শাহরাস্তিতে তুচ্ছ ঘটনায় আহত-১; ১৩ জন'কে বিবাদী করে পাল্টাপাল্টি মামলা হাসানুজ্জামানঃ চাঁদপুুরের শাহরাস্তিতে সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছে। এ ঘটনায় ১৩ জনকে বিবাদী করে পক্ষে-বিপক্ষে দুটি মামলা দায়ের করেছে উভয় পক্ষ।ঘটনাটি গত ১৪ মে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের বলশীদ পাটোয়ারী বাড়িতে ঘটে।জানা যায়, ঘটনার দিন পবিত্র ঈদুল ফিতর ছিলো। ওই বাড়ির নেয়ামত উল্লাহ্ ওরফে সেলিমের ছেলে আবদুল হাই (১৪) একই বাড়ির ইব্রাহিমের ছেলে রায়হান (৮) , মিন্টু পাটোয়ারীর ছেলে জিহাদ (১১) ও মন্টু পাটোয়ারীর ছেলে রিপন (১২) কে নিয়ে ঘুরতে চাঁদপুর চলে যায়। এরই মধ্যে দুপুর গড়িয়ে গেলে শিশুদের বাবা-মা তাদের খুঁজতে শুরু করে। কোথাও না পেয়ে তারা মাইকিং করারপ্রস্তুতি নিচ্ছিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে ওই চার শিশুকে নিজ বাড়িতে দেখতে পায় তারা। কোথায় গিয়েছিলে? এমন প্রশ্ন করলে তারা জানায়, আবদুল হাই আমাদেরকে চাঁদপুরে নিয়ে গেছে। শিশুদের মধ্যে আবদুল হাই সবার বড় হওয়ার কারনে কেন নিয়ে গেছো জিজ্ঞাসা করে একই বাড়ির মৃত জসিম পাটোয়ারীর ছেলে রাকিবুল হাসান শান্ত (২৬)। এই জিজ্ঞাসাবাদকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের অতর্কিত হামলায় গুরুতর আহত হয় সে।এবিষয়ে শান্ত’র চাচা গিয়াস উদ্দীন পাটোয়ারী (৩৯) বাদী হয়ে ৬ জনকে বিবাদী করে শাহরাস্তি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পক্ষান্তরে আবদুল হাই’র মা ছকিনা খাতুন (৪৩) বাদী হয়ে ৭ জনকে বিবাদী করে বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা রুজু করেন।থানায় মামলার বাদী গিয়াসউদ্দীন বলেন, ঘটনার দিন বিকেলে আমার ভাতিজা শান্ত সেলিমের ছেলে আবদুল হাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে শান্তকে ইট তুলে ছুঁড়ে মারে। এঘটনায় শান্ত রাগান্বিত হয়ে আবদুল হাইকে থাপ্পর লাগিয়ে দেয়। এই থাপ্পরের বিষয়টি আবদুল হাই তার মা ছকিনা খাতুনকে অবহিত করে। এতে ছকিনা খাতুন ক্ষিপ্ত হয়ে তার স্বামী সেলিম ও ৭ সন্তানকে জানায় এবং প্রতিশোধ নিতে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় স্থানিয় বাজারে উপস্থিত হয়। এসময় বিষয়টি সেলিমকে বুঝানোর চেষ্টা করে শান্ত। এরই মধ্যে ছকিনা খাতুন ও তার ৭ সন্তান অতর্কিত ভাবে শান্তর উপরে হামলা চালায়। এতে তার মাথা ফেটে ও ঠোঁট কেটে যায় এবং বাঁ পায়ের গোড়ালীর হাঁড় ভেঙ্গে দেয়। এছাড়া তার সারা শরীরে বেদম প্রহারের চিহৃ রয়েছে। এহেন বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ ও উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে তিনি মামলা দায়ের করেন বলে তিনি জানান।এব্যাপারে আদালতে দায়েরকৃত মামলার বাদী ছকিনা খাতুনের স্বাক্ষাতের জন্য তার নিজ বাড়িতে গেলে তার ঘরে তালা মারা দেখতে পাওয়া যায়। আশপাশের লোকজনকে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, ঘটনার পরই তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে।ওই বাড়ির মন্টু পাটোয়ারীর স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৪০) বলেন, সেলিমের ছেলে আবদুল হাই আমার পুত্র রিপনকে নিয়ে চাঁদপুরে চলে যাওয়ায় আমরা চিন্তিত হয়ে পড়ি। আল্ হামদুলিল্লাহ্ ছেলে ফিরে এসেছে। কিন্তু জিজ্ঞেসাবাদ কোন অপরাধ নয়। সেলিম পরিবার যে ঘটনা ঘটিয়েছি তা অত্যন্ত নেক্কারজনক। এমন ঘটনায় তাদের কঠোর শাস্তির দাবী জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ১৪ মে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাজারে তারা ঘটনা ঘটিয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়। পরের দিন বাড়িতে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। ছকিনা আদালতে যে মামলা করেছে তা বানোয়াট ও মিথ্যা।