হাজীগঞ্জ সংবাদদাতাঃ চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন ২০২২ এর তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র আহবান ও জমা তারিখ ছিলো গত ১৫, ১৬ ও ১৭ জানুয়ারী। এ ছাড়াও মনোনয়নপত্র বাছাই এবং মনোনয়নপত্র বাছাই ও ফল প্রকাশ ছিলো ১৮ জানুয়ারী, ছিলো ১৮ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও চুড়ান্ত বৈধ প্রার্থীগণের তালিকা প্রকাশ ছিলো ২০ জানুয়ারী, নির্বাচনের তারিখ আগামী ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২ নির্ধারন ছিলো।
কিন্তু প্রধান শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন তার নিজস্ব চয়েজ মতো কয়েকজনকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করেন এবং অন্য কাউকে ফরম না দেয়ায় বিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক মাহবুবুর রহমান চাঁদপুর আদালতে হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদী মাহবুবুর রহমান এর দেয়া তথ্য মতে, প্রথমে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি, এবং প্রিজাইডিং অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে একটি লিখিত ১৭ জানুয়ারী অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগে তিনি বলেন, গত ৩০ নভেম্বর ২০২১ হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন ২০২২ এর চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়।
তা দেখা যায়, ভোটার তালিকায় অভিভাবকদের কোন ঠিকানা বিহীন তালিকা। যাহা একটি সচ্চ নির্বাচনে প্রধান প্রতিবন্ধকতা। ঠিকানা বিহীন ভোটার তালিকা প্রনয়ন করার কারনে উদ্দেশ্য প্রনোধিত নির্বাচন করার পায়তারা চলছে। ঠিকানা উল্লেখ না থাকায় উক্ত যে কেউ অভিভাবক সেজে জাল ভোটের মাধ্যমে একটি উদ্দেশ্য প্রণোধিত কমিটিতে আসার জন্য ভোট প্রধান করতে পারে। তাই ভোটার লিষ্টটি ঠিকানাসহ চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশের জন্য অনুরোধ জানান।
মামলার বাদী মাহবুবুর রহমান আরো জানান, আমি নিজেই হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন ২০২২ এর তফসিল অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারী মনোনয়নপত্র ক্রয় করতে গেলে, আমাকে মনোনয়ন ফরম না দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেন এবং বহিরাগত সন্ত্রাস দিয়ে স্কুল মাঠে মহড়া দেন।
বাদীর মামলা সুত্রে জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর ২০২১ হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন ২০২২ এর চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ভোটার তালিকায় কোন ভুল আছে কিনা তাহা দেখার কোন সুযোগ দেয়নি। এ ভোটার তালিকা মনগড়া ভাবে প্রস্তুত করে গোপন রাখে। এর মধ্যে ৯ জানুয়ারী বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন ২০২২ এর তফসিল ঘোষনা করেন। মনোনয়নপত্র ক্রয় করতে গেলে বাদীকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে পরবর্তীতে মনোনয়পত্র দিবে বলে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
১৬ জানুয়ারী পুনরায় বাদী মনোনয়পত্র সংগ্রহ করতে গেলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সু-কৌশলে বিদ্যালয় থেকে অন্যত্র সরিয়ে যায় এবং ঐদিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আর অফিস কক্ষে আসেননি। এমনকি অন্য কাউকেও তিনি মনোনয়ন ফরম দিয়ে যাননি। নির্বাচনের প্রার্থীগণ বিদ্যালয় থেকে ভোটার তালিকা সংগ্রহ করতে গেলে কাউকেই ভোটার তালিকা দেননি।
বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গানো ভোটার তালিকার অনেক পাতার উপরের অংশ ছিড়ে রেখে দেন। যাতে কেউ না নিতে পারে। সেই ভোটার তালিকায় কোন ভোটারের ঠিকানা উল্লেখ ছিলো না। ঠিকানা বিহীন ভোটার তালিকা বাদ দিয়ে ঠিকানা উল্লেখ পূর্বক স্বচ্চ নির্বাচনের জন্য সঠিক ও সুন্দও স্বচ্চ ভোটার তালিকা প্রনোয়ন না করা পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিতের প্রার্থনা করেন।
কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন তার মনগড়া ও নিজ পছন্দ মতে ৪জন অভিভাবক প্রতিনিধি ও ১জন মহিলা অভিভাবক প্রতিনিধির মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে কোন নির্বাচন না দিয়া কমিটি গঠন করবে।
মামলার তথ্য মতে আরো জানাযায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেনের মনগড়া ও নিজ পছন্দ মতে অভিভাবক প্রতিনিধি হইলে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ও অবকাঠামো দুর্বল হয়ে পড়বে। এমতাবস্থায় একটি সুন্দও, স্বচ্ছ ও আইন সম্মত নির্বাচনের জন্য বিগত ৩০ নভেম্বও ২০২১ তারিখের চুড়ান্ত ভোটার তালিকা সংশোধন করে সঠিক ভাবে ভোটার তালিকা প্রদানের নিমিত্তে এবং সঠিকভাবে চুড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা ঘোষনা করার জন্য চুড়ান্ত ভোটার তালিকা ও চুড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা বাতিল হওয়া আবশ্যক এবং তা বাতিল করিয়া পুণঃ নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা করা অবশ্যক।
তাই নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন করতে না পাওে কিংবা কোন নির্বাচনী কার্যক্রম করতে না পারে তৎমর্মে মামলা চলাকালীন ১,২ ও ৩নং বিবাদীগণের বিরুদ্ধে এক অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রধান করা আবশ্যক।
উক্ত আদালত বাদীর আরজী পর্যালোচনা করে গত ১৮ জানুয়ারী ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। মামলার ০১ নং বিবাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি, ০২ নং বিবাদী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন ও ৩নং বিবাদী প্রিজাইডিং অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান। ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জবাব না দিতে পারলে আদালত পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।
মামলার বাদী মাহবুবুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য এবং বিদ্যালয়ের অর্থ নিজের মনগড়া খরচ করার জন্য তিনি নিজের মতো করে অভিভাবক সদস্য নির্বাচন করছেন। এমন কি তিনি নিজেও মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করে গোপনে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান থেকে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন এবং একই বিদ্যালয় থেকে কর্মরত শিক্ষককে বিপুর অর্থের বিনিময়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। যার ফলে বিদ্যালয়ের অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা উন্নত মানের শিক্ষন-শিখন কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেনকে তাৎক্ষনিক পাওয়া না যাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।