মানিক ভৌমিকঃ কাগজের ঠোঙা ও বক্স তৈরি করে জীবিকায় ভাগ্য বদলের সাফল্য পেতে চলেছেন চাঁদপুরের কচুয়ার এক দম্পত্তির পরিবার। তবে কাজটিতে দ্রুত সাফল্যের চূঁড়ায় পৌছাতে প্রয়োজন ঋণ সুবিধাসহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তা। যদিও ইউএনও বললেন, দ্রুতই এই ধরনের উদ্যোক্তাদের সহায়তায় সরকারিভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে কচুয়ার পালাখাল মডেল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ভূঁইয়ারা গ্রামের বেপারী বাড়ীতে গেলে সাগর ও লিপি দম্পতীর এই সাফল্যের গল্প নজরে আসে।
সরজমিনে জানা যায়, ঘরে বসে না থেকে সাগর হোসেন ও তার স্ত্রী লিপি বেগম শুধুমাত্র কাগজের ঠোঙা ও বক্স তৈরি করেই মাসে আয় করছেন ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। পরিশ্রম ও একাগ্রতা থাকলে যেকোন কাজই সফলতা এনে দেয়। তার দৃষ্টান্ত প্রমাণ যেনো এই দম্পতি। এক সময়ে পালাখাল বাজারের বাপ্পি সাহা প্যাকেজিং এন্ড ফরেনে মাত্র ৩শ’ টাকা মজুরিতে কাজ করতো মোঃ সাগর হোসেন। পরে সেখানের পারিশ্রমিক দিয়ে না পোষানোয় কয়েক মাস যাবৎ নিজ বাড়ির পাশেই দোকান ভাড়া নিয়ে সাগর নিজেই বনে যান উদ্যোক্তা। এখন সেখানেই স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ঠোঙা ও মিষ্টির প্যাকেট বক্স বানিয়ে ঘোচাচ্ছেন পরিবারের দারিদ্রতা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাপ্পি সাহা প্যাকেজিং এন্ড ফরেনের ম্যানেজার মোঃ জুয়েল রানা। তিনি বলেন, সাগর যথেষ্ট ভালো কাজ করতো। তবে আমরা তাকে যে টাকা দিতাম তাতে তার পোষাতো না। পরে সে নিজে ব্যবসা দেয়ার কথা জানালে আমরা তাকে কাজ থেকে নিঃসংকেচে যেতে দিয়ে স্বাগত জানাই।
ভূঁইয়ারা গ্রামের প্যাকেজিং কারিগর সাগর হোসেন বলেন, আমি ঋণের টাকায় ১টি কাটিং মেশিন, ১টি ভাজ মেশিন কিনি। এরপর ১টি দুচালা টিনের দোকান ভাড়া নিয়ে সেখানে মেশিনগুলো স্থাপন করি। তারপর বাজার থেকে অটো বোর্ড, কাগজ, ময়দা, সুতা, পিন কিনে কাজ শুরু করি। কাজের মধ্যে মিষ্টির বক্স কাটিং করে তারপর ভাজ দিয়ে বক্সে লাসা লাগিয়ে এরপর বক্স শুকিয়ে মিষ্টির প্যাকেট করি। তবে মিষ্টির বক্সের চেয়ে কাগজের ঠোঙা বানানো অনেকটা সহজ।
সাগর হোসেন আরও বলেন, ঠোঙ্গা ও মিষ্টির বক্স তৈরির যাবতীয় কাগজ ও বোর্ড ঢাকা থেকেই সংগ্রহ করতে হয়। নিজেদের পরিশ্রম ও যাবতীয় খরছ মিলিয়ে আমাদের প্রায় ২০ হাজার টাকা মাসে খরছ হয়। পরে সব খরছ বাদ দিয়েও গড়ে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো ব্যবসায় লাভ থাকছে।
সাগরের স্ত্রী লিপি বেগমসহ এলাকার লোকজন বলেন, এই ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে সরকারিভাবে ঋণ সহায়তা প্রয়োজন। তাহলে সাগরের ব্যবসায়িক উন্নতি দেখে অন্যরাও এ ব্যবসায় আসতে আগ্রহ দেখাবে।
চাঁদপুরের কচুয়ার ইউএনও মোঃ ইকবাল হাসান বলেন, সাগরের মতো কচুয়ার পালাখাল, সাচার ও বায়েকের মোড়েও এরকমর প্যাকেজিং কাজ হয়। যেগুলো কচুয়ার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চাঁদপুরের অন্যত্রও পাঠানো হচ্ছে। আমরা সাগরের মতো উদ্যোক্তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছি।
এদিকে প্যাকেজিং শিল্পকে এগিয়ে নিতে চাই কার্যকর পরিকল্পনা। তাই এ কাজে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সুযোগ সৃষ্টিতে সুদৃষ্টি প্রয়োজন বলে মনে করেছে সুধীমহল।