একই বাড়ির মৃত সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে ওছমান পাটোয়ারী (৫৫) বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িতে সেলিমের পরিবারটি অত্যন্ত খারাপ একটি পরিবার।মানুষকে সন্মান করতে জানেনা। তার পুরো পরিবার একটি সন্ত্রাসী পরিবারে পরিনত হয়েছে। তাদের অত্যাচারে এই বাড়ি থেকে অনেকেই দূরে সরে গেছে। সেলিম তার ছেলেদের সন্ত্রাস বানিয়েছে। এই সন্ত্রাসদের কাছে কেউ নিরাপদ নয়। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে ভবিষ্যতে আরও হানাহানি হওয়া আশংকা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।ওই বাড়ির মিজানুর রহমানের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৪৫) বলেন, এতো খারাপ মানুষ কি করে হয় তা জানা নেই। পিতা মাতা কি ভাবে ছেলেদের সন্ত্রাসী বানায়, খারাপ কাজে উৎসায়িত করে, মুরব্বীদের সাথে বাজে আচরণ শেখায় জানা নেই। এই খারাপ পরিবারটিকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি ব্যবস্থা করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও জানান, ছকিনা খাতুন আদালতে যে মামলা দায়ের করেছেন, তা উদ্যেশ্য প্রণোদিত। শান্ত পরিবারকে ঘায়েল করার জন্য একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। সেলিম এবং তার স্ত্রী ছকিনা দু’জনেই প্রসিদ্ধ মামলাবাজ হিসেবে এলাকায় বেশ পরিচিত। তিনি এই মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ জানান এবং সংশ্লিষ্ট প্রসাশনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।স্থানিয় বাজার ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন পাটোয়ারী (৫০) বলেন, ঘটনাটি বলশীদ বাজারে আমার দোকানের সামনে ঘটেছে। শান্ত হোন্ডা নিয়ে এসে তার চাচা সেলিমের সাথে কথা বলছিলো। এমন সময় তার স্ত্রী ছকিনা খাতুন ও ছেলে-মেয়েরা অন্ধকারে পিছন থেকে হঠাৎ হামলা করে। টর্চ লাইট দিয়ে শান্তর মাথায় আঘাত করলে সে হোন্ডা থেকে মাটিতে পড়ে যায়। এসময় তার পরিবারের ৯/১০ জন মিলে শান্তকে ইট দিয়ে উপর্যুপরি আঘাতে করে তার দেহটাকে ক্ষত-বিক্ষত করে। শান্তকে রক্ষা করতে এসে অনেকেই তাদের দেয়া আঘাতের শিকার হয়েছে। শান্তর জীবনটা শেষ করে দিয়েছে ওরা। মানুষ-মানুষকে এভাবে মারে না। ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে শাহরাস্তি সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যায় তার আত্মীয় স্বজন। তিনি এমন বর্বরোচিত হামলা প্রতিবাদসহ ঘটনাকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানান।প্রতিবেশি আলী আশ্রাফের পুত্র বিল্লাল হোসেন (৪৫) বলেন, সেলিম ও পরিবারের সদস্যরা এখন পর্যন্ত একালায় বহু ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদেরকে সামাজিক ভাবে বয়কট করাসহ এই ঘটনার আলোকে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।এলাকাবাসী বলেন, সেলিম ও তার পরিবার প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর কত? এবার তাদেরকে প্রতিহত করার সময় এসেছে। তারা সামাজিক আইন ভঙ্গ করেছে। কাউকে তোয়াক্কা না করে যে যেমন ইচ্ছে তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে মামলা, হানাহানি, মারামারি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, শান-সৌখিনে চলা- কি ভাবে সম্ভব? সেলিম এমন কি ব্যবসা করে? কি বা কোথায় তার এই টাকার উৎস? মাদক নাকি অন্য কোন পথ? এমন প্রশ্নগুলো এলাকাবাসীর মুখে মুখে। তারাও এর প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট প্রসাশনের দ্রুত দৃষ্টি কামনা করেন।