প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ ২০০৯ সালের ৭ মে হাইমচরের নিউচরে ভূয়া জোতদার ও লাঠিয়াল বাহিনীর নৃশংস হামলা ও অগ্নিসংযোগ, ধর্ষন, লুটপাটের প্রতিবাদে ৭ মে কে ‘কালোদিবস’ ঘোষনা করে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠন।
বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠন চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি জিএম বাদশা ও সাধারন আব্দুল ওয়াদুদ এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, গত ৭ মে শনিবার চাঁদপুরসহ সারাদেশে এই দিবসকে ‘কালোদিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, নিউচর ৬০ এর দশকে জেগে উঠে আবার তলিয়ে যায়। পুনরায় ৯০ এর দশকে জেগে উঠে। এই চর কোন পুরনো জমা নয়, মেঘনা নদী থেকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে জেগে ওঠেছে বলে এর নামকরণ হয় ৩৭১ নং নিউচর।
যেকোন সাধারন মানুষই জানে নদী-পাহাড়-পর্বত-খালবিল এর মালিক ব্যক্তির হয় না, তা হয় রাষ্ট্রিয় সম্পদ। ফলে নিউচরও সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের নামে ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত। ফলে এই জমি ভোগদখলের অধিকার সরকার বর্ণিত প্রকৃত ভূমিহীনদের। নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের অনাবাদি জমিকে ভূমিহীনদের অন্তত ৩ বছর সময় কঠোর পরিশ্রম করে আবাদি জমিতে পরিনত করতে হয়।

অথচ কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী তথা ভূয়া জোতদার প্রশাসনের যোগসাজশে হতদরিদ্র ভূমিহীনদের কাছ থেকে জোরপূর্বক নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে, ভূয়া কাগজ দেখিয়ে জমির মালিকানা দাবি করে বছরের পর বছর ভূমিহীনদের কাছ থেকে বর্গা-খাজনা আদায় করে আসছে। এর প্রতিকারের দায়িত্ব ছিলো স্থানিয় প্রশাসনের, সেই দায়িত্ব পালন না করে প্রশাসন ভূয়া জোতদারদেরই সাহায্য করে।
২০০৭ সালে ‘সমাজতান্ত্রিক ক্ষেত মজুর ও কৃষক ফ্রন্ট’ পরিবর্তিত নাম ‘বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠন’ ভূমিহীনদের ঐক্যবদ্ধ করে বর্গা-খাজনা আদায়, হোগল পাতা কাটা, গছিজাল ফেলার জন্য জোতদারদের অর্থ দেওয়া বন্ধ ঘোষনা করে। এবং সমস্ত অন্যায় ও অন্যায্য দাবীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই ঘোষনা করে। এতে জোতদাররা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তারা ভূমিহীনদের চাপে ফেলে দূর্বল করার জন্য মোট ৪৭ টা মিথ্যা মামলা দায়ের করে, তাতেও ব্যার্থ হয়। ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২০০৯ সালে আদালত কর্তৃক রিসিভার নিয়োগ করা হয়।
স্থানিয় পুলিশ বাংলা বাজারে অস্থায়ি ক্যাম্প স্থাপন করে এবং ধানের একাংশ জমা দেয়ার আদেশ দেয়। কৃষকরা ধান জমার বিপরীতে রশিদ চায়, প্রথমে রাজি না হলেও কৃষকেদের অনড় অবস্থানের কারনে প্রশাসন রশিদের বিপরীতে শতশত মন ধান গ্রহন করে।
রিসিভারকে মেনে কৃষকরা যখন সরকারের অংশ জমা দিয়ে ধান ঘরে তুলছে, সেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হঠাৎ ২০০৯ সালের ৭ মে ভোরে পুলিশের উপস্থিতিতে কথিত জোতদারদের নেতৃত্বে লাঠিয়ালবাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নিউচরের মানুষের উপর অতর্কিত ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রায় দেড় শতাধিক ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়, ধান -মরিচ-সয়াবিন – গবাদি পশু লুটপাট করে, যুবতিরা ধর্ষণের শিকার হয়, আহত হয় শতাধিক শিশু- নারি-পুরুষ আহত হয়। এই বর্বোরচিত ঘটনায় শুধু মাত্র রতন হাজীকে লোক দেখানো গ্রেফতার করে, এবং কয়েকদিনের মধ্যেই সে ছাড়া পায়।
