মনির হোসেন খানঃ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুজ্বল রাখতে চাঁদপুরে লেকের উপরে ১৯৮৯ সালে তৈরি করা হয়েছিলো অঙ্গিকার নামক স্মৃতি স্তম্ভটি। পরবর্তিতে এই স্মৃতি স্তম্ভটি চাঁদপুর জেলা ও শহর বাসির কাছে প্রিয় ও দর্শনীয় স্হান হিসেবে গন্য হয়ে উঠে। এই অঙ্গিকার ভাস্কর্যটি ছিলো জেলা ও শহর বাসির জন্য প্রথম তিলোত্তমা।
এই স্মৃতি স্তম্ভটির নিঁখুত কারুকাজ দেখতে তখন প্রায় প্রতিদনই দর্শনার্থীরা ভিড় জমাতো এখানে। অনেকে অঙ্গিকারের পাদদেশে দাড়িয়ে একা বা পরিবার সমেত নিজেদের ক্যামেরাবন্দি করতো। এতো যুগ পরেও সে ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত আছে। এখনও সাধারনের কাছে অঙ্গিকার স্মৃতি স্তম্ভটি একটি দর্শনীয় জায়গা হিসেবে পছন্দনীয়। বিকেল হতে রাত অবধি অনেক মানুষই এখানে বসে হেঁটে ঘুরে সময় কাঁটানন।
তবে পার্থক্য শুধু এই যে আগে মানুষ স্টিল ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলতো এখন ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে অথবা অতি আধুনিক মোবাইল সেটের ক্যামেরা দিয়ে বন্ধু বান্ধবদের ছবি বা নিজের সেলফি তুলছে। অঙ্গিকারের আশ পাশের এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছেও এই অঙ্গিকার স্মৃতি স্তম্ভটি একটি পছন্দের জায়গা। বিদ্যালয় গুলো ছুটির পর বা বিদ্যালয়ের মধ্যাহ্ন বিরতির সময়ও অনেক শিক্ষার্থীদের অঙ্গিকারের পাদদেশে বসে থেকে সময় কাঁটাতে দেখা যায়। অঙ্গিকারের পাশেই অবস্হিত চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী হাসান আলী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।
এই বিদ্যালয়ের অনেক কোমলমতী শিক্ষার্থীকেই তার শ্রেনীর মধ্যাহ্ন বিরতিতে বা ছুটির শেষে অঙ্গিকার স্মৃতি স্তম্ভটিতে ঘুরতে বসতে দেখা যায়। আবার অনেক কোমলমতী বাচ্চাদেরকে অঙ্গিকারের চারপাশের রেলিং ধরে রেলিংয়ের ফাঁকের ভেতর দিয়ে পানির উপর ঝুলতে দেখা যায়। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন ও বিপদ জনক।
এভাবে পানির উপর ঝুলবার সময় যদি হাত ফসকে পানিতে পড়ে যায়, তবে তার প্রান সংশয়ের ঝুঁকি থাকবে শতভাগ। কারন শহরের ৭/৮ বছরের অধিকাংশ কোমলমতি বাচ্চাদেরই সাঁতার জানা থাকেনা। ফলে তারা যখন এভাবে রেলিংয়ের ফাঁক গলিয়ে পানির উপর দোল খায় তখন তা নিঃসন্দেহে ঝুঁকিপূর্ন। আচমকা হাত ফসকে পানিতে পড়ে গেলে ঘটে যেতে পারে প্রানঘাতী কোন দুর্ঘটনা। অতিতে এমন ঘটনাও ঘটেছে যে, সহপাঠিকে পানিতে ডুবতে দেখে তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে দুই সহপাঠীর পানিতে ডুবে একসাথে মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে হাসান আলী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিবাবক বিথী আক্তার বলেন, আমরা অভিবাবকরা সকালে সন্তানদের বিদ্যালয়ে দিয়ে যাই, আবার ছুটির সময় এসে নিয়ে যাই। মাঝে বিদ্যালয়ের মধ্যাহ্ন বিরতির সময় আমাদের সন্তানদের দেখভালের দায়ীত্বটুকু থাকে বিদ্যালয়ের উপর। ওনাদের অসচেতনতায় যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে, তবে তা হবে নিন্দনীয়। অভিবাবক মাহাবুব বলেন মধ্যাহ্ন বিরতিতে বাচ্চারা যাতে এমন ব্যস্ত সড়ক পেরিয়ে অঙ্গিকার স্মৃতি স্তম্ভতে ঢুকতে না পারেন সে বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ আরো সজাগ দৃষ্টি দেবেন।
অভিভাবক জুলফু বলেন,বিদ্যালয়ের মধ্যাহ্ন বিরতিতে অনেক বাচ্চারাই মাঠে খেলাধুলা না করে ব্যস্ত সড়ক পেরিয়ে অঙ্গিকারে ঢুকে পড়ে সেখানে হৈ হুল্লোর করে, রেলিংয়ের ফাঁকে পানির উপর দোল খায়। এতে করে যে কোন সময় যে কোন দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন তিনি।
এ বিষয়ে তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষন করছেন। অভিবাবক সাইফুল বলেন এ বিষয়ে আমাদের অভিবাবকদেরও সচেতন হবার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। আমাদের সকলেরই মনে রাখা উচিৎ যে, লেকের পানিতে কিন্তু ডলফিন নেই। দুর্ঘটনা ঘটবার পরই সকলের টনক নড়ে। তার আগে নয়।