অমরেশ দত্ত জয়ঃ সহজলভ্য উৎপাদনশীল লাভজনক ফল কলা উৎপাদন চাঁদপুরে ব্যক্তি পর্যায় থেকে এখন বাগান ও খামার পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় জেলায় আমদানি নির্ভরতা ঘুচিয়ে নিজস্ব উৎপাদনেই চাহিদা মিটবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আর তা বাস্তবায়নে জেলা কৃষি অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কলাচাষীদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করছে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চাঁদপুরে কলা চাষের পরিমাণ ছিলো ৬০ হেক্টর এবং উৎপাদন হয়েছে ৬২৫ মেট্রিক টন। আর বর্তমানে ২০২০-২১ অর্থবছরে কলা চাষের জমির পরিমাণ অনেকটা বেড়ে ৮৫ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। যেখান থেকে ৯শ’ ১০ মেট্রিক টন বিভিন্ন জাতের কলা উৎপাদন এখন জেলাবাসীর চাহিদা মিটানোর আশা জাগাচ্ছে।
২২ জুন বুধবার বিকালে সরজমিনে শহরের চৌধুরীঘাট, পালবাজার ও বাবুরহাটের কলার আড়ত ঘুরলে ব্যবসায়ীরা নিজ জেলার কলা উৎপাদন বাড়লে উপকৃত হবেন বলে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

বাবুরহাটের কলার আড়তাদার মোঃ মালেক খান বলেন, আমরা সবরি, বাংলা, চাপা, সাগরসহ সব রকমের কলাই বিক্রি করি। এসব কথা যশোর, রংপুর,খাগরাছড়ি এলাকা থেকে ২৫-৩০ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া দিয়ে আমদানি করতে হয়। প্রতি ট্রাকে ৬শ’ থেকে ৮শ’ ছড়া কলা আনা যায়। যা ১২/১৫ দিন পর্যন্ত মজুদ রেখে বিক্রি করতে হয়। সব মিলিয়ে পরিবহন খরছ পুষিয়ে নিতে কলা বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হই।
আরেক কলার আড়তদার মোঃ শফিক মাল বলেন, ১শ’ থেকে ২শ’ কলার ছড়া আমদানি শেষে আড়তে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। যার প্রতিটি কলার ছড়া হালি অনুযায়ী ১শ’ থেকে ৪শ’ টাকা করে বিক্রি করতে হয়। যদি স্থানীয় পর্যায় থেকে কলা কিনে বিক্রি করা সম্ভব হতো তাহলে কলার দাম আরো কম রাখা সম্ভব হবে।
একই বাজারের কলার আড়তদার মোঃ নাঈম বলেন, মূলত আমদানি খরছ পুষিয়ে নিতেই সবরি কলা হালি প্রতি ২০ টাকা ও চাপা কলা ১৫ টাকা হালিতে বিক্রি করতে হয়। কলার চাহিদা মিটাতে আমদানি নির্ভরতা না ঘুচানো পর্যন্ত কলার দাম কমানো সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ মুরাদুল হাসান বলেন, এখানে যে কলা চাষ হয় তা ব্যক্তি পর্যায় থেকে এখন বাগান ও খামারি পর্যায়ে চলে গেছে। আর খামারি পর্যায়ে কলা চাষে মানুষের আগ্রহ বাড়ায় আমরা তাদেরকে কলার রোগ নির্ণয় ও প্রতিকারে মাঠপর্যায়ে গিয়ে নানান পরামর্শ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করছি। যেহেতু চাঁদপুরে ব্যানিজিকভাবে কলার চাষ নেই এবং এখনো আমদানি করতে হচ্ছে। তবে কলা চাষের পরিমান যে ভাবে বাড়ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে এখানকার উৎপাদিত কলাতেই জেলার চাহিদা মিটবে এবং তা অন্যান্য জেলা চাহিদা মিটাতেও সরবরাহ করা যাবে।
তবে কলা আমদানি করা হলেও তা যাতে কেমিক্যালমুক্ত রাখা হয় এবং দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে থাকে সে বিষয়ে বাজার তদারকি চলমান জানিয়ে চাঁদপুর জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান রুপম বলেন, কলার দাম যদি সিন্ডিকেট করে বেশি রাখা হয় কিংবা অসাধু উপায় অবলম্বন করে কেমিক্যাল মিশিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এমন কিছু আমাদের দৃষ্টিগোচর হলেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া জেলায় যারা লাইসেন্স ব্যাতীত ফল ব্যবসা চালাচ্ছে তাদেরকেও কৃষি বিপণন আইনে শাস্তির আওতায় আনা হবে।