এই বর্বরোচিত ঘটনার বিচার চেয়ে ভূমিহীনদের দায়েরকৃত মামলার বাদীকে গোপনে আটক করে জোরপূর্বক কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তারা প্রচার করতে থাকে ভূমিহীনরা মামলা প্রত্যাহার করেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অসত্য। আমরা উক্ত মামলা পূনঃজীবিত করার দাবি জানাই।

এইসমস্ত ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগী ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও তার ভাই, নির্বাহী অফিসার, ওসি, এসপি। অবাক হওয়ার বিষয় এতোবড় দুর্ঘটনার পর কোন জনপ্রতিনিধি দেখতে পর্যন্তও যাননি, এমনকি এমপি মহোদয় পর্যন্ত একদিনের জন্যও দুর্দশাগ্রস্থ ভূমিহীনদের দেখতে পর্যন্ত যাননি। সরকারিভাবে কোন ধরনের সহযোগিতাও পায় নি সেদিন – এই ঘরহীন -সহায় সম্বল হারানো মানুষরা।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আজও বন্ধ হয় নি বর্গা খাজনা আদায়ের অপতৎপরতা। বরং স্থানিয় ভোট বিহীন ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় ভূয়া জোতদাররা তাদের তৎপরতা চালাচ্ছে। এবং মেম্বার নিজে ভূমিহীনদের ফসলিজমি দখল করে দীঘি কেটে মাছ চাষ করছে। এবং তাকে ভোট না দেয়ার অভিযোগে ভূমিহীনদের দখলকৃত জমি মৌখিক বিক্রি করে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, বাহেরচরসহ ১৩/১৪ টি চরের ৮,০০০ একর খাসজমি নাকি অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে। এসব জমিতে ধান-মরিচ-সয়াবিন-শাক-সবজিসহ এমন কোন ফসল নেই যা এইসব চরে চাষ হয় না । ভূমিহীনরা জীবন বাজি রেখে, হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়েপরে বেঁচে আছে। ভূমিহীনদে কষ্টার্জিত শ্রমে তৈরি হওয়া এই আবাদি জমিকে নতুন করে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে তৈরি করার তো কিছু নেই।
আমরা মনে করি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা মানে ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করে গুটিকয়েক লুটেরা গোষ্ঠীর রাষ্ট্রিয় সম্পদ লুন্ঠনে মহাউৎসব ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমরা আত্মঘাতি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাই। নচেৎ হাজার হাজার কৃষক পরিবার নিজেদের মাটি-জলার অধিকার এমনি এমনি ছেড়ে দেবে না।
এবং আরও বলতে চাই হাইমচর উপজেলা জননেতা আব্দুল্লাহ সরকারের সৃষ্টি। এই উপজেলায় অন্য কোন ব্যক্তির নামে বাজার, চর বা এলাকার নামে হওয়া অনুচিত। বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠন চাঁদপুর জেলা শাখার পক্ষ থেকে প্রশাসনের প্রতি আমরা দাবি জানাচ্ছি হাইমচর উপজেলাকে ‘আব্দুল্লা নগর’ ঘোষনা করা হোক।
আমরা আশাবাদী হাইমচর উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ আব্দুল্লাহ সরকারের নিস্বার্থ জীবন সংগ্রাম এবং হাইমচরের জনগনের প্রতি যে অসামান্য অবদান এবং হাইমচরবাসীর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার স্বীকৃতি স্বরূপ আমাদের এই দাবিকে সমর্থন করবে।