অমরেশ দত্ত জয়ঃ ত্রাণ কর্তা বা মুক্তিদাতা যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন বড়দিন এবং ক্রিসমাস ডে কে ঘিরে চাঁদপুর জেলার ৬টি চার্চসহ খ্রিষ্টান পাড়াগুলোতে সাজ সাজ রব দেখা গিয়েছে। আর উৎসবকে রাঙ্গাতে ধর্মীয় উপাসনালয় ছাড়াও বাসা বাড়ীতেও আনন্দের ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জ্বাসহ ডেকারেশন। আর এই আনন্দকে আরও বেশি করে রাঙিয়ে দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে ব্যাপকভাবে নিঃছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতে একাধিক চার্চসহ ব্যস্ততা ঘেরা খ্রিষ্টান পাড়াগুলো ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। জেলায় সব মিলিয়ে প্রায় ২ থেকে ৩শ’ খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী রয়েছেন।
খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীরা বলছেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারো জেলার ৬টি চার্চেই বর্ণিল সাজসজ্জা ও আয়োজন রাখা হয়েছে। শহরের মিশনরোডের চাঁদপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, নতুনবাজারস্থ টেম্পুঘাটে পাওয়ার হাউজের পাশে গুনরাজদী ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ, লক্ষ্মীপুরের বহরিয়ায় ত্রিপুরা ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, দক্ষিণ বালিয়া বাখরপুরে ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, বাগাদির পক্ষিদিয়ায় ত্রিপুরা ব্যাপ্টিস্ট চার্চ এবং ফরিদগঞ্জের সাধু যোসেফ গীর্জায় এদিন সকল পর্যায়ের খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীরা একত্রিত হবেন এবং প্রার্থণাসহ উৎসবে মেতে উঠবেন। উপহার প্রদান, সংগীত, বড়দিনের কার্ড বিনিময়, ধর্মোপাসনা, ভোজ, বড়দিনের বৃক্ষ রোপন, আলোকসজ্জা, মালা, যিশুর জন্মদৃশ্য এবং হলি সমন্বিত বিশেষ সাজসজ্জার প্রদর্শনী গোছাতে তাই সবাই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
অপু ত্রিপুরা ও বিপ্লব চৌধুরী বলেন, মাতা মেরির গর্ভ আলো করে শান্তির বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন প্রভু যিশু খ্রিস্ট। বড়দিনের সেই বার্তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে ধর্ম বর্ণ জাতি নির্বিশেষে সকলে বড়দিনের আনন্দে একি সহমর্মিতায় বসবাস করবে বলে প্রত্যাশা আমাদের। এবারেও গির্জা সাজানো হয়েছে রঙিন বাতি, বেলুন আর ফুল দিয়ে। প্রার্থনা সভা, যিশুর জন্মস্থান, প্রতিকী গোয়ালঘর তৈরি, ক্রিসমাসট্রি, বেলুন আর বাহারি রঙিন কাগজে সাজিয়ে জাঁকজমকভাবে যিশুর জন্মদিন পালনের আবহে প্রস্তুত গির্জাগুলো। প্রতিটি গির্জাতে প্রার্থনা ও কেক কাটার পাশাপাশি বাড়িতে বাড়িতে চলবে অতিথি অ্যাপায়ন।
দুখু চৌধুরী ও রোমিও চৌধুরী বলেন, বড়দিন মানেই আমাদের ত্রাণকর্তা ও মুক্তিদাতা যীশু খ্রিস্টের আগমন। এই আগমনকে কেন্দ্র করে আমরা বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। যাতে আমরা সবার সঙ্গে ভালোবাসা বিনিময় করতে পারি। বড়দিন উপলক্ষ্যে আমরা বেশ কয়েকদিন প্রার্থনারত ছিলাম। আমাদের লক্ষ্য হলো দেশ ও প্রতিবেশির শান্তির জন্য প্রার্থনা করা। ইতিমধ্যেই দোকান গুলি থেকে একাধিক আকর্ষণীয় জিনিসের সম্ভার হতে সান্তা ক্লজের জামা ও টুপি থেকে শুরু করে ক্রিসমাস ট্রি ও ঘর সাজানোর একাধিক উপকরণ কেনা হয়েছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর ব্যাপ্টিষ্ট চার্চের পালক রসি বর্মন বলেন, বছর ঘুরে আনন্দের এ দিনটির জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকি। পরিবার পরিজন বন্ধু বান্ধব পাড়া প্রতিবেশী সবাইকে নিয়ে দিনটি কাটাতে আমরা উচ্ছ্বসিত থাকি। তবে দেশের সার্বিক দিক বিবেচনায় আমরা এবার আয়োজন সংক্ষীপ্ত করেছি। এরমধ্যে চার্চগুলোতে সকাল ৯টায় প্রার্থনা শুরু হয়ে তা সাড়ে ১০টায় শেষ হবে এবং বিকালে ৫টায় ক্রিসমাস পোগ্রাম শুরু করে দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা রেখেছি। সুন্দরভাবে উৎসবের দিনটি কাটাতে সবার ভালোবাসা ও সহমর্মিতা প্রত্যাশা করছি।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মোঃ বাহার মিয়া বলেন, ২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের পুলিশ বাহিনী বিশেষ নজরদারি রাখবে। এরমধ্যে খ্রিষ্টান পাড়া ও তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে নির্বিগ্নে উৎসব পালন করতে তিন স্তরের নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করবে।
এদিকে বড়দিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চাঁদপুর জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, যুব ঐক্য পরিষদ, ছাত্র ঐক্য পরিষদসহ অন্যান্য সংগঠনগুলোও।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জল দৃষ্টান্ত
চাঁদপুরে বড়দিনকে ঘিরে খ্রিষ্টান পাড়া গুলোতে সাজ সাজ রব। বড়দিন উপলক্ষে আইন-শৃংখলা রক্ষার্থে আমাদের পুলিশী নিরাপত্তা সর্বোচ্চ সতর্কতারসহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যিশু খ্রিস্টের প্রদত্ত শান্তি সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক। পৃথিবী হয়ে উঠুক সকল প্রকার অন্যায়মুক্ত ভেদাভেদহীন এক শান্তিময় স্থান। আমার পক্ষ থেকে খ্রিষ্ট ধর্মালম্বীদের সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা। শুভ বড়দিন।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব “শুভ বড়দিন বা হ্যাপি ক্রিসমাস ডে’ চাঁদপুরে যাতে তাদের ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্য ও জাঁকজমকপূর্ণ বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে উদ্যাপিত হতে পারে। সেদিকে খেয়াল রেখে আমরা একাধিক সভাসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রেখেছি। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও জেলায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশ গ্রহণে ধর্মীয় আচার, প্রার্থনা ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হউক। আমার পক্ষ থেকে বড়দিনে রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। শুভ বড়দিন।