিট, কালক্ষেপণ ও জাল দলিলাদি উপস্থাপন করায় সেলিম খান ও তাঁর দুই সহযোগীর এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু চলতি বছর জমির দাম বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক, যা ২০১৭-১৮ সালের মৌজার রেটের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আবারও সেলিম গংরা সেই বিতর্কিত স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।