হাইমচরে চারালয় রয়েছে মাত্র ১টি;হুমকিতে সবুজায়ন! মতিউর রহমান সানজিদঃ চাঁদপুরের হাইমচরে উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের সরকারি ১টি মাত্র চারালয়কে ঘিরেই সবুজায়নের কার্যক্রম চলছে। গেলো ৪/৫ বছরে অদৃশ্য কারনে রেজিষ্ট্রেশনকৃত সকল চারালয়গুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আর্থিক মন্দা, সঠিক পরামর্শের অভাব ও জায়গা সংকুলতার কারনে চারালয় ব্যবসায়ীরা এ ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে হাইমচরে চারালয় ব্যবসায় আগ্রহী যে কাউকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে বলে জানানো হচ্ছে।হাইমচরের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান নির্বাহী পরিচালক রেহানা আক্তার ‘হিলশা নিউজ’-কে বলেন, ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী ১৩৪.১৬ বর্গ কিলোমিটারের হাইমচরে ৭৪.১৬ বর্গকিলোমিটার ভূমি রয়েছে এবং ৬০.০০ বর্গকিলোমিটার নদী। আর এ অবস্থান ঘিরেই ৫২ হাজার ৬৫১ জন পুরুষ এবং ৫৫ হাজার ৯২৪ জন মহিলাসহ মোট ১ লক্ষ ৯ হাজার ৫’শ ৭৫ জন লোক বসবাস করছে। এরমধ্যে ১ লক্ষ ৪ হাজার ৯২৪ জন মুসলমান, ৪ হাজার ৬৭১জন হিন্দু,১৫ জন খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধ বাদে অন্যান্য গোত্রের ২৭ জন রয়েছে।অনুসন্ধানে জানা যায়, নদীভাংতী এই হাইমচরাঞ্চলে এক সময়ে অনেকেই প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঠেকাতে বৃক্ষের গুরুত্বতা উপলদ্ধি করে চারালয় বা নার্সারি পেশাকে বেছে নিয়েছিলেন। এরপর ১৯৯২ সালে আনুমানিক ১৫ শতাংশ জায়গা জুড়ে হাইমচর কৃষি বিভাগের আওতায় ১টি চারালয় গড়ে উঠে।এর সহযোগিতায় দঃ আলগী গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে জয়নাল আবেদীন গড়ে তোলেন তাজুল চারালয়। যা ২০১৭ সালের পর মুখ থুবরে পরে।কথা হলে জয়নাল আবেদীন ‘হিলশা নিউজ‘-কে জানান, আমার পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা না থকার কারনে চারালয় ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি। তবে এই ব্যবসা যে কেউ চাইলে করতে পারে। কেননা এটাতে লোকসান নাই।এদিকে জয়নাল আবেদীনের সাথে সাথে নয়ানী লক্ষীপুর গ্রামের মৃত আঃ কুদ্দুস রাড়ীর ছেলে বদিউজ্জামান রাড়ীর তৈরি করা রাড়ী নর্সারি, একই এলাকার ইদ্রিস রাড়ীর ছেলে আবুল বাশারের তৈরি করা কৃষি নার্সারি, লামচরী গ্রামের মৃত আলী আখনের ছেলে আব্দুল লতিফ আখনের তৈরি কৃত আখন নার্সারি, পূর্ব চরকৃষ্ণপুরের মৃত চান বক্স সিকদারের ছেলে মোঃ বাবুল সিকদারের তৈরিকৃত সবুজ নার্সারি ২০১৭ সালে বন্ধ হয়ে গেছে।বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আশিক খান ‘হিলশা নিউজ‘-কে বলেন, নানা ধরনের গাছগাছড়ার চারা উৎপাদন, বিতরণ বা বিক্রয়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত বিশেষ কেন্দ্রকেই চারালয় বা বনজ নার্সারি বলা হয়ে থাকে। গাছপালা প্রেমী যেকোন ব্যাক্তি নিজের কর্মসংস্থানের জন্য নার্সারি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। সকলের দৃষ্টিগোচর হয় এমন উন্মুক্ত উঁচু পরিবেশে স্বল্প পুঁজিতেই নার্সারি করা যেতে পারে। হাইমচরে সবুজায়নের বৃদ্ধিতে আরো বেশি বেশি করে চারা রোপন ও উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে চারালয় ব্যবসায় তরুন বেকারদের এগিয়ে আসা এখন সময়ের দাবী! এদিকে প্রায় ৩০ বছর যাবৎ মোঃ সোলাইমান হাইমচরের উপজেলা চারালয় বা নার্সারিতে কাজ করছেন। তার স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ১ মেয়ের ভরন পোষণসহ সংসার খরছ এই নার্সারির থেকে প্রাপ্ত পারিশ্রমিক দিয়েই তিনি অনায়াসে চালাচ্ছেন। কোন রকমের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই ১৯৯২ সাল থেকে তিনি এখানে এই পেশায় কাজ শুরু করেন।১৯শে আগস্ট বৃহস্পতিবার সফল এই ব্যাক্তি সোলাইমান ‘হিলশা নিউজ’-কে বলেন, তার এই চারালয়ে আমলকী, অর্তকি, অর্জুনের মতো ঔষুধ গাছ, মেহগনি, আকাশ মনির মতো বনগাছ এবং লেবু, কদবেল, তেঁতুল, পেয়ারা, চালতা, কাঁঠাল, জাম, ডালিম, জলপাইয়ের মতো ফলগাছসহ প্রায় ১১ হাজার চারাগাছ রয়েছে। যা সরকারি কর্মসূচীতে বরাদ্দ দেয়া, বিনামূল্যে বিতরণ এবং সাধারণ লোকজনের কাছেও বিক্রি করে সাবলম্বি হয়েছি।হাইমচরের কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী উদ্ভীদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ভজন হরি মজুমদার ‘হিলশা নিউজ‘-কে বলেন, অক্সিজেন বৃদ্ধি এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ রোপনের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এই উপজেলায় ১টি মাত্র নার্সারি। তাই পুরো উপজেলায় বৃক্ষের যোগান দিতে আমরা তরুন বেকারদের নার্সারি করতে উদ্বুদ্ধ করছি। যে কেউ নার্সারি করতে আগ্রহী হলে পসপোর্ট সইজের সদ্যতোলা ২ কপি ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট নিয়ে জেলা কৃষি অফিসার বরাবর আবেদন করলেই আমরা তার নার্সারিটি রেজিষ্ট্রেশন করার ব্যবস্থা করে দিবো।হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার ‘হিলশা নিউজ‘-কে বলেন, হাইমচরে বর্তমানে রেজিষ্ট্রেশন করা নার্সারিই নেই। তাই প্রকৃতি রক্ষার স্বার্থে হাইমচরে নার্সারি করে সফল হতে আগ্রহী যে কাউকেই আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।