অমরেশ দত্ত জয়ঃ আবহাওয়াজনিত কারন ও নানান অসতর্কমূলক জীবনযাপন করার ফলে চাঁদপুরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে। যার মধ্যে এবার শিশুরোগী আক্রান্ত কম হলেও যুবতী নারী ও পুরুষের সংখ্যা বেশি। তবে ধারণ ক্ষমতার চেয়েও রোগী বেশি হলেও চিকিৎসা দিতে যেন কোন কমতি রাখছেন না সদর হাসপাতালের চিকিৎসকগণ।
১২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকালে সদরের হাসপাতালটিতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া রোগীর জন্য চালু করা ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ১টি বেডও রোগী ছাড়া ফাঁকা নেই। এমনকি পেইং বেডেও ডায়রিয়া রোগীর ছড়াছড়ি। তাই কোথাও বেড না পেয়ে ফ্লোরে শুয়িয়েই চলছে ডায়রিয়া রোগীর দূদান্ত চিকিৎসা। আশার কথা হচ্ছে গেলো ১ মাসে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ১ জন রোগীও ডায়রিয়া নিয়ে মৃত্যুবরণ করেনি।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, পুরানবাজার জাফরাবাদ এলাকার ডায়রিয়া রোগী আয়েশা বেগম(৩৫)। তিনি ১১ এপ্রিল সোমবার জীবনের শেষ অবস্থা নিয়ে সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ার জন্য ভর্তি হন। চিকিৎসকদের তৎপরতায় মাত্র ১৬ ঘন্টার মধ্যেই তিনি সুস্থ্য হয়ে উঠেন। একই ভাবে শহরের আলিমপাড়ার নাছিমা(৪৫) ডায়রিয়ার চিকিৎসা পেতে মূমুর্ষ অবস্থায় সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। দিনের ১০/১২ ঘন্টা পার হতেই নিভু নিভু নাছিমার জীবন আলোর মূখ দেখতে থাকেন।এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ্য।
চাঁদপুর সদর হাসপাতালের দৈনিক ডায়রিয়া রোগীর প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, গেলো ২৪ ঘন্টায় ৩৭ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী এখানে ভর্তি হয়েছেন এবং একমাসে ৩শ’ ৮৬ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। যারা স্বেচ্ছায় এমনি চলে গেছেন তাদের বাদে ৩শ’ ২১ জন এখান থেকে পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে বাড়ী ফিরেছেন।

সদর হাসপাতালের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গেলো ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগ দেন ডাঃ এ. কে. এম মাহবুবুর রহমান। তিনি যোগ দেয়ার পরই হাসপাতালে রোগীদের সেবাপ্রাপ্তি বেড়েছে। চিকিৎসকগণও সঠিক সময়ে হাসপাতালে এসে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য হচ্ছেন। রোগীদের কাছাকাছি গিয়ে মনযোগ সহকারে রাউন্ডের চিকিৎসকগণ রোগীর সাথে কথা বলছেন। এখন রোগীদের সেবায় চিকিৎসকদের রাউন্ডও দিনে দুবার দিতে হচ্ছে। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এ. কে. এম মাহবুবুর রহমান নিজেও প্রতিনিয়ত রোগীর কাছাকাছি রাউন্ডে যাচ্ছেন এবং রোগীদের খোঁজ-খবর রাখছেন। চলমান ডায়রিয়া রোগীদের বিশেষ নজরদারিতে রাখতে গেলো ২৫ মার্চ থেকে ১১জন নার্সের স্পেশাল টিমের আওতায় তিনি ‘ডায়রিয়া ওয়ার্ড’ চালু করেছেন।
হাসপাতালের ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রসঙ্গে এসব তথ্য ‘হিলশা নিউজ‘-কে নিশ্চিত করে তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এ. কে. এম মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১ লিটারের প্যাকেটের ৩-৪শ’ লিটার স্যালাইন রোগীদের দেয়া হচ্ছে। এরসাথে ঔষুধ, এন্টিবায়োটিক, কেনিলা, স্যালাইন সেট সব এখান থেকেই রোগীরা পাচ্ছে। আর পুরোটাই দেয়া হচ্ছে সম্পূর্ণ বিনা পয়সায়।
ডাঃ এ. কে. এম মাহবুবুর রহমান ‘হিলশা নিউজ‘-কে আরও বলেন, ডায়রিয়া স্বাভাবিক পর্যায় চলে আসলে আমরা রোগীকে ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে বাইরের খোলা খাবার পরিহার করা, পর্যাপ্ত পানি পান করা ও হাত ধোঁয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আমি চাই যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে ‘সদরের চেয়ে বেটার চিকিৎসা অন্য কোথাও যে পাওয়া সম্ভব নয়’ এই কথার সত্যতা রক্ষা করতে। আমি ১০ হাজার লিটার স্যালাইন বরাদ্দ চেয়েছি। অতএব ডায়রিয়া রোগীকে এখানে স্যালাইন সঙ্কটে ভুগতে হবে এমন কোন সুযোগ নেই।