চাঁদপুরে সরষের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার মেট্রিক টন অমরেশ দত্ত জয়ঃ দেশের অন্যতম নদীবেষ্টিত কৃষিপ্রধান অঞ্চল চাঁদপুর। পদ্মা, মেঘনা, ধনাগোদা ও ডাকাতিয়া নদী জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওযায় নদী অববাহিকায় ব্যাপক ফসল উৎপাদনের প্রচলন রয়েছে এ অঞ্চলে। নদীর তীরসংলগ্ন এলাকাগুলোয় ব্যাপকহারে সরষে চাষাবাদ হয়। বিশেষ করে চাঁদপুরের চরাঞ্চলগুলোয় ব্যাপক সরষে চাষ করেন চাষিরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মাঠ ছেয়ে গেছে সরষের হলুদ ফুলে। তবে নদীতীরবর্তী হওয়ায় চরাঞ্চলের চাষিরা ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এবার সরষে চাষের জন্য আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। পাশাপাশি পরিবহনে সুবিধা, কৃষকদের সরষে চাষে আগ্রহ, কৃষি বিভাগের প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা এবং বীজ, সার ও কীটনাশক সময়মতো পাওয়ায় ভালো ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ পেতে ভোগান্তি পোহানোয় চাষিরা শঙ্কার মধ্যেও রয়েছেন।জানা গেছে, চাঁদপুরের মেঘনার পশ্চিম তীরে রয়েছে ১১টি বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল। এসব চরে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপন্ন করেন চাষিরা। আগে থেকেই চাঁদপুর অঞ্চলে ধান, পাট, আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও ভুট্টা চাষের প্রচলন রয়েছে। এছাড়া বিপুল পরিমাণ জমিতে সরষেরও চাষাবাদ করেন কৃষকরা। এ বছর চাঁদপুরে চার হাজার ৬০০ মেট্রিক টন সরষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।সংশ্লিষ্টরা জানান, চরাঞ্চলের মধ্যে মতলবের চরইলিয়ট, চরকাসিম, সবজিকান্দি, জহিরাবাদ, ষষ্টখন্ড বোরোচর, চাঁদপুর সদরের রাজরাজেস্বর, জাহাজমারা, লগ্নিমারা, বাঁশগাড়ি, চিড়ারচর, ফতেজংপুর, হাইমচরের ঈশানবালা, চরগাজীপুর, মনিপুর, মধ্যচর, মাঝিরবাজার, সাহেববাজার ও বাবুরচরে ব্যাপকহারে সরষে আবাদ করা হয়েছে। এসব অঞ্চলের জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে নয়নাভিরাম সরষের হলুদ ফুল।১২ই এপ্রিল সোমবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলার সূত্রমতে, চাঁদপুর সদরে এবার সরষে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ২৪৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩৮ মেট্রিক টন। এছাড়া মতলব উত্তরে চাষাবাদ হয়েছে এক হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার ৫৩৯ মেট্রিক টন। মতলব দক্ষিণে চাষাবাদ হয়েছে ৭৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৩৫ মেট্রিক টন। হাজীগঞ্জে চাষ হয়েছে ৪৮৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬৭০ মেট্রিক টন।এদিকে শাহরাস্তিতে সরষে চাষাবাদ হয়েছে ২২৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৩১ মেট্রিক টন। কচুয়ায় চাষ হয়েছে ২২৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১০ মেট্রিক টন। ফরিদগঞ্জে চাষ হয়েছে ১৮৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫৫ মেট্রিক টন। এছাড়া হাইমচরে সরষে চাষাবাদ হয়েছে ৯০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৪ মেট্রিক টন।তবে এসব ফসল চাষাবাদের খরচ মেটাতে কৃষিঋণ পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চরঞ্চলের কৃষকরা। তবে জেলার চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও কৃষি ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৫৪ লাখ টাকা শুধু ডাল, তেল, মসলা ও ভুট্টা চাষাবাদে ঋণ হিসেবে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।এ ব্যপারে চাঁদপুরের কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন, কৃষকদের মাঝে আমরা যথাসময়ে সার ও বীজ দিতে পারেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তাই আমরা আশা করছি তাদের কাঙ্খিত ফলন তারা এবছর পাবে। আমরা সার্বক্ষণিক তাদের কে চাষাবাদে সব রকমের কৃষি সম্পর্কিত তথ্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি।