শাহরাস্তিতে কোরবানীর পশুর হাট জমে উঠেছে মোঃ রুহুল আমিন : আগামি ২১ জুলাই মুসলিম জাহানের অন্যতম উৎসব ঈদ উল আজহা অনুষ্ঠিত হবে। তবে, এবছর সৌদী আরব সহ আরব দেশ সমূহে ১৯ জুলাই ঈদ উল আজহা উদযাপিত হবে। চাঁদ দেখার তারতন্মের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই উৎসবের দিনটি সাধারণত আগে পিছে হয়ে থাকে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সমাজে এই ঈদ পালনে দেশের মানুষের মধ্যে একটি অন্য রকমের আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। যেহেতু এই উৎসবের অন্যতম একটি পর্ব হচ্ছে সামর্থবান মুসলমানগণ প্রত্যেকে তাদের নামে মহান আল্লাহর সন্তষ্টি লাভের আশায় পশু জবাই করে থাকেন। পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে সামর্থবান মুসলমানগণ নিজের লালন-পালন করা পশু কোরবানী দিয়ে থাকেন। আর যাদের পশু লালন-পালনের সুযোগ নেই তারা বাজার থেকে পশু ক্রয় করে এনে কোরবানী করেন। ইতিমধ্যে ঈদ উল আজহাকে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে অন্য দেশের মুসলমানদের মত প্রত্যেক সামর্থবান বাংলাদেশী মুসলমানগণ নিঝের পালিত পশু কোরবানী দিতে তৈরি হয়েছেন। অপর দিকে যাদের নিজেদের পক্ষে পশু লালন-পালন করা সম্ভব নয় তারা বাজার থেকে পশু ক্রয়ের জন্য এক বাজার থেকে আরেক বাজারে ছুটে চলছেন। বাংলাদেশের মানুষ এখন পশু ক্রয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের হাট-বাজারের ব্যবসায়ীরা এখন পশু ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। বাংলাদেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের একটি হচ্ছে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা। এই উপজেলায় এবছর মোট ২১টি পশুর হাট বসেছে। হাটগুলোতে ব্যবসায়ীরা এখন পশু ক্রষ-বিক্রয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। প্রতি বছর ঈদ উল আজহাকে টার্গেট করে দেশের গ্রাম-গঞ্জের মানুষ পশু লালন-পালন করে থাকেন। এখানেও এমন বহু লোক সারা বছর পশু লালন-পালন করে ঈদ উল আজহা উপলক্ষে কোরবানীর হাটে পশু বিক্রী করে থাকেন। সারা বছর লালন-পালন করা পশু এই ঈদের বাজারে বিক্রী করে তারা যে টাকা বাড়তি আয় করেন তা দিয়ে অনেকে আছেন যাদের পুরো বছরের পারিবারিক ব্যয় মিটিয়ে থাকেন। এবারের শাহরাস্তির পশুর হাটের ব্যাপ্তি পূর্বের বছর গুলোর তুলনা কিছুটা কম। কারণ দীর্ঘ দেড় বছর যাবৎ চলতে থাকা অতিমারী করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব এই উপজেলায় বৃদ্ধি পাওয়ায় মাননীয় সাংসদ মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলামের সার্বিক নির্দেশনায় শাহরাস্তি উপজেলা প্রশাসন জেলা প্রশাসন কর্তৃক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক বেঁধে দেয়া গাইড লাইন মোতাবেক যেখানে সাধারণ মানুষ সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সহজে চলাচল করতে পারে সে জায়গাগুলোতে হাট-বাজার বসার অনুমতি দিয়েছে।ঈদ উল আজহা উপলক্ষ্যে যে ২৩টি পশুর হাট এবার শাহরাস্তি উপজেলায় বসেছে তার বেশির ভাগ ঘুরে দেখা গেছে হাটগুলোতে প্রচুর পরিমানে ভালো সুস্বাস্থের পশু উঠেছে। ক্রেতার চেয়ে পশুর সংখ্যা বেশি। কোন কোন বাজারের ব্যবস্থাপনার দায়িতেব থাকা ব্যক্তিরা মাইকে বার বার ঘোষণা দিচ্ছেন বাজারে পশু ক্রয় করতে আসা মানুষকে করোনা মুক্ত থাকতে মাক্স ব্যবহার করতে হবে। কোন কোন পশুর হাটে মাক্স ছাড়া ব্যক্তিদের বাজারের প্রধান ফটকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। পশু ক্রয় করতে বাজারের আসা সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের অনেকে ঈদের আগের দিন পশু ক্রয় করবে। এখন বাজারে এসে পশু দর-দাম দেখছে। আবার কেউ কেউ দর-দাম ঠিক করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। পরে পশুর মালিকের বাড়ি থেকে নগদ টাকা পরিশোধ করে পশু ক্রয় করবেন।শাহরাস্তি উপজেলার পশুর হাট গুলোর অন্যতম হচ্ছে- শোরশাক, চিতোষী বাজার, দেবকরা, বেরনাইয়া, খিলা, নরিংপুর, উল্লাশ্বর, উনকিলা, কালীয়া পাড়া, কালীবাড়ি অন্যতম।১৮ জুলাই উপজেলার সূচিপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের নরিংপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায় এখানে প্রচুর পরিমানে গরু ও ছাগল বিক্রীর জন্য বিক্রেতাগন গরু-ছাগল নিয়ে হাটে অপেক্ষা করছেন। এই বাজারে গরু বিক্রী করতে আসা ব্যবসায়ী মোঃ এবাদুর হক বিগত দশ বছর যাবৎ সিজনে গরুর ব্যবসা করেন। দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। তিনি জানান, তার খামারে ১৩টি বিভিন্ন জাতের গরু আছে। তন্মেধ্যে তিনি এবছর ৬টি গরু বিক্রি করবেন। তার খামারে এই ৬টি গরু ছাড়াও আরো ৭টি গরু আছে। খামারে থাকা বাকী গরুগুলির মধ্যে দুইটি গাভী থেকে দৈনিক ১৩ লিটার দুধ পান তিনি। নিজের প্রয়োজনীয় দুধ রেখে বাকীটা স্থানীয় বাজারে বিক্রী করে দেন। এছাড়া স্থানীয় আয়নাতলী বাজারে তার গ্যাস ও কাঁচা তরি-তরকারির ব্যবসা রয়েছে। জানতে চাইলাম গরু ব্যবসায় কেমন ব্যবসা হয়? জবাবে বললেন, ভালো, খুব ভালো। তিনি আশা করেন, তার ছয়টি গরুর মধ্যে তিনি বড় ২টি গরু ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বিক্রী করবেন। এই দামে বিক্রী হলে তিনি হাটে আনা গরু দুইটি বাবদ ৭০ হাজার টাকা লাভ করবেন। সবগুলো গরু বিক্রী হলে তিনি সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ব্যবসা হবে এবার। হাসতে হাসতে ব্যবসায়ী ও চাষী এবাদুল হকের তিন ছেলে। বড় ছেলে রাকিব হাসান একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইনে লেখা-পড়া করে, মেঝো ছেলে লেখা-পড়া করেন না তার ব্যবসার কাজে সময় দেয় আর ছোট ছেলে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্র।