গাজী মহিনউদ্দিনঃ দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে একই মসজিদে বিনা বেতনে ইমামতি ও খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন যে ইমাম। আর এ ইমামের হাত ধরেই ছোট্ট কাছারি ঘর থেকে বিশাল আকৃতির দ্বোতলা মসজিদ ভবন গড়ে উঠেছে। বার্ধক্য জনিত কারণে এবার বিদার নিতে হচ্ছে বিনা বেতনের এ ইমামকে। তবুও মসজিদ আর মুসল্লিদের প্রতি মায়া মমতায় অসুস্থ্য শরীর নিয়ে ইমামতি করতে ছুটে আসেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পরপরই নিজ গ্রামে খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে ইসলামের পুনঃপ্রচার এবং মুসল্লিদের মসজিদ মুখী করতে ছুটে চলা একজন ইমাম কারী ইব্রাহিম। বর্তমানে তার বয়স ৮৫ বছর।
যিনি মাইকের বিকল্প বোঙ্গা ব্যবহার করে মসজিদে আজান এবং মুসল্লিদের মসজিদে আসার আহবান জানাতেন।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড টোরাগড় দক্ষিণ পাড়া আল আমিন জামে মসজিদের ইমাম কারী ইব্রাহিম। তিনি দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে বিনা বেতনে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কারী ইব্রাহিম টোরাগড় গ্রামের বাসিন্দা তার বাবা হাফেজ আব্দুল হক। তিনিও তৎকালিন সময়ে টোরাগড় গ্রামে ইসলামের চর্চা করতেন।
বাবার দেখানো পথেই কারী ইব্রাহিম দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে নিজ গ্রামেই ইমামতি ও খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে টোরাগড় দক্ষিণ পাড়া ক্বারী ইব্রাহিম বাড়িটি তার নামেই নামকরণ হয়েছে।
কিশোর বয়সে হাফেজি পড়া অবস্থা এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হন ক্বারী ইব্রাহিম। মৃত্যুর মুখোমুখি থেকে আরোগ্য লাভ করার পর থেকেই বিনা বেতনে মসজিদের ইমাম হিসেবে নামাজ পড়ানো শুরু করেন। এর পর থেকেই তিনি ইমামতি করে আসছেন।
মসজিদের ইমামতি এবং মুঠো চালের বিনিময়ে সকালে মক্তবে কোরআন শিক্ষায় পাঠদান করেই ৫০ বছর ধরেই জীবন জীবিকা চালাতেন ক্বারী ইব্রাহিম।
১৯৭২ থেকে এ মসজিদে বিনা বেতনে ইমামতি ও খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বার্ধক্যজনিত কারনে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নিবেন। ৪ সন্তানের মধ্যে ক্বারী ইব্রাহিমের এক সন্তান বাক প্রতিবন্ধী। পরকালের শান্তি লাভের আশায় তিনি বিনা বেতনে নিজ গ্রামে মসজিদে ইমামতি এবং মুসল্লিদের মসজিদে আসার আহবান জানান।
মসজিদের মুসল্লি, সাবেক কাউন্সিলর মুরাদ কাজী বলেন, আমার বাবা দাদা শুরু করে বর্তমান প্রজন্ম ক্বারী ইব্রাহিম এর কাছ থেকে কোরআন শিক্ষা এবং সূরা কেরাত শিখে আসছে। মসজিদের শুরু ক্বারী সাহেবের হাত ধরে। আজ দ্বোতলা মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
ক্বারী ইব্রাহিম বলেন, পরকালে শান্তি লাভের আশায় নিজ গ্রামে বিনা বেতনে ইমামতি করেছি। সকাল বেলায় মক্তবে কোরআন শিক্ষার বিনিময়ে সপ্তাহে একদিন যে মুঠো চাল পেতাম তাতে আমার সংসার চলতো।